Ram Janmabhoomi

দিল্লি ভোটের মুখেই ট্রাস্ট রাম জন্মভূমির

এক একটি লাইন পড়ছেন মোদী, আর বিজেপি শিবিরে ধ্বনি উঠছে ‘জয় শ্রীরাম’। পাশে বসে শাহও জোরে জোরে টেবিল চাপড়াচ্ছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:২১
Share:

অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদী।

দিল্লি ভোটের তিন দিন আগে রাম-বাণ চালালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

আজ সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে ছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক। ধূসর জ্যাকেট এবং গেরুয়া উত্তরীয় গলায় মোদী সোজা লোকসভায় এলেন সেই বৈঠক থেকে। সেনাপতি অমিত শাহেরও পরনে গেরুয়া পাঞ্জাবি। লোকসভা শুরু হতেই মোদী ঘোষণা করলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে তাঁর মন্ত্রিসভা আজ অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের জন্য একটি স্বাধীন ট্রাস্ট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার নাম রাখা হয়েছে ‘শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র’। সরকারের অধিগৃহীত প্রায় ৬৭ একর জমি হস্তান্তর করা হবে এই ট্রাস্টকে। পাশাপাশি, শীর্ষ আদালতের রায় মেনে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে ৫ একর জমি দেবে উত্তরপ্রদেশ সরকার।

এক একটি লাইন পড়ছেন মোদী, আর বিজেপি শিবিরে ধ্বনি উঠছে ‘জয় শ্রীরাম’। পাশে বসে শাহও জোরে জোরে টেবিল চাপড়াচ্ছেন। ঘোষণা শেষ হতেই বিজেপির এক দল সাংসদ লোকসভা থেকে বেরিয়ে সংসদের করিডরে ছুট দিলেন ‘জয় শ্রীরাম, জয় জয় শ্রীরাম’ স্লোগান তুলে।

Advertisement

গত ৯ নভেম্বর শীর্ষ আদালত কেন্দ্রকে তিন মাসের মধ্যে ট্রাস্ট গড়ে রামমন্দির নির্মাণের পরিচালন ভার তুলে দিতে বলে। আর তিন দিন পরেই শেষ হচ্ছে সেই মেয়াদ। তাই বিরোধীরা যতই দিল্লি ভোটের আগে ফায়দা তুলতে বিজেপির এই ঘোষণা বলে অভিযোগ জানাক, নির্বাচন কমিশন কিন্তু আপত্তি তোলেনি।

দিল্লির দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরও বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট সুপ্রিম। দিল্লি ছাড়া আর কোথাও ভোট নেই। এই সিদ্ধান্ত দিল্লি ভোটের দিকে তাকিয়ে নয়।’’ লোকসভায় মোদীর ঘোষণার পরে শাহ টুইট করে জানান, ট্রাস্টের সদস্য হবেন ১৫ জন। তার মধ্যে এক জন দলিত সব সময় থাকবেন। ট্রাস্ট্রের সদস্য কারা, সে তালিকা রাত পর্যন্ত প্রকাশ করেনি সরকার। তবে জানিয়েছে, কোনও রাজনৈতিক নেতা থাকবেন না। বিকালে বিজ্ঞপ্তি জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানায়, ট্রাস্ট্রের ঠিকানা হবে দিল্লির গ্রেটার কৈলাসে। সে ঠিকানা আসলে রামমন্দিরের পক্ষে দীর্ঘদিনের আইনজীবী প্রবীণ কে পরাশরনের।

ফলে মনে করা হচ্ছে পরাশরন ট্রাস্টের সদস্য হবেন। সূত্রের মতে, এ ছাড়া থাকবেন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের থেকে দুই অফিসার, নির্মোহী আখড়া ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এক জন করে সদস্য। মোদীর ঘোষণার পরে উত্তরপ্রদেশ সরকার জানিয়ে দেয়, রাম জন্মভূমি থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে লখনউ-ফৈজাবাদ হাইওয়ের পাশে ধন্নীপুর গ্রামে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে ৫ একর জমি দেওয়া হয়েছে। হিন্দু সন্তরাই সরকারকে আবেদন করেছিলেন, চোদ্দো ক্রোশী পরিক্রমা এলাকার বাইরে যেন মসজিদের জন্য জমি দেওয়া হয়। সরকার সে আর্জি মেনে নিয়েছে।

নজরে দিল্লি ভোট হলেও মোদী আজ বিরোধীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর দেশ পরিণত মনস্কতা দেখিয়েছে। ভারতে হিন্দু, মুসলিম, শিখ, বৌদ্ধ, পারসি, জৈন— সকলে এক বড় পরিবারের সদস্য। সরকার ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’ মন্ত্রেই চলছে। আসুন...’’ এটুকু বলে মোদী ফের বিরোধীদের দিকে চোখ পাকিয়ে বলেন, ‘‘আসুন, এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে সব সদস্য মিলে রামমন্দির নির্মাণকে এক সুরে সমর্থন করি।’’

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সময় বিরোধীরা আপত্তি তোলেনি। আজও নয়। তাদের প্রশ্ন শুধু ভোটের মুখে ঘোষণা নিয়ে। কংগ্রেস সাংসদ বিবেক তনখা বলেন, ‘‘রাম আমাদেরও। কিন্তু বিজেপি কেন ভোটের সঙ্গে রামকে জোড়ে?’’ আসাদুদ্দিন ওয়াইসির মত, ‘‘দিল্লি ভোট নিয়ে ভয়ে আছে বিজেপি।’’ প্রাক্তন শরিক শিবসেনা স্বাগত জানালেও একই সঙ্গে বিজেপি-কে শুনিয়েছে, ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন ঠিক নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন