Advertisement
E-Paper

ইঞ্জিনিয়ার, জাতীয় স্তরের খেলোয়াড়, গণপতির উত্তরসূরি মাওবাদী নেতা কেশবের মৃত্যুতে ‘গর্বিত’ প্রধানমন্ত্রীও

গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, ২০১৭ সালে কেশব দায়িত্ব নেওয়ার পরই (আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়েছিল ২০১৮-র নভেম্বরে) নিষিদ্ধ সংগঠনটির খোলনলচে বদলে দিয়েছিলেন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৫ ২২:১৪
Who is CPI (Maoist) general secretary Nambala Keshava Rao alias Basavaraju, allegedly killed in encounter

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

পূর্বসূরি মুপ্পালা লক্ষ্মণ রাও ওরফে গণপতির মতো সিপিআই (মাওবাদী) সংগঠনের অন্দরে ‘তাত্ত্বিক নেতা’ হিসেবে পরিচিতি ছিল না তাঁর। বরং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিগ্রিধারী তেলুগুভাষী নেতা নাম্বালা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজ ওরফে গগন্নার খ্যাতি ছিল ‘সমরকুশলী’ হিসেবে। ২০১৮ সালে সিপিআই (মাওবাদী)-র সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার আগে সংগঠনের কেন্দ্রীয় মিলিটারি কমিশনের প্রধান ছিলেন তিনি। তার আগে ছিলেন, সংগঠনের অস্ত্র ও সামরিক প্রযুক্তিগত শাখা ‘ট্রাম’ (টেকনিক্যাল রিসার্চ অ্যান্ড আর্মস ম্যানুফ্যাক্চারিং ইউনিট)-এর দায়িত্বে।

বুধবার ছত্তীসগঢ়ের নারায়ণপুরে মাওবাদী শীর্ষনেতার মৃত্যুর পরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং। সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘এই অসাধারণ সাফল্যের জন্য আমাদের বাহিনীর জন্য গর্ব হচ্ছে। আমাদের সরকার মাওবাদী আতঙ্ক দূর করতে এবং আমাদের জনগণের জন্য শান্তি ও অগ্রগতির জীবন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’ অন্য দিকে, যৌথবাহিনীর ‘অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট’-এর সাফল্যে উল্লসিত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মন্তব্য, ‘‘নকশালপন্থার বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধের তিন দশকের মধ্যে এটিই সর্বোত্তম সাফল্য। এই প্রথম আমাদের বাহিনী সাধারণ সম্পাদক পদমর্যাদার একজন নেতাকে মেরেছে।’’

গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, ২০১৭ সালে কেশব দায়িত্ব নেওয়ার পরই (যদিও মাওবাদী সংগঠনের তরফে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়েছিল ২০১৮-র নভেম্বরে) নিষিদ্ধ সংগঠনটির খোলনলচে বদলে দিয়েছিলেন। গুরুত্ব বেড়েছে অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং সমরকুশলী নেতাদের। সামরিক দিক থেকে আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেছিল মাওবাদী সংগঠন। তাঁদের মতে, রাজনৈতিক সংগঠনের থেকে সামরিক সংগঠনের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া নিয়ে গণপতির সঙ্গে নাকি মতপার্থক্য তৈরি হয়েছিল তাঁর। বস্তুত, ২০১৯ সাল থেকেই সত্তরোর্ধ্ব গণপতির আর কোনও খোঁজ মেলেনি। তিনি এখন জীবিত কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থাগুলির।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে মাওবাদী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সাংগঠনিক রদবদলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। শারীরিক ভাবে অক্ষম এবং মানসিক চাপ নিতে যাঁরা পারছেন না, তাঁদের সাংগঠনিক নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে অপেক্ষাকৃত কমবয়সিদের নেতৃত্বে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাওবাদী কেন্দ্রীয় মিলিটারি কমিশনের প্রধান কেশবকে সংগঠনের সর্বোচ্চ পদাধিকারী গণপতির স্থলাভিষিক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। একই ভাবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিয়ে আসা হয়েছিল কিছু নতুন মুখ। ২০০৪ সালে সংগঠনের প্রতিষ্ঠার পরে সেটিই ছিল প্রথম পরিবর্তন।

গণপতির কিছু দিন পরে আশির দশকের শেষপর্বে সিপিআই এমএল (জনযুদ্ধ বা পিডব্লিউজি)-এর প্রতিষ্ঠাতা কোড্ডাপল্লি সিতারামাইয়ার মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন কেশব। সেই পথ ধরেই যোগ দিয়েছিলেন সশস্ত্র গেরিলা আন্দোলনে। অন্ধ্র এবং অবিভক্ত মধ্যপ্রদেশে নিরাপত্তাবাহিনীর উপর একাধিক হামলার সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি, দলীয় প্রকাশনা আওয়াম-এ-জং-এর সম্পাদকীয় বোর্ডের সদস্যও হয়েছিলেন। ২০০৪ সালে এমসিসি এবং জনযুদ্ধ মিশে জন্ম হয়েছিল নতুন সংগঠন সিপিআই (মাওবাদী)-র। গত দু’দশকে সেই সংগঠনের অধিকাংশ নেতাই নিহত হয়েছেন নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানে। বুধবার ছত্তীসগঢ়ের নারায়ণপুরের অবুঝমাঢ়ে যৌথবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে আরও ২৯ জন সহযোদ্ধার সঙ্গে সেই তালিকায় উঠল কেশবের নাম।

১৯৫৫ সালের ১০ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামের জিয়ানাপেটায় এক সাধারণ পরিবারে কেশবের জন্ম। পড়াশোনায় কৃতী এবং খেলাধুলোয় দক্ষ! ওয়ারঙ্গলের ‘রিজিয়োনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’ থেকে বি-টেক ডিগ্রিধারী কেশব এক সময় জাতীয় পর্যায়ের ভলিবল প্রতিযোগিতায় অন্ধ্রপ্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তাঁর সেই ‘বহুমুখী প্রতিভা’ দেখা গিয়েছিল সাংগঠনিক নেতৃত্বেও। দু’দশক আগেই তাঁর মাথার দাম ১০ লক্ষ টাকা ঘোষণা করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়ায় দু’কোটিতে!

ঘটনাচক্রে, গত দু’দশকে যে মাওবাদী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যেরা এনকাউন্টারে নিহত হয়েছেন, তাঁদের প্রায় সকলেই জনযুদ্ধের ‘ফসল’। এঁদের মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশের মাটিতে সে রাজ্যের পুলিশের মাওবাদী দমন বাহিনী গ্রে হাউন্ডের অভিযানে নিহত হয়েছিলেন সন্দে রাজামৌলি, পটেল সুধাকর রেড্ডি এবং চেরুকুরি রাজকুমার ওরফে আজাদ। ২০০৭ সালে অন্ততপুরে নিহত হয়েছিলেন রাজামৌলি, ২০১০-এ অন্ধ্রের আদিলাবাদে পলিটব্যুরো সদস্য আজাদ এবং ২০১২ সালে ওয়ারঙ্গলে সুধাকর। ঘটনাচক্রে তাঁদের তিন জনকেই জীবিত অবস্থায় গ্রেফতার করে সাজানো সংঘর্ষে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। একই অভিযোগ উঠেছিল বাংলায় নিহত অন্ধ্রের মাওবাদী নেতা মাল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজির ক্ষেত্রেও।

যদিও পুলিশের দাবি, ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর ঝাড়গ্রামের বুড়িশোলের জঙ্গলে যৌথবাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে মৃত্যু হয়েছিল কিষেণজির। কিষেণজির ভাই মাল্লোজুলা বেণুগোপাল রাও ওরফে ভূপতি ওরফে বিবেক ওরফে সোনু বর্তমানে মাওবাদী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। সোনুর স্ত্রী তথা সিপিআই (মাওবাদী) দণ্ডকারণ্য জ়োনাল কমিটির নেত্রী বিমলা চন্দ সিদাম ওরফে তারাক্কা গত ১ জানুয়ারি মহারাষ্ট্রের গঢ়ছিরৌলিতে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। ২০২১ সালে মহারাষ্ট্রে গঢ়ছিরৌলিতেই সে রাজ্যের পুলিশের মাওবাদী দমন বাহিনি সি-৬০-এর সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারান কেন্দ্রীয় কমিটির আর এক সদস্য মিলিন্দ তেলতুম্বড়ে। এ ছাড়া, ২০১৬ সালে অন্ধ্র-ওড়িশা-ছত্তীসগঢ় সীমানায় সংঘর্ষে দয়া ওরফে গারলা রবি, গণেশ এবং মল্লেশের মতো কেন্দ্রীয় কমিটির আমন্ত্রিত সদস্যের মৃত্যু হয় বলে দাবি পুলিশের। চলতি বছরের জানুয়াতেই ছত্তীসগঢ়ের গরিয়াবান্দ জেলায় যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত হন মাওবাদী কেন্দ্রীয় কমিটির আর এক পরিচিত সদস্য রামচন্দ্র রেড্ডি ওরফে চলপতি।

Maoist Nambala Keshava Rao Basavaraju CPI Maoist CPI-Maoist Ganapathi Ganapathy Muppala Lakshmana Rao Naxals Naxalism Naxal Maoists
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy