Odisha Self Immolation

মৃত্যু হল ওড়িশার নির্যাতিতার, বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলে কলেজেই আগুন দিয়েছিলেন নিজের গায়ে

বালেশ্বরের ওই কলেজেরই এক বিভাগীয় প্রধান ওই ছাত্রীকে যৌন হেনস্থা করেছিলেন বলে অভিযোগ। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করছিলেন না বলে অভিযোগ তোলেন নির্যাতিতা। গত শনিবার ক্ষোভে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৫ ০৭:৪০
Share:

ভুবনেশ্বর এমসে মৃত্যু বালেশ্বরের কলেজছাত্রীর। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তা-ই হল। শেষ হল তিন দিনের জীবন-মরণ লড়াই। মৃত্যু হল ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হয়ে যাওয়া ওড়িশার নির্যাতিতার। সোমবার বেশি রাতের দিকে ভুবনেশ্বর এমসে মৃত্যু হয় তাঁর।

Advertisement

ভুবনেশ্বর এমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সোমবার রাত ১১টা ৪৬ মিনিটে ওড়িশার বালেশ্বরের ওই কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার থেকে ভুবনেশ্বর এমসের বার্ন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, তরুণীকে বাঁচানোর জন্য সম্ভাব্য সবরকম পদক্ষেপ করা হয়েছিল। তাঁর বৃক্কতন্ত্রও প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

বালেশ্বরের ওই কলেজেরই এক বিভাগীয় প্রধান ওই ছাত্রীকে যৌন হেনস্থা করেছিলেন বলে অভিযোগ। তা নিয়ে কলেজের অভ্যন্তরীণ অভিযোগগ্রহণ কমিটি (আইসিসি)-র কাছে গত ১ জুলাই অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিনি। কী ভাবে মাসের পর মাস তাঁকে যৌন হেনস্থা করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু এর পরেও কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ করেননি বলে অভিযোগ। এর প্রতিবাদে কলেজ ক্যাম্পাসেও এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ দেখান ওই নির্যাতিতা এবং তাঁর সহপাঠীরা।

Advertisement

অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কেন কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না, তা নিয়ে লাগাতার প্রশ্ন তুলছিলেন নিহত ছাত্রী। গত শনিবার এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গেও দেখা করতে যান তিনি। সেখান থেকে বেরিয়েই কলেজ ক্যাম্পাসে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন নির্যাতিতা। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে দগ্ধ হন আরও এক ছাত্র। দু’জনকেই সঙ্গে সঙ্গে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ছাত্রীর দেহের ৯৫ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল। তাঁর শারীরিক অবস্থা দেখে শনিবারই ভুবনেশ্বর এমসে স্থানান্তর করা হয় তরুণীকে।

ভুবনেশ্বর এমসে ভর্তি হওয়ার পর থেকে শারীরিক অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি ওড়িশার কলেজের সেই নির্যাতিতার। চিকিৎসকেরা ওই সময় জানিয়েছিলেন, ছাত্রীর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ, তন্ত্র পুড়ে গিয়েছে। কিডনিও পুড়ে যাওয়ার কারণে তা কাজ করছিল না। তরুণীর ডায়ালিসিস চলছিল বলেও জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে চিকিৎসায় পরামর্শ দিচ্ছিলেন দিল্লি এমসের বিশেষজ্ঞেরাও। কিন্তু সোমবার রাতেই মৃত্যু হয় তাঁর।

তরুণীর আত্মহত্যার চেষ্টার পরে গোটা ওড়িশা জুড়ে ক্ষোভ-অসন্তোষ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। ওড়িশার ওই ঘটনায় ইতিমধ্যে আসরে নেমেছে ওড়িশা পুলিশের অপরাধদমন শাখা। দুই সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি ওড়িশার উচ্চশিক্ষা দফতরও পৃথক ভাবে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

ছাত্রীকে যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত অধ্যাপককে গত শনিবারই গ্রেফতার করে পুলিশ। সোমবার গ্রেফতার করা হয় কলেজের অধ্যক্ষকেও। সংবাদ সংস্থা পিটিআই অনুসারে, কলেজের অধ্যক্ষ ওই অভিযুক্তকে আড়াল করার চেষ্টা করছিলেন। তরুণীর বাবাও অভিযোগ তুলেছেন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। সংবাদমাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য অধ্যক্ষ চাপ দিচ্ছিলেন তরুণীকে। গত শনিবার অধ্যক্ষের ঘর থেকে বেরিয়েই যে তাঁর মেয়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন, সে কথাও বার বার উল্লেখ করছেন তরুণীর বাবা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement