(বাঁ দিকে) তিপ্রামথা প্রধান প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ত্রিপুরার নতুন বিধায়ক হস্টেলের মধ্যেই আক্রান্ত হলেন সরকারের শরিক তিপ্রামথার বিধায়ক। কাঞ্চনপুরের বিধায়ক ফিলিপকুমার রিয়াং শাসকদল বিজেপির বিরুদ্ধেই হামলার অভিযোগ জানিয়েছেন। লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন আগরতলার এনসিসি থানাতেও। পাশাপাশি তিপ্রামথার পরিষদীয় দল দেখা করে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার সঙ্গেও। মথার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন যে, এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত হবে। ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আগরতলার নিউ কমপ্লেক্সে ত্রিপুরা সরকারের সচিবালয়। সেই চৌহদ্দিতেই রয়েছে বিধানসভা ভবন, হাই কোর্টের বিচারপতির বাংলো। লাগোয়া এলাকাতেই তৈরি হয়েছে বিধায়কদের নতুন হস্টেল। সোমবার রাতে সেই বিধায়ক হস্টেলের মধ্যেই হামলার মুখে পড়তে হয় মথা বিধায়ক ফিলিপকে। কাঞ্চনপুরের মথা বিধায়ক ফিলিপ বলেন, ‘‘গত বেশ কয়েক দিন ধরে আমার এক অসুস্থ দাদা আমার কাছেই রয়েছেন। সোমবার রাতে আমার আর এক ভাই দেখা করতে এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গেই কথা বলছিলাম ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে। সেই সময়েই কয়েক জন নানা ভাবে বিঘ্ন ঘটান। এর পরেই তাঁদের সঙ্গে আরও কয়েক জন জুটে যান। তাঁরা অকথ্য গালিগালাজ শুরু করেন। আমাকে ধাক্কাও দেওয়া হয়।’’
পুলিশে দায়ের করা অভিযোগপত্রে ফিলিপ লিখেছেন, আক্রমণকারীরা তাঁকে হুমকি দেন, বেশি বাড়াবাড়ি করলে এক ফোনে বিজেপির ৪০০-৫০০ লোক তাঁরা ডেকে আনবেন। প্রাণে মারারও হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার অভিযোগ দায়ের করেছেন ফিলিপ। আনন্দবাজার ডট কমকে তিনি ফোনে বলেন, ‘‘আমি সেই সময়ে জানতাম না আক্রমণকারীদের মধ্যে কারা ছিলেন। পরে জেনেছি।’’ ফলে তিনি নির্দিষ্ট কারও নামে অভিযোগ দায়ের করেননি।
গোটা ঘটনায় নাম জড়িয়েছে বিজেপির এক প্রাক্তন মন্ত্রীর পুত্রের। এর আগে একাধিক উচ্ছৃঙ্খলতার ঘটনায় তাঁর নাম জড়িয়েছে ত্রিপুরায়। তবে বিধায়ক হস্টেলে এ হেন ঘটনা সেখানকার নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। মথার আরও অভিযোগ, এক বিজেপি বিধায়কের অতিথি হয়েই হস্টেলে পৌঁছেছিলেন আক্রমণকারীরা।
২০২৩ সালে ত্রিপুরার ভোটের পরে মথা প্রধান বিরোধী দল হলেও পরে তারা সরকারের শরিক হয়ে যায়। ফলে বিরোধী দল হয় সিপিএম। শরিক বিধায়কের উপর বিজেপির লোকজনের এ হেন হামলার ঘটনায় অস্বস্তিতে পদ্মশিবিরও। ত্রিপুরা বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মথার বিধায়কেরা দেখা করেছেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তিপ্রামথার প্রধান প্রদ্যোৎকিশোর দেববর্মন বলেন, ‘‘এই ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। এর বেশি আমি এখন কিছু বলতে চাই না।’’
উল্লেখ্য, আগামী ডিসেম্বরে ত্রিপুরার জনজাতি অধ্যুষিত এলাকার স্থানীয় প্রশাসন স্বশাসিত জেলা পরিষদের (এডিসি) ভোট রয়েছে। পাঁচ বছর আগে এই ভোটের আগেই তৈরি হওয়া মথা একক শক্তিতে এডিসি দখল করেছিল। সরকারে বিজেপি-মথা শরিক হলেও এডিসি ভোটে দুই দলের সমীকরণ কী হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তার মধ্যেই বিধায়ক হস্টেলের এই ঘটনা ত্রিপুরার রাজনীতিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।