Grand Master Shifuji

দেশাত্মবোধের সুড়সুড়ি দিয়ে বোকা বানাচ্ছিলেন শিফুজি শৌর্য ভরদ্বাজ?

কয়েক লক্ষ ছাড়িয়ে যায় তার একেকটি ভিডিয়োর ভিউয়ার। কিন্তু এত দেশ প্রেমের ফুলঝুরি ছোটে যার কথায়, তারই পরিচিতি নিয়ে ছড়াল বিভ্রান্তি। সামনে চলে এল তার আসল সত্য। ভারতীয় সেনার তরফে পরিষ্কার জানানো হল যে ভারতীয় সেনার সঙ্গে কোনও দিনই কোনও সম্পর্ক ছিলনা পুনে নিবাসী এই ব্যক্তির।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

পুনে শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৫:৩০
Share:

দেশাত্মবোধের আওয়াজ তুলে বোকা বানাচ্ছিলেন এই ব্যক্তিই। ছবি: টুইটার

তার বক্তৃতা শুনলে রক্ত গরম হয়ে যায়। দেশাত্মবোধের পারদ চড়তে থাকে তুমুল বেগে। সীমান্তে জঙ্গি হামলা কিংবা সেনাদের আগ্রাসন, বরাবর দেশের প্রতি ভারতীয় জওয়ানদের দায়বদ্ধতার কথা শোনা যায় তার মুখে। তাই জনপ্রিয়তায় তিনি পাল্লা দিতে পারেন যে কোনও সেলিব্রিটির সঙ্গে। তিনি গ্র্যান্ডমাস্টার শিফুজি শৌর্য ভরদ্বাজ। উগ্র দেশাত্মবোধ যার ঠোঁটের গোড়ায়। প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ তাকে ‘ফলো’ করেন ফেসবুকে। ইনস্টাগ্রামে সংখ্যাটা ৪ লক্ষ ৫০ হাজার। তবে তার থেকেও তুমুল জনপ্রিয় তিনি ইউটিউবে। প্রায় ২০ লক্ষ ব্যবহারকারী তার নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রেখেছেন তার চ্যানেলটি। কয়েক লক্ষ ছাড়িয়ে যায় তার একেকটি ভিডিয়োর ভিউয়ার। কিন্তু এত দেশপ্রেমের ফুলঝুরি ছোটে যার কথায়, তারই পরিচিতি নিয়ে ছড়াল বিভ্রান্তি। অবসরপ্রাপ্ত সেনাদের একটি সংগঠন দাবি করেছে, ভারতীয় সেনার সঙ্গে কোনও দিনই কোনও সম্পর্ক ছিল না পুণার বাসিন্দা এই ব্যক্তির।

Advertisement

একের পর এক ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার কারণে সংবাদমাধ্যমেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এই ব্যক্তি। নিজের পরিচয় দিতেন প্রথম সারির সেনা অফিসার হিসেবে। কখনও মার্কোস ব্যাজ, কখনও মেরুন রঙের টুপি পরে ক্যামেরার সামনে নিজের বক্তব্য রাখতেন তিনি। সেনার সঙ্গে নিজের সম্পর্ক বোঝাতে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পেজেও সেনা অফিসার বলে পরিচয় দিতেন নিজের। দাবি করতেন মধ্যপ্রদেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর তিনিই। এ ছাড়াও দাবি করতেন, সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পরে নানা সময়ে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। কাজ করেছেন বিভিন্ন বলিউড তারকাদের ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক হিসেবেও। সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকার অনুযায়ী তাঁর অভিজ্ঞতা ৪৪ বছরের! এর মধ্যে সেনাবাহিনীতেই কাজ করেছেন ২৯ বছর! মহিলাদের জন্য আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন নাকি প্রায় ১৫ বছর ধরে।

গুজরাতের অভিষেক শুক্ল নামের এক ব্যক্তি সামনে আনেন এই শিফুজির আসল ছবিটা। একের পর এক ভিডিয়ো প্রকাশ করে এই ব্যক্তির মুখোশ খুলে দেন তিনি। তার পর শিফুজি নিজেই স্বীকার করেন যে ভারতীয় সেনার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই তাঁর। তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকেও সেনাবাহিনী সম্পর্কিত পরিচয় মুছে ফেলা হয়েছে সব। আনন্দবাজার ডিজিটাল শিফুজির প্রকৃত পরিচয় যাচাই করেনি।

Advertisement

শিফুজির সোশ্যাল মিডিয়া পেজ থেকে

আরও পড়ুন:জরদারি, ভুয়ো খবর আর গুজব ছড়ানোয় শীর্ষে ভারত, বলছে মাইক্রোসফটের রিপোর্ট

সার্জিকাল স্ট্রাইক বা পুলওয়ামা কাণ্ড, বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে বিশেষজ্ঞের ভূমিকায় বহুবার দেখা গিয়েছে তাকে। সেনার সঙ্গে জড়িত থাকার পরিচয়ে একাধিক বলিউড তারকার সঙ্গেও সুসম্পর্ক তাঁর। কিন্তু সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলেও সেনার পোশাক পরে বিভিন্ন ছবি বা ভিডিয়ো পোস্ট করবার কারণে, শিফুজির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন উত্তরপ্রদেশের এক প্রাক্তন মেজর। উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন সেনাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে মেজর আশিস চতুর্বেদী মহারাষ্ট্র পুলিশের কাছে এক লিখিত অভিযোগে জানান যে শিফুজি শৌর্য ভরদ্বাজ সেনাবাহিনীর সদস্য না হয়েও কী করে সেনার পোশাক পরেন? কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন সেনাবাহিনীর পোশাক পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি বা ভিডিয়ো পোস্ট করার বিরুদ্ধেও।

মহারাষ্ট্র পুলিশে জানানো অভিযোগপত্র

আরও পড়ুন: ‘ঘুষ’ দিয়ে কৃষকদের ভোট কিনছেন প্রধানমন্ত্রী, মোদীকে কটাক্ষ চিদম্বরমের

তবে থেমে নেই শিফুজিও। নিজের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করছেন বলেই ধারণা একাংশের। শিফুজির দেশপ্রেমকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁর সমর্থকেরা। তবে এ ভাবে শিফুজিকে দমানো যাবে না বলছেন তারা। কিন্তু কেন শিফুজি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে তাঁর প্রচুর ভিডিয়ো বা ছবি মুছে দিলেন, সেই নিয়ে কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন