ওডিশার লক্ষ্য এখন নিজের রসগোল্লা

এ যাত্রা ‘বাংলার রসগোল্লা’ জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন আদায় করে নিলেও ও়ডিশা কিন্তু তাদের রসগোল্লার ‘জিআই’-এর দাবি থেকে সরছে না।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:১৩
Share:

বছর কুড়ি আগেকার বাসমতী-যুদ্ধের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে কারও কারও।

Advertisement

আমেরিকার টেক্সাসের একটি সংস্থা বাসমতী চালের পেটেন্ট পেয়ে গিয়েছিল সেই দেশে। ফলে ভারতের সঙ্গে প্রায় কূটনৈতিক সংঘাতই বেধে যায়। পণ্যের স্বত্ব সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘিত হওয়ার অভিযোগে জলঘোলা হয় বিস্তর। শেষ পর্যন্ত আমেরিকার পেটেন্ট ও ট্রেডমার্ক বিষয়ক কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, টেক্সাসের ওই চালকে ‘বাসমতী’ বলা যাবে না। কাজিয়া থামে।

এ যাত্রা ‘বাংলার রসগোল্লা’ জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন আদায় করে নিলেও ও়ডিশা কিন্তু তাদের রসগোল্লার ‘জিআই’-এর দাবি থেকে সরছে না। তাদের বক্তব্য, ‘বাংলার রসগোল্লা’ জিআই-তকমা পাওয়ার অর্থ, রসগোল্লার উপরে আর বাংলার একাধিপত্য রইল না। মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক বলেছেন, বাংলায় তৈরি রসগোল্লার জন্যই জিআই পেয়েছে ‘বাংলার রসগোল্লা’। ওডিশায় তৈরি রসগোল্লার জন্যও জিআই চাওয়া হবে। অর্থাৎ, মহারাষ্ট্রে অ্যালফন্সো, বাংলায় হিমসাগর আম থাকলে দু’রকম রসগোল্লা থাকবে না কেন?

Advertisement

আরও পড়ুন: দইও কবে কৌলীন্যের কদর পাবে, আশায় গঙ্গারামপুর

তার জন্য অবশ্য ওডিশাকে নিজের রসগোল্লার ইতিহাস, সাংস্কৃতিক যোগ, রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য— সব পেশ করতে হবে। প্রমাণ করতে হবে সেটির মৌলিকত্ব। উনিশ শতকের বাংলাতেই প্রথম রসগোল্লার কথা শোনা যায় বলে জিআই-কর্তৃপক্ষ মেনে নিলেও ওডিশার জগন্নাথ-সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ অসিত মোহান্তি বলছেন, ‘‘বলরাম দাসের ষোড়শ শতকের ‘দণ্ডি রামায়ণে’ রসগোল্লার উল্লেখ রয়েছে। ভরদ্বাজ মুনির আশ্রমে ভরত-শত্রুঘ্নকে মুনিবর ছেনাপুরী, ছেনালাড্ডু, রসাবলী ও রসগোল্লায় আপ্যায়ন করেছিলেন।’’ ওডিশার অর্থমন্ত্রী শশিভূষণ বেহরার কথায়, ‘‘জিআই-এর আর্জি নিয়ে কাজ করছেন বিশেষজ্ঞেরা।’’ জিআই নথিভুক্তিকরণ দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার চিন্নারাজা জি নায়ডু বলেছেন, ‘‘ওডিশার ভৌগোলিক সীমানায় তৈরি রসগোল্লার জন্য জিআই আবেদন করতে বাধা নেই।’’

এ বার থেকে যে ‘বাংলার রসগোল্লা’ নামে ইচ্ছেমতো ব্র্যান্ডিং করা যাবে না, সেই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন সরকারি কর্তারা। উচ্চশিক্ষা ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিভাগের অন্তর্গত বিজ্ঞান-প্রযুক্তি কাউন্সিলের ‘পেটেন্ট ইনফর্মেশন সেন্টার’-এর সিনিয়র সায়েন্টিস্ট মহুয়া হোমচৌধুরীর কথায়, ‘‘বাংলার রসগোল্লা বলে দাবি করতে হলে নির্দিষ্ট মাত্রার রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য, চিনির রসের ঘনত্ব ইত্যাদি থাকতে হবে।’’ তবেই লোগো ব্যবহার করা যাবে। রাজ্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ নিগমের এমডি অনিমেষ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাংলার রসগোল্লা নিয়ে আলোচনা শুরু হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন