তিন বছর পর বন্ধি অবস্থা থেকে উদ্ধার করা হয় প্রযুক্তিবিদকে। ছবি: সংগৃহীত।
বাবা, মা, দাদা— পরিবারের কেউই বেঁচে নেই। নেই বন্ধুবান্ধবও। মেলামেশা নেই প্রতিবেশীদের সঙ্গেও। তাই তাঁর খোঁজ খুব একটা কেউ রাখতেন না! পরিবারের মৃত্যুতে মানসিক আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। তার পর থেকে নিজেকে স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি করে রেখেছিলেন। তিন বছর ওই অবস্থাতেই দিন কাটছিল তাঁর। অবশেষে গত সপ্তাহে ৫৫ বছর বয়সি ওই ব্যক্তিকে নভি মুম্বইয়ের এক আবাসনের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয়। মুখে গোঁফ, দাড়ির জঙ্গল!
অনুপ নায়ার নামে ওই ব্যক্তি এক জন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। এক সময়ে বহুজাতিক সংস্থায় কম্পিউটারের প্রোগ্রামিংয়ের কাজ করতেন। কিন্তু হঠাৎই সেই কাজ ছেড়ে দিয়ে নিজেকে ফ্ল্যাটবন্দি করে ফেলেন। জুইনগরের এক আবাসনের ফ্ল্যাটে থাকতেন। তবে বাইরে বার হতেন না। গত তিন বছরে তাঁকে আদৌ দেখেছেন কি না, তা মনেই করতে পারছেন না প্রতিবেশীরা। বাইরে জগৎ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছিলেন অনুপ। শুধু খাওয়ার জন্য যোগাযোগ করতেন বিভিন্ন খাবার সরবরাহকারী অ্যাপে।
অনুপের খবর পেয়ে মুম্বইভিত্তিক একটি অসরকারি সংস্থা (এনজিও) তাঁর ফ্ল্যাটে হানা দেয়। যখন তিনি দরজা খোলেন, দেখা যায় ফ্ল্যাটের পরিস্থিতি ‘ভয়াবহ’! চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আবর্জনা। মেঝেতে পুরু ময়লা। শারীরিক বিভিন্ন সমস্যাতেও ভুগছেন অনুপ। তাঁকে ওই অবস্থা থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে খবর।
ওই আবাসনেরই এক আবাসিক ওই এনজিও-র সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তাঁর থেকে খবর পেয়েই আবাসনে আসেন এনজিও-র সদস্যেরা। জানা গিয়েছে, অনুপের জীবনে পর পর নানা ‘ট্র্যাজেডি’ ঘটে। বাবা-মায়ের মৃত্যু, দাদার আত্মহত্যা— অনুপ মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। ফ্ল্যাটবন্দি হয়ে থাকতে শুরু করেন তিনি। দিনের পর দিন ওই অবস্থাতেই থাকতেন। প্রথম প্রথম বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশীরা তাঁর খোঁজ নিতেন। জীবনের মূলস্রোতে ফেরানোর চেষ্টাও করা হয়। কিন্তু অনুপ গুটিয়ে নেন নিজেকে। দূরত্ব বাড়তে থাকে বন্ধু, প্রতিবেশীদের সঙ্গে। এক সময় সেই যোগাযোগও ছিন্ন হয়ে যায়।