CPI Maoist

যৌথবাহিনীর অভিযানে কোণঠাসা মাওবাদীদের সাধারণ সম্পাদক পদে তিরুপতি, বস্তারের দায়িত্বে হিডমা

গত ২১ মে ছত্তীসগঢ়ের বস্তার ডিভিশনের নারায়ণপুর জেলার জঙ্গলে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে ২৮ জন সঙ্গী-সহ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজ ওরফে গগন্না নিহত হয়েছিলেন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৮:০৯
Share:

(বাঁদিকে) নিহত কেশব রাও এবং মাণ্ডবী হিডমা (ডানদিকে)। ছবি: সংগৃহীত।

যৌথবাহিনীর অভিযানে নিহত সিপিআই (মাওবাদী) সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজ ওরফে গগন্নার উত্তরসূরি পদে নির্বাচিত হয়েছেন থিপ্পিরি তিরুপতি ওরফে দেবুজি। দলের পলিটব্যুরো সদস্য এবং কেন্দ্রীয় মিলিটারি কমিশনের প্রধান ছিলেন আদতে তেলঙ্গানার করিমনগর জেলার বাসিন্দা ওই দলিত নেতা।

Advertisement

অন্য দিকে, সশস্ত্র বাহিনী পিএলজিএ (পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি)-র ‘সবচেয়ে দক্ষ ইউনিট’ হিসেবে পরিচিত ১ নম্বর ব্যাটালিয়নের কমান্ডার মাণ্ডবী হিডমা ওরফে সন্তোষ ওরফে হিডমালুকে সংগঠনের দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জ়োনাল কমিটির সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ছত্তীসগঢ়ের বস্তার ডিভিশন জুড়ে যৌথবাহিনীর অভিযান প্রতিরোধের দায়িত্বে রয়েছে এই কমিটি। অন্ধ্রপ্রদেশে আত্মসমর্পণকারী মাওবাদী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমলেশকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এ কথা জানতে পেরেছে সে রাজ্যের পুলিশ।

২০২৪ সালের অক্টোবরে নারায়ণপুর ও দান্তেওয়াড়া সীমান্তে যৌথবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ৩৮ জন মাওবাদী নিহত হওয়ার সময় কমলেশ পালিয়ে গিয়েছিলেন। চলতি বছরের জুলাইয়ের শেষে তিনি তাঁর স্ত্রী মেদাকার সঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেন। মাওবাদীদের জনশিক্ষা সেল ‘মোবাইল অ্যাকাডেমিক পলিটিক্যাল অর্গানাইজ়েশন স্কুল’-এর বস্তার অঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। গত দু’বছরে যৌথবাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে ‘রেড করিডোর’-এর সিংহভাগ এলাকা মাওবাদীদের হাতছাড়া হয়েছে। নিহত হয়েছেন এক ডজনেরও বেশি প্রথম সারির নেতা-নেত্রী। এই পরিস্থিতিতে সংগঠন নতুন করে গড়ে তোলার কঠিন দায়িত্ব নিয়েছেন দুই নেতা।

Advertisement

গত ২১ মে ছত্তীসগঢ়ের বস্তার ডিভিশনের নারায়ণপুর জেলার জঙ্গলে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে ২৮ জন সঙ্গী-সহ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজ ওরফে গগন্না নিহত হয়েছিলেন। দলিত নেতা দেবুজি সেই পদের দায়িত্ব নিলেন। তিনি ছাড়াও ওই পদে দাবিদার ছিলেন পশ্চিমবঙ্গে নিহত নিহত মাওবাদী নেতা মাল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজির ভাই মাল্লোজুলা বেণুগোপাল রাও ওরফে ভূপতি ওরফে বিবেক ওরফে অভয় ওরফে সোনু। ২০১৯ সাল থেকেই সিপিআই (মাওবাদী)-এর প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মুপ্পালা লক্ষ্মণ রাও ওরফে গণপতির কোনও খোঁজ নেই। তিনি এখন জীবিত কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থাগুলির। এই পরিস্থিতিতে সোনু এবং দেবুজি ছাড়া আর এক পলিটব্যুরো সদস্য মিসির বেসরা ওরফে ভাস্কর ওরফে সুনির্মল ‘সক্রিয়’ বলে জেনেছে পুলিশ।

ঘটনাচক্রে, চলতি বছরের গোড়ায় মাওবাদী উপদ্রুত রাজ্যগুলিতে নিরাপত্তাবাহিনীর নতুন করে অভিযান শুরুর পরে আত্মসমর্পণকারী নেতানেত্রীদের তালিকায় ছিলেন সোনুর স্ত্রী তথা দণ্ডকারণ্য জ়োনাল কমিটির নেত্রী বিমলা চন্দ সিদাম ওরফে তারাক্কা। তা ছাড়া গত এপ্রিলে সোনুর নাম করে একটি ‘শান্তিবার্তা’ এসেছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে। তাতে জানানো হয়েছিল, হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত মাওবাদী পলিটব্যুরো বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কেন্দ্রের সরকারকে শান্তি আলোচনা এবং সংঘর্ষবিরতির প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তেলুগু ব্রাহ্মণ নেতা সোনুর বদলে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে দলিত মাদিগা জনগোষ্ঠীর নেতা তিরুপতি সংগঠনের অন্দরে বেশি গ্রহণযোগ্য হয়েছে।

২০১০ সালের এপ্রিলে ছত্তীসগঢ়ের দান্তেওয়াড়ায় মাওবাদী হামলায় সিআরপিএফের ৭৪ জন জওয়ান নিহত হয়েছিলেন। তিরুপতি ছিলেন সেই নাশকতার মূল পরিকল্পনাকারী। বস্তুত, কেশব সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরে মাওবাদী সংগঠনের কেন্দ্রীয় মিলিটারি কমিশনের দায়িত্ব ছিল ৬২ বছরের এই পিএলজিএ অধিনায়কের কাঁধে। অন্য দিকে, ৭০ বছরের বেণুগোপাল মূলত সংগঠনের আর্থিক এবং তাত্ত্বিক দিকটি সামলাতেন। গত এক দশকে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মাওবাদী গেরিলা বাহিনীর অন্তত দু’ডজন অপারেশনে নেতৃত্ব দিয়েছেন ছত্তীসগঢ়ের আদিবাসী নেতা হিডমা। সুকমা জেলার জনজাতি অধ্যুষিত পুবর্তী গ্রামের বাসিন্দা এই নেতা নয়ের দশকে মাওবাদী বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। ১ নম্বর ব্যাটালিয়নের প্রধান হিসাবে ২৫০ জনের দলকে নেতৃত্ব দিতেন তিনি (যদিও গত কয়েক মাসে সেই ব্যাটালিয়নের গেরিলাদের বড় অংশই আত্মসমর্পণ করেছেন)।

সিপিআই (মাওবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটির তরুণতম সদস্যও হিডমার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে বিজেপি বিধায়ক ভীমা মাণ্ডবী খুনের মামলায় চার্জশিট দাখিল করেছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। খোঁজ দিতে পারলে ৪০ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণাও করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও তিনি অধরা। পুলিশি জেরায় কমলেশ জানিয়েছেন, ‘মোবাইল অ্যাকাডেমিক পলিটিক্যাল অর্গানাইজ়েশন স্কুল’-এর প্রাক্তন প্রধান রামচন্দ্র রেড্ডি ওরফে শ্রীনিবাসের হাতে প্রাথমিক ভাবে দণ্ডকারণ্য জ়োনাল কমিটির দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু বয়স এবং স্বাস্থ্যের কারণে শেষ পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পাননি। এর পরে তেলঙ্গানারা আর এক নেতা তক্কল্লাপল্লি বাসুদেব রাও ওরফে আশান্নার নামও আলোচনায় এসেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব পেয়েছেন হিডমা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement