সাত সকালেই ফোনটা এসেছিল। গৃহকর্ত্রী জুবেদা বেগম ধরেছিলেন। ও পাশের গলায় উদ্বেগ, ‘ঘরে এক টুকরো খাবার নেই।’ তার পরেই বড় ব্যাগে খাবারদাবার নিয়ে স্বামীর সঙ্গে বেরিয়ে পড়েন জুবেদা। কার্ফুর মধ্যেই বেশ কয়েক কিলোমিটার হেঁটে ওই মুসলিম দম্পতি পৌঁছন ঝিলম নদীর তীরে সেই হিন্দু পণ্ডিত পরিবারের কাছে। যেখান থেকে সকালের ফোনটা গিয়েছিল জুবেদার কাছে।
উত্তাল কাশ্মীর। খাস রাজধানী শ্রীনগরেও গত কয়েক দিন ধরে দোকানপাট, বাজারহাট বন্ধ। রাস্তাঘাট শুনশান। প্রায় কোনও গাড়িই চলছে না। উপত্যকার অধিকাংশ জায়গাতেই জারি রয়েছে কার্ফু। সাধারণ মানুষের জীবনযাপন অচল হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উপত্যকার বেশির ভাগ পরিবারেই খাবারের সঙ্কট। ঠিক যেমনটা হয়েছিল জওহরনগরের ওই কাশ্মীরি পণ্ডিত দেওয়ানচাঁদের পরিবারে।
আরও পড়ুন: কাশ্মীর নিয়ে নওয়াজও সরব, সুর চড়াল ভারত
জুবেদা এবং দেওয়ানচাঁদের স্ত্রী স্থানীয় একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। সেই সূত্রেই জুবেদাকে ফোন করেন তাঁর সহকর্মী। বাড়িতে বড়দের পাশাপাশি শিশু-সহ অসুস্থ ঠাকুমাও রয়েছেন। অথচ খাবার নেই! শুনে আর ঠিক থাকতে পারেননি। বাড়িতে যা যা খাবার ছিল তার বেশির ভাগটাই ব্যাগে ভরে নেন। তার পর কার্ফু কবলিত রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন স্বামীকে নিয়ে। রাস্তায় কোনও যানবাহন নেই। তাই হেঁটেই রওনা দেন দম্পতি। স্বামীর হাতে খাবারের ব্যাগ, আর জুবেদার চোখ রাস্তায় টহলদারি সেনা-ভ্যানের দিকে।
শুনশান রাস্তা পেরিয়ে কয়েক কিলোমিটার দূরে ওই পরিবারের কাছে খাবার পৌঁছনোটা সহজ ছিল না মোটেও। ইন্ডিয়া টুডে-কে জুবেদা বলেন, ‘‘কঠিন ছিল। তবু আমরা চেষ্টা করেছিলাম। পেরেওছি।’’ দুর্দিনে এ ভাবে বন্ধুর পাশে দাঁড়াতে পেরে খুশি তাঁরা। উত্তাল এই সময়ে মানুষজন যখন বাইরে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন, তখন জুবেদাদের এমন ভূমিকায় খুশি দেওয়ানচাঁদের পরিবারও। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে সকলেই আমাদের মতো ভুক্তভোগী। আমরা ভীষণ খুশি, ওঁরা এ ভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বলে! একেই বলে মানবিকতা।’’