বর্ষায় ভিজছে কলকাতা, জলে ভাসছে অসম থেকে রাজস্থান

কলকাতা ও লাগোয়া জেলাগুলিতেও কমবেশি বৃষ্টি চলবে। হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, রবিবার বিকেল পর্যন্ত আলিপুরে ৫.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, ঝাড়খণ্ড ও লাগোয়া দক্ষিণবঙ্গের উপর একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৭ ০৯:১৫
Share:

গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টির জল জমেছে দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায়। দিল্লিতে পিটিআইয়ের তোলা ছবি।

রাতভর বৃষ্টিতে ভিজল কলকাতা। বাদ গেল না শহর লাগোয়া জেলাগুলিও। হাল্কা থেকে মাঝারি, কোথাও বা ভারী— সকাল পর্যন্ত চলল সেই বৃষ্টি। বেলা বাড়তে তা একটু কমে বটে, তবে ঝিরঝিরে ভাবে নেমে আসছে মাঝে মাঝেই।

Advertisement

এমনিতে ঝাড়খণ্ড ও লাগোয়া দক্ষিণবঙ্গে একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। তার উপরে বঙ্গোপসাগরে দানা বেঁধেছে আরও একটি ঘূর্ণাবর্ত। পাশাপাশি গাঙ্গেয় দক্ষিণবঙ্গের উপরে সক্রিয় রয়েছে নিম্নচাপ অক্ষরেখাও। ফলে সাগর থেকে হু হু করে জোলো হাওয়া ঢুকছে এবং তা ঘনীভূত হয়ে বর্ষার মেঘ তৈরি করছে। আর তাতেই রবিবারের মতো সোমবারেও আকাশ কালো করে নেমেছে বৃষ্টি। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানান, কলকাতা ও লাগোয়া জেলাগুলিতেও কম বেশি বৃষ্টি চলবে।

আরও পড়ুন: প্রণবদার পিটুনির খোঁচায় প্রশংসার মলম মোদীর

Advertisement

গত এক মাসে এ রাজ্যে বৃষ্টির ঘাটতি প্রায় ২১ শতাংশ। প্রথম দিকে তা ২৩ শতাংশ ছিল। শুধু বাংলাই নয়, বর্ষার মরসুমের প্রথম মাসের শেষে বৃষ্টির ঘাটতি বিহার-ঝাড়খণ্ডেও। এপ্রিলে স্বাভাবিক বর্ষার পূর্বাভাস দিয়েছিল মৌসম ভবন। তারা জানাচ্ছে, জুনে গোটা ভারতেই কম-বেশি স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝা়ড়খণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশ। রাজস্থানে স্বাভাবিকের থেকে ৯৫ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ। মরুশহর জয়সলমের এবং বারমেরে অতিবৃষ্টি মিলেছে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টির ঘাটতি ২১ শতাংশ! হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, বীরভূম-সহ গোটা রাজ্যের ১২টি জেলায় বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে। বিহার-ঝাড়খণ্ডের পরিস্থিতি আরও খারাপ।

এ রাজ্যের পাশাপাশি দেশের অন্য কয়েকটি রাজ্যেও একই জলছবি দেখা গিয়েছে। অসম, মণিপুর, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, গুজরাত, গোয়া, ছত্তীসগঢ়, কর্নাটকে রবিবার থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টির জেরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাজস্থানে। জোধপুরে জলের তোড়ে ভেসে মারা গিয়েছেন বছর ষাটেকের এক ব্যক্তি। সাওয়াই মাধোপুর জেলায় জলে ভেসে গিয়ে মারা গিয়েছেন তিন তরুণী। এ দিকে, টানা বৃষ্টি ও ধসে নাজেহাল অসম, অরুণাচল ও মণিপুর।অরুণাচলে ধস নেমে ইটানগর ও নাহারলাগুনের মধ্যে যোগাযোগ থমকে। বান্দরদোয়া, লিকাবালিতে ধস নেমে একাধিক গাড়ি চাপা পড়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। পূর্ব কামেং জেলার সেপায় পাপি ও পাং নদীর সেতু ভেঙে অনেক পর্যটক আটকে পড়েন। তাঁদের স্থানীয় আইবি ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নাবাম টুকির বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। পরিষদীয় সচিব মামা নাটুংয়ের উদ্যোগে চারজন রোগী, তিনটি শিশু, মহিলা ও ছাত্রদের চপারে নাহারলাগুন ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সাংগি-সেপা ও হজ-পোতিন ট্রান্স অরুণাচল হাইওয়েও বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন। কামেং নদীতে বিপদসীমার উপর দিয়ে জল বইছে।

বৃষ্টির জলে কী হল জোধপুরে, দেখুন ভিডিও

অসমের ৯টি জেলায় তিন লক্ষাধিক মানুষ বন্যা কবলিত। লখিমপুরের মুদাইবিল জলের তোড়ে ভেসে যায় দুই শিশু। এবং গুয়াহাটিতে বাড়ি ধসে মারা গিয়েছে আরও এক শিশু। সরকার শিশুদের পরিবারকে চার লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়াক ঘোষণা করেছে। যোরাবাটের ১২ মাইলে ধস নেমে বেশ কয়েকটি বাড়ি চাপা পড়ে।

মণিপুরে পূর্ব ইম্ফল ও থৌবাল জেলায় তিনটি স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে হাজার পাঁচেক বাড়ি জলমগ্ন হয়েছে। ইথাই বাঁধের জল উচ্চ বিপদসীমাও পার করেছে। কোংবা নদী দু'টি স্থানে ৩০ ফুট করে বাঁধ ভাসিয়ে দিয়েছে। ইম্ফল নদীর জলে ভেঙে গিয়েছে ৫৩ মিটার দীর্ঘ লিলং বাঁধ। লিলং ও ইম্ফল শহরেও অনেক জায়গা জলের তলায়।

অন্য দিকে, বৃষ্টির জেরে বেহাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মণিপুরের ইম্ফলে। প্রবল বৃষ্টিতে বহু এলাকায় ধস নামার খবর পাওয়া গিয়েছে। হিমাচল প্রদেশের মানালি এবং কাশ্মীরের লে-তে ধসের কারণে আটকে পড়েছেন বহু বাসিন্দা এবং পর্যটক। সেখানে কাজ করছে বেশ কয়েকটি উদ্ধারকারী দল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন