পণের দাবিতে অত্যাচারের মামলা খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
শ্বশুরবাড়িতে হেনস্থা (বৈবাহিক নিষ্ঠুরতা)-র অভিযোগগুলি গুরুত্ব দিয়ে যাচাই করা উচিত। আদালতগুলিকে এই ধরনের অভিযোগ সাবধানে এবং বাস্তবসম্মত উপায়ে বিশ্লেষণ করতে হবে, যাতে ন্যায়বিচারের নামে বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহার না-হয়। বৈবাহিক নিষ্ঠুরতা সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিতে এমনটাই জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
পণের দাবিতে স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকেরা বধূর উপর অত্যাচার চালাতেন বলে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন উত্তরপ্রদেশের এক বধূ। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পণপ্রথা প্রতিরোধ আইন এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় এফআইআর রুজু হয় স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে। ওই এফআইআর খারিজের দাবিতে প্রথমে এলাহাবাদ হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিযুক্ত স্বামী। কিন্তু সেই আর্জি খারিজ হয়ে যাওয়ায় তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। বুধবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চে মামলাটির শুনানি ছিল।
দুই বিচারপতির বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, বৈবাহিক নিষ্ঠুরতার অভিযোগে ফৌজদারি মামলার জন্য হেনস্থার সুনির্দিষ্ট বিবরণ প্রয়োজন। তা ছাড়া কিছু অস্পষ্ট এবং সাধারণ অভিযোগ এই ধরনের মামলার জন্য যথেষ্ট নয়। সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য, “আদালতগুলির উচিত এই ধরনের অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে এবং সাবধানে বিশ্লেষণ করা। বৈবাহিক কলহের মামলা শোনার সময় অবশ্যই তা বাস্তবসম্মত ভাবে বিবেচনা করতে হবে। বিচারব্যবস্থা এবং আইনের যেন অপব্যবহার না হয়।”
এই মামলার ক্ষেত্রে অভিযোগকারী মহিলার দাবি, স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাঁকে ধারাবাহিক ভাবে হয়রান করে গিয়েছেন। এর ফলে তাঁর মস্তিষ্কের একটি শিরা ফেটে তাঁর ডান হাত এবং ডান পা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, মহিলা ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোনও সুনির্দিষ্ট বিবরণ দিতে পারেননি। সেই কারণে ওই মামলা খারিজের নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, বৈবাহিক নিষ্ঠুরতা এবং হেনস্থার অভিযোগের ক্ষেত্রে সাধারণত একাধিক অপরাধমূলক কাজকর্ম (সিরিজ়) জড়িত থাকে। ওই ঘটনাগুলিকে নির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করে অভিযোগকারী তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে পারেন। নির্দিষ্ট বিবরণের উল্লেখ না-থাকলে, অস্পষ্ট কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে ফৌজদারি মামলা চালানো যায় না। এই ধরনের মামলাগুলি যাচাই করার সময় আদালতকে আরও সতর্ক থাকা উচিত বলেই মনে করছে সুপ্রিম কোর্ট।