National News

একমাত্র লক্ষ্য গাঁধী পরিবার, জরুরি অবস্থার স্মৃতি উস্কে নয়া ভোট-কৌশলে বিজেপি

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৮ ১৯:১৯
Share:

মুম্বইয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —এএফপি

নিশানা স্থির করে ফেলল বিজেপি। আক্রমণের সূচনাটাও হয়ে গেল। সূচনা করলেন খোদ নরেন্দ্র মোদী। সামগ্রিক বিরোধী জোট বা তৃতীয় ফ্রন্ট— আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি তথা এনডিএ-র প্রতিপক্ষ যে-ই হোক, মোদী-শাহ ব্রিগেডের আক্রমণের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হবে কংগ্রেস তথা গাঁধী পরিবার। বুঝিয়ে দিলেন মোদী। সেই আক্রমণের অন্যতম হাতিয়ার হবে জরুরি অবস্থার স্মৃতি উস্কে দেওয়া। সে কথাও স্পষ্ট করে দিল গেরুয়া শিবির।

Advertisement

১৯৭৫ সালের ২৫ জুন দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছিল ইন্দিরা গাঁধীর সরকার। তার পর ৪৩ বছর কেটেছে। কিন্তু ১৯৭৭-এর নির্বাচন ছাড়া আর কোনও ভোটেই জরুরি অবস্থা মূল নির্বাচনী ইস্যু হয়ে ওঠেনি। ২০১৯-এর নির্বাচনের আগে ইন্দিরা জমানার সেই জরুরি অবস্থাকে ফের ইস্যু করে তুলতে তৎপর হয়ে উঠেছেন নরেন্দ্র মোদী অমিত শাহরা।

সোমবার ছিল ২৫ জুন, ৪৩ বছর আগে ওই তারিখেই জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল দেশে। রাজ্যে রাজ্যে সাংবাদিক সম্মেলন করে সোমবারই আরএসএস জরুরি অবস্থার স্মৃতি উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করে সোমবার। আজ, মঙ্গলবার সক্রিয় হয়েছে বিজেপি। দলের টুইটার হ্যান্ডলে একটি ভিডিও প্রকাশ করে জরুরি অবস্থার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। আর মুম্বইয়ে আয়োজিত এক জনসভা থেকে নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্য— কোনও কিছু, কোনও ব্যক্তি, কোনও সংবিধানই কংগ্রেসের কাছে ওই (গাঁধী) পরিবারটির চেয়ে বড় নয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: মন্ত্রক নিয়ে কাড়াকাড়ি, দর্শক মোদী

জরুরি অবস্থা প্রসঙ্গেই অবশ্য থেমে থাকেননি মোদী। সেখান থেকেই টেনে এনেছেন গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে ওঠা সাম্প্রতিক অভিযোগের প্রসঙ্গ। টুইটারে প্রকাশিত ভিডিয়োয় মোদীর যে কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে, সেখানে তিনি বলছেন, ‘‘ভারতের ইতিহাসে ২৫ জুন কেউ ভুলতে পারেন না। ক্ষমতার সুখ ভোগ করতে দেশকে জরুরি অবস্থার বন্ধনে বেঁধে জেলখানা বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’ আর মুম্বইয়ের জনসভা থেকে মোদীর মন্তব্য, কংগ্রেস এখনও সেই পথেই হাঁটছে। মোদী এ দিন বলেন, ‘‘যখন ওই পরিবারকে একটি আইনি নোটিস ধরানো হল, এত ঔদ্ধত্য, এত আত্মম্ভরিতা যে, দেশের প্রধান বিচারপতিকেও রেহাই দেওয়া হল না... সংসদে তাঁর বিরুদ্ধে অপসারণের প্রস্তাব আনা হল।’’

যখনই কংগ্রেসের মনে হয় দলের তথা গাঁধী পরিবারের ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, তখনই সব রকমের মিথ্যা ছড়ানো শুরু হয়। এক সময়ে যে দলের সাংসদ সংখ্যা ছিল ৪০০, সেই দল ৪০-এ নেমে আসার পরে তারা নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতেও ছাড়েনি। মঙ্গলবার এমনই বলেছেন মোদী। তিনি আরও বলেছেন, ‘‘ওঁরা (কংগ্রেস) বলতেন, জনসঙ্ঘ এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ মুসলিমদের মেরে ফেলবেন... এখন ওঁরা বলেন, আরএসএস দলিতদের মেরে ফেলবে।’’ নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতেই কংগ্রেস এই ধরনের কথা বলে বলে মোদী অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা একটা বিরাট জাতি, বিশাল যার জনসংখ্যা। আতঙ্ক ছড়ানোর এই সব প্রয়াস মানুষের মধ্যে প্রভাব ফেলে।’’

আরও পড়ুন: মোদীর উপর হামলার আশঙ্কা ‘চরম পর্যায়ে’, নিশ্ছিদ্র হচ্ছে নিরাপত্তা

মোদী আরও বলেন, ‘‘আজকের নবীন প্রজন্ম স্বাধীনতা ভোগ করছে। তাঁরা জানেন না, স্বাধীনতা ছাড়া বাঁচাটা কী রকম। জরুরি অবস্থা কতটা কষ্টকর ছিল ছিল, তা নবীন প্রজন্ম সম্ভবত অনুভব করতে পারে না।’’ টুইটারে প্রকাশিত ভিডিয়োতেও মোদীর মুখে এ কথাই শোনা গিয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘‘জরুরি অবস্থাকে মনে রেখে গণতন্ত্রের শক্তিকে চিনে নেওয়া এবং আগামী প্রজন্মকে তা জানানো দরকার, এটাই হল সময়ের দাবি।’’

মুম্বইয়ের মঞ্চ থেকে মোদীর আক্রমণ এবং ভিডিও বার্তায় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মোদি-শাহের যৌথ তোপ স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে সুর এখন থেকেই চড়াতে শুরু করে দিল বিজেপি। আনুষ্ঠানিক ভাবে না হলেও, নির্বাচনী যুদ্ধের দামামা বাজিয়েই দিয়েছে শাসক শিবির। বিরোধী শিবিরে যে সামগ্রিক জোটের আবহ তৈরি হয়েছে, তা ভেস্তে দিতেও যে বিজেপি অত্যন্ত তৎপর, সে কথাও নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ থেকে এ দিন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

বিজেপি-র বিরুদ্ধে গোটা দেশে জোট গড়ার ডাক দিয়েছে বিরোধী দলগুলি। তৃণমূল-সহ কয়েকটি দল সেই জোটে কংগ্রেসকে চায় না ঠিকই। কিন্তু আরজেডি, এনসিপি, এসপি, বিএসপি, ডিএমকে, জেডিএস-সহ অধিকাংশ বিরোধী দলই কংগ্রেসকে সামনে রেখে জোট গড়ার পক্ষে। সেই প্রচেষ্টা যাতে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে, তার জন্যই সক্রিয় হয়েছে বিজেপি। গাঁধী পরিবার শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ দেখে, ক্ষমতার জন্য গাঁধী পরিবার দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিকেও আক্রমণ করতে ছাড়ে না, ক্ষমতার সুখ ভোগ করার জন্য ইন্দিরা জরুরি অবস্থা জারি করে গোটা দেশকে জেলখানা বানিয়ে দিয়েছিলেন, এখনও কংগ্রেস সেই পথেই হাঁটছে, গোটা দেশে মিথ্যা ও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে— নরেন্দ্র মোদীর একের পর এক তীক্ষ্ণ মন্তব্য স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছে, কংগ্রেসকে তথা গাঁধী পরিবারকে রাজনৈতিক ভাবে প্রায় অচ্ছুৎ করে তুলতে তৎপর বিজেপি। অন্য সব দলকে ছেড়ে এখনও থেকেই কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করা হবে এবং সাধারণ নির্বাচনের আগে গাঁধী পরিবারের ভাবমূর্তিকে তলানিতে পৌঁছে দেওয়া হবে, তা হলেই অন্য বিরোধী দলগুলি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট থেকে পিছিয়ে আসতে চাইবে— বিজেপির রণকৌশল অনেকটা এ রকমই। বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এই কৌশল রূপায়ণে বিজেপি যদি সফল হয়, তা হলেই বিরোধীদের তরফে ৪০০ আসনে একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দেওয়ার ফর্মুলা ভেস্তে যাবে বলে বিজেপির নির্বাচনী ম্যানেজাররা মনে করছেন।

আরও পড়ুন: ‘কারও দয়ায় চলি না’, কুমারের তোপে কংগ্রেস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন