Congress

রাহুলকে ঘিরে কংগ্রেসের বৈঠকে শোরগোল তুঙ্গে, নাটক প্রকাশ্যেও

রাহুলকে কার্যত চ্যালেঞ্জ করে গুলাম নবি আজাদ বলেন, ‘‘ বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ প্রমাণিত হলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব।’’

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২০ ১৩:৩৫
Share:

কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সনিয়া ও রাহুল— ফাইল চিত্র।

দলের অন্দরে প্রবল টানাপড়েনের মধ্যেই সোমবার বেলা ১১টা থেকে শুরু হয়েছে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক। গোড়াতেই রাহুল গাঁধীর মন্তব্য ঘিরে বৈঠক উত্তপ্ত হয়ে উঠল।

Advertisement

সনিয়া গাঁধী দলের অন্তর্বর্তী সভানেত্রী পদ থেকে অব্যাহতি চাওয়ার পর এই বৈঠকে তাঁর উত্তরসূরি মনোনয়নের বিষয়টিই আজকের বৈঠকের মূল আলোচ্য বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর ছিল। দলের নেতৃত্ব পরিবর্তন চেয়ে ২৩ জন নেতা চিঠি লেখার পরেই সনিয়া দলের শীর্ষ পদে থাকতে অনীহার কথা জানান। কংগ্রেস সূত্রের খবর, আজ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের সূচনাতেই অন্তর্বর্তী সভানেত্রীর পদ থেকে সনিয়া ‘নিষ্কৃতি’ চান। কিন্তু প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ জানিয়ে দেন, সনিয়ার নেতৃত্বের প্রতি দলের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। মনমোহনকে সমর্থন করেন এ কে অ্যান্টনি। কিন্তু সনিয়াকে লেখা রাহুল গাঁধীর একটি চিঠির প্রসঙ্গ ঘিরে দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বৈঠক। নেতৃত্ব পরিবর্তন চেয়ে সনিয়াকে চিঠি লেখা নেতাদের প্রতি বিষোদগার করে রাহুলের অভিযোগ— এঁদের অনেকের সঙ্গেই বিজেপির গোপন আঁতাঁত আছে!

রাহুলের এই মন্তব্যের প্রতিবাদে আজ সরব হন আজাদ ও সিব্বল। সূত্রের খবর, রাহুলকে কার্যত চ্যালেঞ্জ করে আজাদ আজ বলেন, ‘‘ বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ প্রমাণিত হলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব।’’ এমনকি, রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা এবং ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য়পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি! এক ধাপ এগিয়ে সিব্বল বৈঠক চলাকালীনই টুইটারে দলের অন্তর্বিরোধের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। লেখেন, ‘‘রাহুল গাঁধী বলছেন আমাদের সঙ্গে বিজেপির আঁতাঁত রয়েছে। রাজস্থান হাইকোর্টে কংগ্রেসকে রক্ষায় সাফল্য পেয়েছি। মণিপুরে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে দলের লড়াইয়ে সঙ্গ দিয়েছি। গত ৩০ বছর বিজেপির সমর্থনে একটা কথাও বলিনি। তবুও বিজেপির সঙ্গে আমাদের আঁতাঁত!’’ কিছুক্ষণ পরেই অবশ্য টুইটটি তুলে নেন তিনি।

Advertisement

তবে তড়িঘড়ি ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্তকে কংগ্রেস নেতাদের একাংশ ‘দলীয় গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী’ বলে চিহ্নিত করেছেন বলে আজ অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের মতে, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের গঠনতন্ত্রের ১৮(এইচ) ধারা বলছে, অন্তর্বর্তী সভাপতির মেয়াদ সর্বাধিক এক বছর হতে পারে। সনিয়ার ক্ষেত্রে সেই মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছে। যদি সভাপতির মৃত্যু হয় অথবা তিনি ইস্তফা দেন তবে এআইসিসির প্রবীণতম সাধারণ সম্পাদককে অস্থায়ী ভাবে দায়িত্ব দিয়ে স্থায়ী সভাপতি নির্বাচন করতে হবে।

আরও পডুন: পত্র-নাট্যের পর ‘গাঁধীদের চাই’!

সপ্তাহ দু’য়েক আগে বিগত ইউপিএ সরকারের মন্ত্রী, সাংসদ, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মিলিয়ে ২৩ জন কংগ্রেস নেতা সনিয়াকে চিঠি লিখে কার্যত দল পরিচালনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। গুলাম নবি আজাদ, কপিল সিব্বল, আনন্দ শর্মার মতো রাজ্যসভার সাংসদ, শশী তারুর, মণীশ তিওয়ারির মতো লোকসভার সাংসদ, বীরাপ্পা মইলি, রেণুকা চৌধুরীর মতো প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, জিতিন প্রসাদ, মিলিন্দ দেওরার, সন্দীপ দীক্ষিতের মতো তরুণ নেতা, ভূপিন্দ্র সিংহ হুডা, পৃথ্বীরাজ চহ্বাণদের, রাজিন্দর কউর ভট্টলদের মতো প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদের লেখা চিঠির দাবি ছিল, দলে ‘পূর্ণ সময়ের কার্যকরী নেতৃত্ব’ দরকার। এই দলীয় নেতৃত্বকে সব সময় দৃশ্যমান ও সক্রিয় থাকতে হবে। তাঁরাই সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে দল চালাবেন। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে নির্বাচনেরও দাবি তোলেন তাঁরা।

আরও পডুন: প্রয়োজনে সেনা অভিযানে নামব, লাদাখের পরিস্থিতি নিয়ে চিনকে হুঁশিয়ারি রাওয়তের​

রবিবার সেই চিঠি ফাঁস হয়ে যায়। তার পরেই কংগ্রেস সূত্রে জানা যায়, সনিয়াও পাল্টা জানিয়েছেন, তিনি দ্বিতীয়বার সভানেত্রীর পদ গ্রহণে আগ্রহী ছিলেন না। কংগ্রেস নেতাদের অনুরোধ-উপরোধেই গত বছর ১০ অগস্ট তিনি অন্তর্বর্তী সভানেত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন। নতুন সভাপতি দ্রুত ঠিক করতে হবে বলে শর্তও দিয়েছিলেন। ২৩ সাংসদের চিঠির খবর প্রকাশ্যে আসতেই ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ, অশোক গহলৌত, ভূপেশ বঘেলের মতো মুখ্যমন্ত্রী, লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী এবং এম রামচন্দ্রন, সিদ্দারামাইয়া, ডি কে শিবকুমার, কুমারী শেলজার মতো নেতা-নেত্রীরা সনিয়া-রাহুলকে চিঠি লিখে জানিয়ে দেন, সনিয়ার নেতৃত্বেই তাঁদের আস্থা রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন