Supreme Court

নগদকাণ্ডের পর এ বার আর এক বিচারপতির যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন! শীর্ষ আদালতের নির্দেশ: ফৌজদারি মামলা আর শুনতে দেওয়া যাবে না

হাই কোর্টের বিচারপতির নির্দেশে অসন্তুষ্ট সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, “কখনও কখনও আমরা ভাবি, এই ধরনের নির্দেশগুলি দেওয়ার সময় কি কোনও বহিরাগত প্রভাব বিবেচনা করা হয়, না কি শুধুই আইনের তোয়াক্কা না করার ফল। যেটাই হোক, এই ধরনের অযৌক্তিক এবং ভুল নির্দেশ দেওয়া ক্ষমার অযোগ্য।”

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৫ ১৭:২২
Share:

ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতির ভূমিকায় অসন্তুষ্ট সুপ্রিম কোর্ট। —প্রতীকী চিত্র।

ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মাকে ঘিরে বিতর্কের মাঝেই এ বার আরও এক বিচারপতিকে নিয়ে প্রশ্ন তুলল খোদ সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি বর্মার নাম জড়িয়েছে ‘নগদকাণ্ডে’। এ বার এক বিচারপতির যোগ্যতা নিয়েই সংশয় প্রকাশ করল সুপ্রিম কোর্ট। তিনিও ইলাহাবাদ হাই কোর্টেরই বিচারপতি। বাকি কর্মজীবনে ওই বিচারপতিকে আর কোনও ফৌজদারি মামলা শুনতে দেওয়া যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সাম্প্রতিক অতীতে সুপ্রিম কোর্টের এমন নির্দেশ কার্যত নজিরবিহীন।

Advertisement

ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি প্রশান্ত কুমার সম্প্রতি এক দেওয়ানি মামলায় ফৌজদারি প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমতি দিয়েছিলেন। বিচারপতির এমন সিদ্ধান্তে বিস্মিত সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, হাই কোর্টের বিচারপতির ওই নির্দেশ তাঁদের দেখা সবচেয়ে খারাপ এবং ভুল নির্দেশের মধ্যে একটি। বিচারপতি কুমারের ফৌজদারি মামলা শোনার যোগ্যতা রয়েছে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, যত দিন বিচারপতি কুমার কর্মরত থাকবেন, তাঁকে কোনও ফৌজদারি মামলা দেওয়া যাবে না। তিনি ডিভিশন বেঞ্চে বসলে, তখনও তাঁর সঙ্গে হাই কোর্টের কোনও অভিজ্ঞ বিচারপতিকে রাখতে হবে।

হাই কোর্টের ওই বিচারপতির ভূমিকায় অসন্তুষ্ট সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য, “তিনি শুধু আত্মমর্যাদাই নষ্ট করেননি, বিচারব্যবস্থাকেও হাস্যাস্পদ করে তুলেছেন।” শীর্ষ আদালত বিস্ময় প্রকাশ করে বলে, “দেশের বিচারব্যবস্থায় হাই কোর্ট স্তরে কী খামতি থেকে যাচ্ছে, তা আমরা বুঝে উঠতে পারছি না। কখনও কখনও আমরা ভাবি, এই ধরনের নির্দেশগুলি দেওয়ার সময় কি কোনও বহিরাগত প্রভাব বিবেচনা করা হয়, না কি শুধুই আইনের তোয়াক্কা না করার ফল। যা-ই হোক, এই ধরনের অযৌক্তিক এবং ভুল নির্দেশ দেওয়া ক্ষমার অযোগ্য।”

Advertisement

ইলাহাবাদ হাই কোর্টের মূল মামলাটি ছিল দুই ব্যবসায়ীর আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত। বিক্রেতা ৫২ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকার পণ্য সরবরাহ করেছিলেন। কিন্তু পেয়েছিলেন ৪৭ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। বাকি টাকা পাচ্ছিলেন না। তা নিয়ে ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়। ওই ফৌজদারি মামলা খারিজের জন্য হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন দ্বিতীয় ব্যবসায়ী। কিন্তু বিচারপতি কুমার ফৌজদারি মামলায় অনুমতি দেন। হাই কোর্টের বিচারপতির বক্তব্য ছিল, দেওয়ানি মামলায় বছরের পর বছর লেগে যায়। অভিযোগকারীর যা আর্থিক অবস্থা, তাতে তিনি দেওয়ানি মামলা চালিয়ে যাওয়ার পরিস্থিতিতে নেই। হাই কোর্টের বিচারপতির এমন সিদ্ধান্তে স্তম্ভিত সুপ্রিম কোর্ট।

একক বেঞ্চ যে নির্দেশ দিয়েছিল তা খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ওই মামলা হাই কোর্টের অন্য কোনও বিচারপতির বেঞ্চে পাঠানোর জন্যও বলা হয়েছে। সংবাদপত্র ‘টাইম্‌স অব ইন্ডিয়া’ অনুসারে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, “হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে অবিলম্বে ওই বিচারপতিকে ফৌজদারি মামলা থেকে সরিয়ে দিতে হবে। তিনি ডিভিশন বেঞ্চে বসলে, অন্য কোনও অভিজ্ঞ বিচারপতিকে সঙ্গে থাকতে হবে। তিনি যত দিন কর্মরত থাকবেন, তাঁকে যেন কোনও ফৌজদারি মামলা দেওয়া না হয়।”

‘নগদকাণ্ডে’ নাম জড়ানো বিচারপতি বর্মাকে ঘিরে বিতর্কের মাঝে হাই কোর্টের আরও এক বিচারপতিকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের এই মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ‘নগদকাণ্ড’ বিতর্কের আবহে বিচারব্যবস্থা নিয়ে জনমানসে আস্থা ফেরাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ করেছে শীর্ষ আদালত। তার মধ্যে অন্যতম সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সম্পত্তির হিসাব প্রকাশ্যে আনার সিদ্ধান্ত। এই আবহে বিচারপতি কুমার প্রসঙ্গেও কড়া নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement