রাজাজি হলে সাধারণ মানুষের ভিড়।
প্রয়াত করুণানিধির শেষ যাত্রায় লাখো মানুষের ভিড়। বিকেল চারটে নাগাদ রাজাজি হল থেকে প্রয়াত নেতার মরদেহ বার করা হয়। জাতীয় পতাকায় মোড়া নেতার দেহ রওনা দেয় মেরিনা সৈকতের আন্না স্কোয়ারের দিকে। সেখানেই শায়িত রাখা হবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর নশ্বর দেহ। রাজাজি হলে সকাল থেকেই ছিল অনুগামী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের ভিড়। শেষ যাত্রা শুরু হতেই রাস্তায় মানুষের ঢল নামে। রাজাজি হল থেকে মেরিনা বিচ পর্যন্ত তিন কিলোমিটার যাত্রাপথে রয়েছে কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত।
তার আগে রাজাজি হলে শ্রদ্ধা জানাতে আসা সাধারণ মানুষের ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় দু’জনের। আহত হন আরও অন্তত ৩০ জন। পুলিশকে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়। কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা একটি নির্দিষ্ট পথ দিয়ে ভিতরে ঢোকাচ্ছিলেন আগত মানুষজনকে। কিন্তু বাইরের দিকে ভিড় এতটাই বেড়ে যায়, যে পুলিশের সেই ব্যারিকেড ভেঙে যায়। ওই ভবনের দেওয়াল বেয়ে উপরে দেখা যায় অনেককে। সবাই হলের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করতেই শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। তখনই পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। যদিও কিছুক্ষণের মধ্যেই লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
হাইকোর্টের রায়ে মেরিনা বিচেই শেষকৃত্যের অনুমতি পেয়েছে ডিএমকে। হাইকোর্টে জয় পেতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন করুণানিধি-পুত্র এম কে স্ট্যালিন। রাজাজি হলে মাদ্রাজ হাইকোর্টের রায়ের খবর পৌঁছতেই কান্নায় মুখ ঢাকেন তিনি। তাঁকে জড়িয়ে ধরে স্বান্তনা দেন ডিএমকে নেতা এ রাজা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজাজি হলে গিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। কানিমোঝি, স্ট্যালিন-সহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি।
এদিন সকালেই মেরিনা বিচে করুণানিধির শেষকৃত্যের অনুমতি দেয় মাদ্রাজ হাইকোর্ট। নজিরবিহীনভাবে মধ্যরাতে শুনানি শুরু হলেও তা শেষ হয়নি। অবশেষে বুধবার সকালে আদালত জানিয়ে দেয়, মেরিনা সৈকতে আন্না মেমোরিয়ালেই করুণানিধিকে সমাধিস্থ করা যাবে। আদালতের রায়ে স্বাভাবিক ভাবেই মুখ পুড়েছে তামিলনাড়ুর এআইএডিএমকে সরকারের। সকাল থেকেই রাজাজি হলে শায়িত রাখা হয়েছিল তামিলনাড়ুর পাঁচ বারের মুখ্যমন্ত্রীর দেহ। সেখানেই শেষ শ্রদ্ধা জানান রাজনীতি, সিনেমা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টরা। মঙ্গলবারই চেন্নাই পৌঁছে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রয়াত ডিএমকে প্রধানের মৃত্যুতে বুধবার সংসদে শোক প্রস্তাবের পর দিনের মতো মুলতুবি হয়ে যায় সংসদের উভয় কক্ষের অধিবেশন।
আরও পড়ুন: চেন্নাইয়ে বসেই নির্ধারক শক্তি করুণানিধি
তামিলনাড়ুর পাঁচ বারের মুখ্যমন্ত্রী করুণানিধির মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের সদস্যরা চেয়েছিলেন, মেরিনা সৈকতে আন্না মেমোরিয়াল অর্থাৎ প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সি এন আন্নাদুরাইয়ের সমাধির কাছেই অন্তিম শয্যায় শায়িত রাখা হোক করুণানিধিকে। কিন্তু এআইএডিএমকে সরকার সেই অনুমতি দিতে রাজি হয়নি। সরকারের যুক্তি ছিল, যে দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সমাধি রয়েছে মেরিনা বিচে, তাঁরা পদে থাকাকালীন মারা গিয়েছিলেন। তাছাড়া ওই এলাকায় সমাধিস্থল তৈরি বন্ধের দাবি নিয়ে একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন। এরপরই মাদ্রাজ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ডিএমকে।
আরও পডু়ন: ‘আপনাদের জেলে পোরা উচিত’, হাজেলা-শৈলেশকে ভর্ৎসনা বিচারপতির
মধ্যরাতে সেই মামলার শুনানি শুরু হয় মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হুলুভেলি জি রমেশের বাসভবনে। কিন্তু রাতে শুনানি শেষ হয়নি। বুধবার সকাল আটটা থেকে ফের শুনানি শুরু হয়। সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয়, গাঁধী মণ্ডপমে দু’একর জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে করুণানিধির সমাধিস্থলের জন্য। শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালত জানিয়ে দেয়, মেরিনা সৈকতে করুণানিধিকে সমাধিস্থ করা যাবে। নৈতিক জয় পেয়ে এবার অন্তিম সমাধির প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ডিএমকে।
দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা বাংলা খবর পেতে পড়ুন আমাদের দেশ বিভাগ।