রাফাল যুদ্ধবিমান। ছবি- এএফপি
লোকসভা ভোটের মুখে প্রধানমন্ত্রী মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করার একটি 'অস্ত্র' হাতে পেয়ে খুশি কংগ্রেস। রাফালের ফাঁস হওয়া গোপন ফাইলকে সামনে রেখে আইনের পথে হাঁটা যাবে, বুধবার এই সম্মতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কংগ্রেসের সন্তুষ্টির কারণ সেটাই।
কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা এ দিন বলেছেন, "মোদীজি, আপনি যতই ছুটুন আর যতই মিথ্যা বলুন না কেন, আজ হোক বা কাল সত্যটা বেরিয়ে আসবেই আসবে। রাফালে কেলেঙ্কারির কঙ্কালগুলি একের পর এক বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এ বার আর 'সরকারি গোপনীয়তা'র আড়াল দিয়ে সেই সব ঢাকাচাপা দেওয়া যাবে না।"
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার চেয়েছিল, ফাঁস হওয়া সেই গোপন ফাইলকে সামনে রেখে ভোটের মুখে যাতে আবার আদালতে না যেতে পারেন বিরোধীরা। কিন্তু শীর্ষ আদালত এ দিন কেন্দ্রীয় সরকারের সেই 'গোপনীয়তা রক্ষা'র আর্জি খারিজ করে দিয়েছে। জানিয়েছে, রাফাল কাণ্ডে ফাঁস হয়ে যাওয়া গোপন রিপোর্ট প্রামাণ্য নথি হিসেবে দেখতে রাজি সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ বুধবার এই রায় দিয়েছে। এর আগে সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যাওয়া নথি প্রামাণ্য হিসেবে পেশ করা যাবে না, এই যুক্তি দেখিয়েছিল কেন্দ্র। তাদের যুক্তি ছিল, দেশের গোপন নথি এই ভাবে বাইরে এলে বিপন্ন হয়ে পড়বে দেশের নিরাপত্তা।
রাফাল যুদ্ধবিমান। ছবি- রয়টার্স
এ দিন শীর্ষ আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে সুরজেওয়ালা বলেন, "সময় যা চাইছে, সুপ্রিম কোর্ট সেই মতোই একটি সঠিক আইনি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মোদীজি, আপনি চিন্তা করবেন না। আপনার পছন্দ হোক বা না হোক, রাফাল কেলেঙ্কারির তদন্ত এ বার হবেই।"
আরও পড়ুন- ফাঁস হওয়া নথি পেশ করা যাবে আদালতে, রাফাল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বড় ধাক্কা কেন্দ্রের
আরও পড়ুন- অসন্তুষ্ট সুপ্রিম কোর্ট, স্থগিতাদেশ নয় ছবিতে
আগে অবশ্য রাফাল নিয়ে সিবিআই তদন্তের আর্জি নাকচ করে কেন্দ্রকে ক্লিনচিট দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এর পরই রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা সংক্রান্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের গোপন নোট সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়। তাতে দেখা যায়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রতিনিধি দল যখন ফ্রান্সের সঙ্গে দর কষাকষি করছিল, সে সময়েই প্রধানমন্ত্রীর দফতর সমান্তরাল দর কষাকষি করেছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অফিসারেরা তাতে আপত্তিও তোলেন। কিন্তু তা খারিজ হয়ে যায়। ওই নথি নিয়েই সুপ্রিম কোর্টের আগের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছিলেন যশবন্ত সিন্হা, অরুণ শৌরি, প্রশান্ত ভূষণরা। সরকারের যুক্তি ছিল, ওই গোপন নোট আদালতে প্রামাণ্য হিসেবে স্বীকৃত হতে পারে না। কারণ মন্ত্রক থেকে ওই ফাইল চুরি গিয়েছে। পরে সরকার জানায়, বেআইনি ভাবে ওই নথি ফোটোকপি করে নেওয়া হয়েছে। তাই আদালত তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
আবেদনকারীদের তরফে পাল্টা যুক্তি ছিল, যে নথি ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে চলে এসেছে, তাকে নিয়ে গোপনীয়তার যুক্তি খাটে না। এই প্রেক্ষিতেই এই রায় দিল শীর্ষ আদালত। শীর্ষ আদালতের এই রায়ে নিশ্চিত ভাবেই ধাক্কা খেল কেন্দ্র।