ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। —ফাইল চিত্র।
চিরস্থায়ী বন্ধু বা শত্রু বলে কিছু হয় না। শুল্ক নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে টানাপড়েনের আবহে এমনই বললেন দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। ঘটনাচক্রে, শনিবারই জাপান থেকে চিনে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে এসসিও সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের সঙ্গেও বৈঠক করবেন তিনি।
শনিবার রাজনাথ আরও এক বার ‘আত্মনির্ভরতার’ পক্ষে সওয়াল করেন। বলেন, “দেশ এখন নিজেই যুদ্ধজাহাজ তৈরি করছে। নৌসেনা অন্য দেশ থেকে যুদ্ধজাহাজ না-কেনার অঙ্গীকার করেছিল। তাই এখন দেশেই যুদ্ধজাহাজ তৈরি হচ্ছে।” ভারতের বিদেশনীতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাজনাথ বলেন, “চিরস্থায়ী বন্ধু বা শত্রু বলে কিছু হয় না। চিরস্থায়ী কেবল স্বার্থ।” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “ভারত কাউকেই শত্রু বলে মনে করে না। কিন্তু ভারত কখনও মানুষের স্বার্থের সঙ্গে আপস করে না।”
ভারতের উপর প্রথমে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। পরে তিনি জানান, রাশিয়ার কাছ থেকে লাগাতার তেল কেনার কারণে ভারতকে ‘জরিমানা’ দিতে হবে। শাস্তি হিসাবে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয় ভারতের পণ্যের উপর। ফলে মোট রফতানি শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশ। ভারত অবশ্য বার বারই জানিয়েছে, জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই তারা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ট্রাম্প প্রশাসনের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে ‘অকারণ এবং অযৌক্তিক’ বলে ব্যাখ্যা করেছিল নয়াদিল্লি। এ ক্ষেত্রে ভারতের প্রশ্ন, চিন এবং আরও অনেক দেশ রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ তেল আমদানি করে থাকে। তা হলে কেবল ভারতকেই কেন ‘শাস্তি’ দেওয়া হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তোলা হয়।
অন্য দিকে, ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের আবহেই পুরনো সংঘাত পিছনে ফেলে সম্পর্ক উন্নত করার ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত এবং চিন। অথচ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চিনের আগ্রাসন রুখতেই কৌশলগত মিত্র হিসাবে ভারতের বিশেষ গুরুত্ব ছিল আমেরিকার কাছে। সেই গুরুত্ব না-কমলেও ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক-সিদ্ধান্তে দুই দেশের স্বাভাবিক সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। এই আবহে চিরস্থায়ী বন্ধু-শত্রু নিয়ে রাজনাথের ওই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।