India China Relation

পাঁচ বছর পর চিনা পর্যটকদের আবার ভারতে আসার অনুমতি! ভিসা দেওয়া শুরু করছে দিল্লি, স্বাগত জানাল জিনপিং প্রশাসন

গত মার্চেই ভারতীয়দের পুনরায় পর্যটক ভিসা দেওয়া শুরু করেছে চিন। এ বার একই উদ্যোগ নিল ভারতও। চিনা বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, তারা এটিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসাবেই দেখছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৫ ১৪:২৫
Share:

(বাঁ দিকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

চিনা পর্যটকদের ফের ভিসা দেওয়া শুরু করছে ভারত! প্রায় পাঁচ বছর পরে আগামী বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) থেকে শুরু হচ্ছে প্রক্রিয়া। বেজিংয়ে ভারতীয় দূতাবাস সূত্রে এমনটাই জানিয়েছে সংবাদসংস্থা রয়টার্স। চলতি বছরের মার্চ থেকে ভারতীয়দের পুনরায় পর্যটক ভিসা দেওয়া শুরু করেছে চিন। এ বার ভারতের তরফেও একই উদ্যোগ দেখা গেল।

Advertisement

ভারতের এই সিদ্ধান্তের পরে চিনা বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, তারা এটিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসাবেই দেখছে। ভারতের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে উন্নত করতেও তৈরি চিন। বস্তুত, সম্প্রতি ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দু’টি পৃথক কর্মসূচিতে চিনে গিয়েছিলেন। কথা হয়েছে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গেও। এর পরেই ভারতের তরফে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।

২০২০ সালের এপ্রিল থেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) পেরিয়ে পূর্ব লাদাখের বিভিন্ন এলাকায় অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠেছিল চিনা ফৌজের বিরুদ্ধে। উত্তেজনার আবহে ওই বছরের ১৫ জুন গলওয়ানে চিনা হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২০ জন ভারতীয় সেনা। ওই সময় থেকেই ভারত-চিন সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে। তবে গত বছরের অক্টোবরে রাশিয়ায় কাজ়ানে ‘ব্রিক্‌স’-এর পার্শ্ববৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে চিনা প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের আলোচনার পর থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরায় মসৃণ করতে উদ্যোগী হয় দুই দেশ।

Advertisement

বস্তুত, গলওয়ানে সংঘাতের পরে চিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কূটনৈতিক পদক্ষেপ করেছিল ভারত। ওই সময়ে চিনা বিনিয়োগের উপর নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করা-সহ আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ করে ভারত। প্রায় একই সময়ে কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে ভারতীয়-সহ অন্য বিদেশি নাগরিকদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল বেজিং। ওই সময়ে ভারতও বিভিন্ন দেশের পর্যটক ভিসার উপর নিয়ন্ত্রণও জারি করে।

পরে ২০২২ সালে বেজিং নিয়ন্ত্রণ শিথিল করলেও চিনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত ভারতীয় পড়ুয়ারা সেখানে গিয়ে ক্লাস করতে পারছেন না বলে অভিযোগ ওঠে। কারণ চিনের থেকে অনুমতি মিলছিল না। বার বার বিষয়টি নিয়ে ভারতের তরফে উদ্বেগ প্রকাশ করেও ফল হয়নি। সেই কারণে চিনা নাগরিকদের পর্যটক ভিসা দেওয়া স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ভারতও।

পরবর্তী সময়ে চিন ছাত্র ভিসা এবং ব্যবসায়িক কারণে ভিসায় ছাড়পত্র দিলেও ভারতীয় নাগরিকদের জন্য পর্যটক ভিসা বন্ধই রেখেছিল জিনপিং প্রশাসন। চলতি বছরের মে মাসে দু’দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান পরিষেবা আবার চালু হওয়ার পরে ভারতীয়দের পর্যটক ভিসা দেওয়াও শুরু করে বেজিং। চিনের ওই পদক্ষেপের পরে এ বার ভারতও একই পদক্ষেপ করল। বৃহস্পতিবার থেকে চিনা নাগরিকদের জন্য ফের পর্যটক ভিসা দেওয়া শুরু করে দিচ্ছে নয়াদিল্লি।

২০২১ সালের জানুয়ারিতে চুশুল-মলডো পয়েন্টে দুই সেনার কোর কমান্ডার স্তরের বৈঠকে এলএসি-র কিছু এলাকায় ‘মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা সরানো’ (ডিসএনগেজমেন্ট) এবং ‘সেনা সংখ্যা কমানো’র (ডিএসক্যালেশন) বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছিল। কিন্তু প্যাংগং হ্রদ লাগোয়া ফিঙ্গার এরিয়া, উত্তর-পূর্বে ডেপসাং উপত্যকা, দক্ষিণ পূর্ব লাদাখের ডেমচক-সহ বিভিন্ন এলাকা নিয়ে সমস্যা মেটেনি। গত বছরে মোদী-জিনপিং বৈঠকের পর সেই সমস্যা মেটার আভাস মেলে। তার পরে সম্প্রতি আমেরিকা নতুন শুল্কনীতি ঘোষণার পরে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সমীকরণ উন্নত করতে আরও উদ্যোগী হয় বেজিং। সম্প্রতি ভারত থেকে কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রাও শুরু হয়েছে।

ভারত এবং চিনের শক্তির কথা বলতে গিয়ে সাম্প্রতিক কালে বার বার ‘হাতি’ এবং ‘ড্রাগন’-এর উপমা ব্যবহার করেছেন জিনপিং প্রশাসন। বেজিংয়ের কথায়, ‘‘ড্রাগন এবং হাতির মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ড্রাগন আর হাতিকে একসঙ্গে নাচিয়ে দিতে হবে। একে অপরের বিরুদ্ধে কথা না-বলে পরস্পরকে সাহায্য করতে হবে। তাতেই দুই দেশের ফয়দা। যদি এশিয়ার বৃহত্তম দুই অর্থনীতি একজোট হয়, সমগ্র বিশ্বের পক্ষেই তা লাভজনক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement