ফিলিপিন্সের সেনাঘাঁটিতে ভারতে নির্মিত ব্রহ্মস। —ফাইল চিত্র।
‘অপারেশন সিঁদুর’-পর্বে পাকিস্তানের একের পর এক সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছিল সে। এমনকি, পাক প্রধান মন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের বক্তৃতাতেও উঠে এসেছিল রাশিয়ার সহযোগিতায় ভারতে তৈরি সেই ব্রহ্মস ক্রুজ সুপারসনিক (শব্দের চেয়ে দ্রুতগামী) ক্ষেপণাস্ত্রের কথা। এ বার দক্ষিণ চিন সাগরে ইসলামাবাদের বন্ধু বেজিঙের আগ্রাসন রুখতে সেই অস্ত্রেই ভরসা করল ফিলিপিন্স।
শুক্রবার ফিলিপিন্সের সরকারি সংবাদমাধ্যম আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারত থেকে কেনা ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের খবর এবং ছবি প্রকাশ করেছে। আপাতত ফিলিপিন্স ফৌজের মেরিন কোরের তত্ত্বাবধানে জাম্বালেস প্রদেশের উপকূলীয় সেনাঘাঁটিতে রাখা হয়েছে ‘ব্রহ্মস ব্যাটারি’। মস্কো-নয়াদিল্লি যৌথ উদ্যোগে গঠিত ব্রহ্মস এরোস্পেস সংস্থায় তৈরি এই ক্ষেপণাস্ত্র স্থলভূমির পাশাপাশি ডুবোজাহাজ এবং জাহাজ থেকে উৎক্ষেপণ করা সম্ভব। ফিলিপিন্স মেরিন কোর ব্রহ্মসের জাহাজ বিধ্বংসী সংস্করণ কেনার জন্য বছর কয়েক আগেই চুক্তি করেছিল ভারতের সঙ্গে। সেগুলিই মোতায়েন করেছে তারা।
অপারেশন সিঁদুর-পর্বে কার্যকারিতা প্রমাণের পরে বিশ্বের অনেক দেশেই ‘মেড ইন ইন্ডিয়া ওয়েপন’-এর চাহিদা বেড়েছে। আর্মেনিয়া, মিশর এমনকি, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চিনের আর এক শত্রুদেশ ভিয়েতনাম আগ্রহ প্রকাশ করেছে ভারতীয় অস্ত্রে। ব্রহ্মসের পাশাপাশি, ‘আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা’, ডি-৪ ‘ড্রোন কিলার’ রয়েছে সেই তালিকায়। প্রসঙ্গত, দক্ষিণ চিন সাগরের অধিকাংশ এলাকাই নিজেদের অংশ বলে দাবি করে বেজিং। তা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে ফিলিপিন্স, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ব্রুনেইয়ের মতো প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে একদলীয় চিনের কমিউনিস্ট শাসকগোষ্ঠীর বিরোধ।
ফিলিপিন্স এবং চিনের বিরোধের অন্যতম কারণ দক্ষিণ চিন সাগরের সেকেন্ড থমাস শোলে দ্বীপকে কেন্দ্র করে। ফিলিপাইন দ্বীপের পালাওয়ান থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ওই দ্বীপে ১৯৯৯ সালে ফিলিপিন্স নৌবাহিনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার একটি জাহাজে অস্থায়ী নৌঘাঁটি বানিয়ে অবস্থান নিয়েছিল প্রায় দু’দশক আগে। এর পরে ২০১২ সালে ফিলিপিন্সের কাছ থেকে স্কারবোরো শোলে দ্বীপের দখল নিয়েছিল চিনা পিপল্স লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। যা নিয়ে দু’দেশের যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ২০১৬ সালের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের মোট বাণিজ্য সামগ্রীর প্রায় ২১ শতাংশই দক্ষিণ চিন সাগরের জলপথ দিয়ে পরিবহণ করা হয়। বিগত কয়েক বছরে সেই পরিমাণ আরও বেড়েছে। ফলে প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে চিনের সংঘাতের পারদ চড়ছে।