প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মুপ্পালা লক্ষ্মণ রাও ওরফে গণপতির খোঁজ নেই দীর্ঘ দিন। গত কয়েক বছরে গঢ়চিরৌলী-অবুঝমাঢ়ের ‘রেড করিডরে’ তাঁর গতিবিধির কোনও খবর নেই। তবে রয়ে গিয়েছেন নিষিদ্ধ সিপিআই (মাওবাদী) এবং তার সশস্ত্র শাখা পিএলজিএ (পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি)–র অন্তত ১৬ জন নেতা-কমান্ডার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনে জন্য এখন তাদের উপরেই ‘নজর’ কেন্দ্র এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির পুলিশ বাহিনীর।
চলতি বছরে মাওবাদী পলিটব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র রেড্ডি ওরফে চলপতি, সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজু ওরফে গগন্না, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নরসিংহচলম ওরফে সুধাকর বস্তারের জঙ্গলে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন। পিএলজিএ-র হাত থেকে বিস্তীর্ণ এলাকা পুনরুদ্ধারও করা হয়েছে। কিন্তু ওই ১৬ নেতার ‘সৌজন্যে’ এখনও চার রাজ্যের বেশ কিছু এলাকায় সশস্ত্র নকশালপন্থীদের দাপট রয়েছে বলে গোয়েন্দা রিপোর্ট জানাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে কোবরা (সিআরপিএফের কমান্ডো বাহিনী)-ডিআরজি (ছত্তীসগঢ়ের ডিস্ট্রিক্ট রিজ়ার্ভ গার্ড)-বস্তার ফাইটার্স-সি৬০ (মহারাষ্ট্র পুলিশের মাওবাদী দমন বাহিনী)-এসওজি (ওড়িশা পুলিশের মাওবাদী দমন বাহিনী)-গ্রে হাউন্ড (অন্ধ্রপ্রদেশ-তেলঙ্গানার মাওবাদী দমন বাহিনী) যৌথ অভিযানে তাই বিশেষ ভাবে ওই ১৬ নেতার নাগাল পাওয়ার চেষ্টা চলছে বলে সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর প্রতিবেদন জানাচ্ছে।
আরও পড়ুন:
নিরাপত্তাবাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানের জেরে গত কয়েক বছরে নিহত এবং আত্মসমর্পণ করেছেন মাওবাদী সংগঠনের বহু প্রথম সারির নেতা। পলিটব্যুরোর ‘জীবিত ও সক্রিয়’ সদস্যের সংখ্যা নেমে এসেছে তিনে। এঁদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ২০১১ সালে নিহত মাওবাদী নেতা মাল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজির ভাই মাল্লোজুলা বেণুগোপাল রাও ওরফে ভূপতি ওরফে বিবেক ওরফে অভয় ওরফে সোনু রয়েছেন। রয়েছেন, মাওবাদী সংগঠনের ‘দলিত মুখ’ হিসাবে পরিচিত থিপ্পিরি তিরুপতি ওরফে দেবুজি ওরফে চেতনদেওজি।
এ ছাড়া আর এক পলিটব্যুরো সদস্য মিসির বেসরা ওরফে ভাস্কর ওরফে সুনির্মল ‘সক্রিয়’ বলে মাস কয়েক আগে একটি গোয়েন্দা রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে ঝাড়খণ্ড-ওড়িশা-রাঢ়বঙ্গ নিয়ে গঠিত মাওবাদী ‘ইস্টার্ন রিজিওনাল ব্যুরো’র দায়িত্বে। একদা বেণুগোপালের দাদা কিষেণজি এই পদে ছিলেন। এ ছাড়া রয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা পিএলজিএ-র ‘প্রধান সামরিক মস্তিষ্ক’ হিসাবে পরিচিত মাধবী হিডমা ওরফে সন্তোষ ওরফে হিডমালু। গত এক দশকে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মাওবাদী গেরিলা বাহিনীর অন্তত দু’ডজন অপারেশনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
গণেশ উইকে ওরফে গণেশন্না, সুজাতা ওরফে কল্পনা, মল্ল রাজা রেড্ডি ওরফে সায়ান্নার মতো মাওবাদী নেতারাও রয়েছেন এই তালিকায়। ওই ১৬ জনের প্রত্যেকের নামেই ৪০ লক্ষ থেকে ১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন অঙ্কের ‘মাথার দাম’ ধার্য রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে বেণুগোপালের স্ত্রী তথা সিপিআই (মাওবাদী) দণ্ডকারণ্য জ়োনাল কমিটির নেত্রী বিমলা চন্দ সিদাম ওরফে তারাক্কার নামও ছিল এই তালিকায়। কিন্তু গত ১ জানুয়ারি মহারাষ্ট্রের গঢ়চিরৌলীতে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন তিনি।