শুধু দরবার বসিয়ে রাজপাট সামলানো নয়। লেখালিখিতে আজকাল খুব মন দিয়েছেন মহম্মদ সাহাবুদ্দিন। ডাকসাইটে বাহুবলী জেলে বসে বই লিখছেন।
যেমন তেমন বই নয়। আস্ত ইতিহাসের বই। বিষয় আধুনিক ভারত। ‘হিস্ট্রি অব মর্ডান ইন্ডিয়া’ নামে সাহাবুদ্দিনের বই নাকি লেখা শেষের পথে। সিওয়ান জেল সূত্রের খবর, শীঘ্রই বইটি ছাপা হবে।
জেলে বসে বই লেখার ইতিহাস অবশ্য বহু প্রাচীন। পৃথিবীর সেরা বইগুলোর অনেকগুলোই জেলে বসে লেখা। তার মধ্যে সার্ভান্তেসের ডন কিহোতে বা মার্কো পোলোর ভ্রমণ বৃত্তান্ত যেমন আছে, তেমনই আছে ও হেনরি বা অস্কার ওয়াইল্ডের বহু গল্পও। আছে মেকিয়াভেলির দ্য প্রিন্স, থরো-র সিভিল ডিসওবিডিয়েন্স বা আন্তোনিও গ্রামশি-র প্রিজন নোটবুকের মতো সাড়া জাগানো তত্ত্বভাবনা। গাঁধী, মার্টিন লুথার কিঙ্গ বা নেলসন ম্যান্ডেলা গারদে বসেও তাঁদের লেখালিখি চালিয়ে গিয়েছেন।
মহম্মদ সাহাবুদ্দিনকে অবশ্য লেখক বা চিন্তক হিসেবে চেনে না কেউ। তাকে লোকে চেনে বিহারের ত্রাস হিসেবে, সিওয়ানের এক কালের মুকুটহীন রাজা বলে। সাহাবুদ্দিনের নাম শুনলে খুন-জখম-অপহরণের একগুচ্ছ অভিযোগের ফিরিস্তিই মনে আসে সবার। শুধু অভিযোগই বা কেন! জোড়া খুনের এক মামলায় আদালত তাঁকে যাবজ্জীবন সাজাও শুনিয়েছে। রাজনীতিতে সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে এসেছিলেন লালুপ্রসাদ যাদব। লালুপ্রসাদের হাত ধরেই প্রথমে বিধানসভায় এবং পরে লোকসভায় প্রবেশ। সিওয়ানের চার বারের সাংসদ আপাতত প্রায় এক দশক জেলে বন্দি। নব্বই দশকের সেই দাপট অবসান হয়েছে অনেক দিন। তবে জেলে দরবার বসিয়ে জনসংযোগে ঘাটতি পড়েনি। বাকি সময়টা সাহাবুদ্দিন লেখাপড়া করেই কাটাচ্ছেন।
সিওয়ান জেলেই নিজের একটা মহল তৈরি করে ফেলেছেন সাহাবুদ্দিন। বড় বড় চারখানা ঘর। একটা ঘরে আমদরবার, একটা ঘরে জিম। একটা ঢাকা বারান্দাও আছে। সাংবাদিকরা গেলে সেখানেই বসেন। সাহাবুদ্দিন আলাপ করেন। নিজেই জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি আছে তাঁরা। মুজফফরপুরের বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৫ সালে ‘জোট সরকারের যুগ’ নিয়ে পিএইচডি-ও করেছেন। এ বার হাত দিয়েছেন বই লেখার কাজে। কাজ প্রায় শেষের মুখে। ভারতের ইতিহাস নিয়ে তাঁর আগ্রহের কথা বেশ কয়েক বছর ধরেই বলে আসছিলেন। রোমিলা থাপার প্রিয় ইতিহাসবিদ, সেটাও বলেছিলেন। তবে রোমিলার গবেষণাক্ষেত্র প্রাচীন ভারত নয়, নিজের লেখালিখির জন্য সাহাবুদ্দিন পা রেখেছেন সুমিত সরকার বা বিপান চন্দ্রের মতো ইতিহাসবিদের আঙিনায়। আধুনিক ভারতই তাঁর বইয়ের নাম।
বিহারের বাহুবলীদের মধ্যে লেখাপড়ার ঝোঁকটা অবশ্য নতুন নয়। যেমন গত বছর জুলাই মাসে গ্রেফতার হন প্রাক্তন বিধায়ক সুনীল পান্ডে। নাশকতা-খুন-অপহরণ-সহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। জেলে বসেই কবিতা লিখছেন সুনীল। সেই সঙ্গে ‘বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে ভগবান মহাবীরের উপদেশ’ নিয়ে পিএইচডি-ও করেছেন এই প্রাক্তন জেডিইউ নেতা। ১৯৯৪ সালে গোপালগঞ্জের জেলাশাসককে খুন করায় যাবজ্জীবন সাজা খাটছেন শিবহরের প্রাক্তন সাংসদ আনন্দ মোহন। এক সময়ে বিহারের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ নেতা আনন্দ মোহন জেলে বসেই দশরথ মাঁঝিকে নিয়ে গল্প লিখেছেন। নাম ‘মাউন্টেন ম্যান’। সে লেখা স্কুলের পাঠ্যবইতে ঠাঁইও পেয়েছে। ‘কয়েদ কি আজাদ কলম’ নামে কবিতার বইও বেরিয়েছে আনন্দের। জেলে বসে বই লিখেছেন মাধেপুরার সাংসদ রাজেশ রঞ্জন ওরফে পাপ্পু যাদবও। ‘দ্রোহকাল কা পথিক’ নামে সে বই বিহারে বেশ চলেছিল।
বাহুবলীরাও কি তবে অসির চেয়ে মসিতেই আস্থা রাখছেন?