বিলাবল ভুট্টো জ়ারদারি। —ফাইল চিত্র।
সিন্ধু জলবণ্টন স্থগিত নিয়ে ফের আপত্তির কথা জানাল পাকিস্তান। শুধু আপত্তি জানানোই নয়, আমেরিকায় গিয়ে খানিক হুমকির সুরেই প্রাক্তন পাক বিদেশমন্ত্রী বিলাবল ভুট্টো জ়ারদারি দাবি করলেন যে, জল বন্ধ করে দক্ষিণ এশিয়াকে পরমাণু যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ভারত। ভারতের এই কার্যকলাপ ‘আগ্রাসন’ বলে অভিহিত করে বিশ্বের বড় রাষ্ট্রগুলিকে কার্যকরী পদক্ষেপ করার আর্জিও জানিয়েছেন তিনি।
পহেলগাঁও কাণ্ডের পর পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে বিভিন্ন দেশে গিয়েছে ভারতের একাধিক সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল। গত মে মাসে নিউ ইয়র্ক যাওয়ার পর আমেরিকার ওয়াশিংটনে গিয়েছে শশী তারুরের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল। পাল্টা নিজেদের ‘সন্ত্রাসবাদের শিকার’ বলে দাবি করে আমেরিকায় গিয়েছে বিলাবলের নেতৃত্বাধীন একটি পাক প্রতিনিধিদল।
বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে একটি আলোচনাসভায় যোগ দিয়েছিলেন বিলাবল। সেখানেই তিনি বলেন, “আমরা বলেছিলাম জলের সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া যুদ্ধের শামিল। দেশপ্রেমের দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা এ কথা বলিনি। এটা আমাদের অস্তিত্বের সঙ্কট। জল এবং বাঁচার স্বার্থে যে কোনও দেশ লড়াই করতে পারে।” একই সঙ্গে বিলাবলের সংযোজন, “ভারত পাকিস্তানে জল সরবরাহ বন্ধ করে প্রথম পরমাণু যুদ্ধের বীজ রোপণ করছে।” যদিও সংঘাত পর্বে এক বারও ভারতের তরফে প্রকাশ্যে পরমাণু যুদ্ধের কথা বলা হয়নি। অন্য দিকে, একাধিক বার পরমাণু হামলার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছে পাকিস্তান। সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তিতে ঢাল করে ইসলামাবাদ ফের পরমাণু যুদ্ধের সম্ভাবনার কথা শুনিয়ে রাখল বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের হাত থাকার ইঙ্গিত মিলতেই ইসলামাবাদের সঙ্গে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে দেয় নয়াদিল্লি। সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলির জল দু’দেশের মধ্যে কী ভাবে বণ্টিত হবে, তা চূড়ান্ত করতে ১৯৬০ সালে দুই দেশের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছিল বিশ্বব্যাঙ্ক।
চুক্তি অনুসারে, জল ধরে রাখা এবং ছাড়ার পরিমাণ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান একে অপরের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার কথা দুই দেশের। কিন্তু পহেলগাঁও কাণ্ডের পর ভারত স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, রক্ত এবং জল একই সঙ্গে বইতে পারে না। ভারতের এই কূটনৈতিক কৌশলে কিছুটা হলেও বিপাকে পড়েছে ইসলামাবাদ। দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি হলেও এখনও এই চুক্তি পুনরায় কার্যকর করার কথা জানায়নি ভারত।
সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে পাকিস্তানের হুমকি অবশ্য নতুন নয়। এপ্রিলের শেষে নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদ উত্তেজনার আবহে বিলাবল বলেছিলেন, ‘‘সিন্ধু আমাদের। হয় সিন্ধু নদ দিয়ে আমাদের প্রাপ্য জল আসবে, নয়তো সিন্ধু দিয়ে ওদের (ভারতীয়) রক্ত বইবে।’’ মে মাসের শেষে পাক সেনার মুখপাত্র, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধরি ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আপনারা যদি আমাদের জল আটকে দেন, তা হলে আমরা আপনাদের নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেব।”