গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ভারতে শিশু দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়া ‘কষ্টকর ও হতাশাজনক’ বলে মেনে নিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে ওই সংক্রান্ত জটিল ও সময়সাপেক্ষ আইনি প্রক্রিয়া সরল করার কথা পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে বিচারপতি বিভি নাগারত্ন এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ। এ বিষয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আবেদনের ন্যায্যতা কার্যত মেনে নিয়েছে শীর্ষ আদালত।
২০২২ সালে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শীর্ষ আদালতে শিশু দত্তক নেওয়ার দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ করার জন্য আবেদন জানিয়েছিল। তাদের দাবি ছিল, ভারতে ‘সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটি’-র অধীনে একটি সন্তান দত্তক নেওয়ার জন্য তিন থেকে চার বছর সময় লেগে যায়, অথচ লক্ষ লক্ষ শিশু অপেক্ষায় থাকে। অভিযোগের ভিত্তিতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রধান পীযূষ সাক্সেনাকে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট তৈরি করতে বলেছিল শীর্ষ আদালত। সেই রিপোর্টেও ওই অভিযোগই উঠে এসেছিল।
এর পরে ২০২৩ সালে ওই মামলার শুনানিতে সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির তরফে সুপ্রিম কোর্টকে বলা হয়েছিল, প্রতি বছর দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার শেষে ভারতে গড়ে ৪,০০০ শিশুকে দত্তক নেওয়া হয় (সরকারি তথ্য জানাচ্ছে, দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যা ৪৫০০) । অন্য দিকে, অনাথ শিশুর সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। আবেদনকারী পক্ষের অভিযোগ ছিল, এই পরিস্থিতিতে বহু সন্তানহীন দম্পত্তি দত্তক নেওয়ার জন্য আবেদন করে দীর্ঘ দিন ধরে প্রতীক্ষা করছেন। অন্য দিকে, বহু অনাথ শিশু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ‘ঘর’ পাচ্ছে না।
এর পরে দত্তক নেওয়ার আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ দত্তক নেওয়ার আইনি প্রক্রিয়া দ্রুততর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রকে। প্রসঙ্গত, ভারতে, দত্তক গ্রহণ সংক্রান্ত নিয়মাবলি মূলত ‘হিন্দু দত্তক গ্রহণ ও ভরণপোষণ আইন ১৯৫৬’ এবং ‘শিশু সুরক্ষা আইন ২০০০’ দ্বারা পরিচালিত হয়। সুপ্রিম কোর্ট অতীতেও এই আইনগুলির ব্যাখ্যা এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দত্তক গ্রহণের বৈধতা, পদ্ধতি এবং শিশুদের অধিকার সুরক্ষার বিষয়ে একাধিক রায় দিয়েছে।
এই মামলায় সরকারপক্ষের যুক্তি ছিল, একটি শিশুকে কোনও পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার আগে কঠোর ভাবে বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখা হয়। আর্থিক ভাবে কতটা সচ্ছল সেই পরিবার, সে দিকেও জোর দেওয়া হয়। যাঁরা দত্তক নিচ্ছেন, তাঁদের শংসাপত্রগুলি বৈধ কি না, তা-ও খুঁটিয়ে দেখার কথা। সরকারের দাবি, এই সব বিষয়ে নিশ্চিত করতেই অনেকটা সময় চলে যাচ্ছে। কিন্তু শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়ে কোনও রকম ঝুঁকি নিতে চায় না সরকার। দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, যে দম্পত্তি সন্তানহীনতার যন্ত্রণা উপশম করতে দত্তক নেওয়ার জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষা করছেন, তাঁদের কাছে এমন দীর্ঘসূত্রিতা অসহনীয়। পাশাপাশি, ভারতে সন্তান দত্তক নিতে গড়ে সাড়ে তিন বছর সময় লাগে কেন সে প্রশ্ন তুলে শীর্ষ আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছে, ‘‘এত দীর্ঘ প্রতীক্ষা কাঙ্ক্ষিত নয়। সময় কমাতে হবে। দত্তক নেওয়ার জন্য এখনও ৩৬ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়ে রয়েছে।’’