Mamata Banerjee

রামমন্দিরের উদ্বোধনে কি যাবেন? যাওয়া, না-যাওয়ার আবহে মমতার অবস্থান নিয়ে তুমুল আগ্রহ দিল্লিতে

তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। নির্বাচনের আগে বিজেপি নেতৃত্ব ধর্মকে নিয়ে যে ভাবে রাজনীতি করছেন তা সমর্থনযোগ্য নয়।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:৩৪
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

বাম নেতারা স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছেন, ২২ জানুয়ারি রাম মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁরা যাবেন না। আমন্ত্রণ পেলেও সনিয়া গান্ধী যাবেন কি না, তা এখনও খোলসা করছে না কংগ্রেস, কিন্তু ইঙ্গিত দিয়েছে, সনিয়া শেষ পর্যন্ত না গেলেও দলের কোনও নেতা সেখানে যাবেন। অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়ার কথা বলেছেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ কপিল সিব্বলও। এই যাওয়া-না-যাওয়ার আবহে তৃণমূল নেত্রীর অবস্থান নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে রাজধানীতে।

Advertisement

জানা গিয়েছে, শেষ মুহূর্তে কোনও পরিবর্তন না হলে, আগামী মাসের ২২ তারিখ রাম মন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখতে না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। নিজস্ব বৃত্তে অন্তত আজ এই ইঙ্গিত তিনি দিয়েছেন বলে মমতার ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি। তবে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছেছে কি না, তা নিয়েও প্রকাশ্যে কিছু বলতেই রাজি নন তৃণমূল নেতা-নেত্রীরা।

তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। নির্বাচনের আগে বিজেপি নেতৃত্ব ধর্মকে নিয়ে যে ভাবে রাজনীতি করছেন তা সমর্থনযোগ্য নয়। রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, ভোটের আগে রাম মন্দিরের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া নিয়ে সমস্ত রাজনৈতিক দলই রাজনীতির অঙ্ক কষছে, নিজেদের মতো করে। যেমন পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক তৃণমূলের রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে পড়ে। তাকে অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া, বিরোধী রাজনীতির বিশ্বাসযোগ্যতা যাতে চিড় না খায়, তা দেখার দায়বদ্ধতাও রয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের।

Advertisement

এ দিকে, পশ্চিমবঙ্গে বামেরা বারবার নিশানা করছেন মমতাকে, মোদীর সঙ্গে ‘সেটিং’ তত্ত্বের অভিযোগ তুলে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও ‘দিদি-মোদী’ গোপন বোঝাপড়ার অভিযোগ কিছু কম করেননি। ফলে সনিয়া গান্ধী নিজে যদি অযোধ্যা না যান, বামেরাও বয়কট করেন, সে ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেখানে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পূজার্চনা দেখার ঘটনা ঘটলে, ভুল বার্তা যেতে পারে বলে তাঁর দল মনে করছে। তবে রাজনৈতিক সূত্রের খবর, হিন্দু ভোট ব্যাঙ্কের কথা ভেবে অযোধ্যার অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করে সুর চড়াতেও চাইছেন না তৃণমূল নেত্রী।

সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি অবশ্য আজ স্পষ্ট বলেছেন, “বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পক্ষ থেকে আমার হাতে আমন্ত্রণপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। ধর্মে বিশ্বাস যাঁর যাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। আমরা তা সম্মান করি। প্রত্যেক ধর্মের মানুষের ইচ্ছেমতো ধর্মীয় আচরণ পালন করার অধিকার রয়েছে। তবে সংবিধান অনুযায়ী এ দেশ কোনও নির্দিষ্ট ধর্মকে প্রধান হিসাবে চিহ্নিত করে না। এ ক্ষেত্রে রাম মন্দিরের উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হচ্ছে। জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে সোজাসাপটা রাজনীতি করা হচ্ছে। যা ভারতের সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই ধরনের একটি অনুষ্ঠানে আমার উপস্থিত থাকা সম্ভব নয়।” একই ভাবে সিপিএমের বৃন্দা কারাটের কথায়, “অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন এবং প্রাণ প্রতিষ্ঠায় অংশ নেবে না সিপিএম। আমরা সকলের ধর্মীয় বিশ্বাসকেসম্মান করি। কিন্তু, ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটাসঠিক নয়।”

কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বকেও রাম মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, সনিয়া গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং অধীররঞ্জন চৌধুরী। সনিয়া গান্ধী উপস্থিত থাকবেন কি না তা নিয়ে কোনও চূড়ান্ত ঘোষণা কংগ্রেস এখনও করেনি। কিন্তু রাজনৈতিক সূত্রের মতে, বাম নেতারা যে ভাবে মুখের উপর আমন্ত্রণ প্রত্যাখান করেছেন, তা কখনওই করা সম্ভব নয় কংগ্রেস নেতৃত্বের পক্ষে। বরং রাম মন্দিরের রাজনীতি সনিয়া গান্ধীদের কাছে বরাবরই একটি অস্বস্তির বিষয়। দেশের হিন্দু আবেগকে অস্বীকার করে কোনও বিরুদ্ধ বিবৃতি দেওয়া কংগ্রেস রাজনীতির পক্ষে আত্মহননের শামিল। বহু সময়ে বিভিন্ন রাজ্যে ‘নরম হিন্দুত্ব’কে অস্ত্র করেছে সনিয়া-রাহুলের দল। ২০১৮ সালের গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস প্রায় জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। সে সময় রাজ্যের প্রায় সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরে মাথা ঠুকতে দেখা গিয়েছে রাহুলকে। তিনি সে সময়ে এড়িয়ে গিয়েছিলেন মসজিদ সফর। ফলত, সনিয়া নিজে যেতে না পারলেও কংগ্রেসের শীর্ষ পর্যায়ের কোনও নেতা থাকবেন অযোধ্যার অনুষ্ঠানে। তা না হলে হিন্দু-বিরোধী ভাষ্যের ফাঁদে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

কংগ্রেসের প্রাক্তন নেতা কপিল সিব্বলের সে দায় নেই। তিনি আজ নির্দ্বিধায় বলেছেন, “রাম আমার মনে, আমার জীবন যাত্রায় আগাগোড়া রয়েছেন। তার প্রচার করা আমি সমর্থন করি না, তাই সে দিন অযোধ্যা যাব না।”

কনৌজের বিজেপি সাংসদ সুব্রত পাঠক দাবি তুলেছেন, রাম মন্দিরের উদ্বোধনে যেন কোনও এসপি নেতাকে নিমন্ত্রণ জানানো না হয়। অভিযোগ, ১৯৯০ সালে তাদের সরকারই করসেবকদের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল। এসপি নেতা অখিলেশ সিংহ যাদবের স্ত্রী এবং সাংসদ ডিম্পল যাদব আজ বলেছেন, যদি শেষ পর্যন্ত তাঁরা আমন্ত্রণ না পান, তা হলে অন্য কোনও দিনে মন্দির দর্শন করে আসবেন। তাঁর কথায়, “ধর্মবিশ্বাসকে রাজনীতির দড়ি দিয়ে বাঁধা যায় না। দেশের প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীনতা রয়েছে রাম মন্দিরে গিয়ে পূজা করার।’’ আর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মীনাক্ষী লেখির কথায়, “আমন্ত্রণ সকলকেই জানানো হয়েছে। তবে ভগবান রামের আমন্ত্রণ যাঁরা পেয়েছেন, তাঁরাই আসবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন