লাল রংয়ের একটি টুপি। সামনে লেখা, ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ (আমেরিকাকে আবার মহান করে তোলো)! মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভোটের প্রচারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাথায় দেখা গিয়েছিল সেই টুপি। ‘মাগা ক্যাপ’ নামে বিখ্যাত সেই টুপিকে অনুকরণ করে এ বার পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করল কংগ্রেস।
সমাজমাধ্যমে প্রচারে ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে সেই লাল টুপির ছবি। তাতে লেখা ‘নরেন্দর সারেন্ডার’! লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী মঙ্গলবার পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি ঘোষণাকে ‘মোদীর আত্মসমর্পণ’ বলেছিলেন। তার পরেই ‘সারেন্ডার’-তত্ত্ব সামনে এনে প্রচারে নেমেছে কংগ্রেস। ঘটনাচক্রে, ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ আচমকা ইতি টানার প্রসঙ্গে মোদীকে প্রথম নিশানা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ২৯ মে সাংবাদিক বৈঠকে মোদীকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন,‘‘এত বড় নেতা আপনি, আমেরিকা বললেই চুপ হয়ে যান!’’
তার আগে আলিপুরদুয়ারে জনসভায় মোদী নিশানা করেছিলেন রাজ্য সরকার ও তৃণমূলকে। মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘বিরোধীরাও যখন বিদেশের মাটিতে দেশের হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন (সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসাবে) সেই সময় নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসাবে এখানে রাজনীতির হোলি খেলতে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী!’’ কার্যত সেই সুরেই মঙ্গলবার মধ্যপ্রদেশে একটি সভায় রাহুল বলেন, ‘‘ট্রাম্পের কাছ থেকে একটি ফোন এসেছিল। নরেন্দ্রজি পত্রপাঠ আত্মসমর্পণ করেন। ইতিহাস সাক্ষী, বিজেপি-আরএসএসের এমনটাই চরিত্র। তারা সব সময় মাথা নত করে।’’
এর পরেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের হুমকি উপেক্ষা করার ইতিহাসের প্রসঙ্গ তোলেন রাহুল। তিনি বলেন, ‘‘১৯৭১ সালের যুদ্ধে আমেরিকা তাদের সপ্তম নৌবহর পাঠানো সত্ত্বেও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কিন্তু মাথা নোয়াননি।’’ প্রসঙ্গত, পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের জবাবে পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং পাক পঞ্জাবে ভারতীয় সেনা ‘অপারেশন সিঁদুর’-শুরু করেছিল গত ৭ মে। কিন্তু ১০ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রথম ভারত-পাক সংঘর্ষবিরতির কথা ঘোষণা করেন। পরে দু’দেশই সংঘর্ষবিরতি কার্যকরের কথা জানায়। ট্রাম্পের দাবি, তাঁরই মধ্যস্থতায় দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ অস্ত্রসংবরণে রাজি হয়েছিল। পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার সেই দাবি মেনে নিলেও এখনও মোদী সরকার তাতে সায় দেয়নি।
গত মঙ্গলবার বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র ১৬টি দল বৈঠক করে দাবি তুলেছে, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ পাকিস্তানের সেনাকে যখন ভারতের সেনা বাগে পেয়ে গিয়েছিল, সেই সময় কেন সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা হল, কেনই বা ট্রাম্প আমেরিকায় বসে প্রথমে সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করলেন, মোদী সরকারকে বিশেষ অধিবেশন ডেকে তার জবাব দিতে হবে। কিন্তু বুধবার কেন্দ্র ২১ জুলাই থেকে বাদল অধিবেশনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করে বুঝিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম-সহ বিরোধী শিবিরের ঐক্যবদ্ধ দাবি তারা মানবে না। সাধারণত সংসদের অধিবেশনের দু’সপ্তাহ আগে তার দিনক্ষণ ঘোষণা হয়। এ বার বাদল অধিবেশনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হল ৪৭ দিন আগে। এই আবহে এ বার বিরোধীদের প্রচারের জবাবে প্রতিআক্রমণের কৌশল নিয়েছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘কংগ্রেস ভুলে যাচ্ছে, সমস্ত কিছুর সীমা থাকা উচিত।’’