Road Accidents in India

দেশে প্রতি তিন মিনিটে গড়ে এক জন পথ দুর্ঘটনার বলি হন! মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে কত জনের মৃত্যু, তথ্য জানাল কেন্দ্র

পথ দুর্ঘটনার জেরে ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে রাজধানী দিল্লিতে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বেঙ্গালুরু। এর পরে রয়েছে জয়পুর, কানপুর এবং প্রয়াগরাজ।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:১৪
Share:

পথ দুর্ঘটনা সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করল কেন্দ্র। —ফাইল চিত্র।

‘গোল্ডেন আওয়ার’। পথ দুর্ঘটনার পরের প্রথম এক ঘণ্টাকে বোঝাতে চিকিৎসকেরা এই শব্দবন্ধটিই ব্যবহার করে থাকেন। দুর্ঘটনায় জখমদের প্রাণ বাঁচাতে এই প্রথম এক ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টেও এ নিয়ে কথা হয়েছে। এ বার পথ দুর্ঘটনা সংক্রান্ত কেন্দ্রের এক রিপোর্ট ‘গোল্ডেন আওয়ার’-এর গুরুত্বকে আরও বৃদ্ধি করে দিল। কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের ওই রিপোর্ট অনুসারে, দেশে প্রতি তিন মিনিটে এক জন করে ব্যক্তি পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান।

Advertisement

রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৩ সালে দেশে মোট ৪,৮০,৫৮৩টি পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাতে মৃত্যু হয়েছে ১,৭২,৮৯০ জনের। ২০১৯-২৩ সালের মধ্যে পথ দুর্ঘটনায় কত জনের মৃত্যু হয়েছে, সেই পরিসংখ্যানও তুলে ধরা হয়েছে রিপোর্টে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে পথ দুর্ঘটনা কিছুটা কমেছিল। বস্তুত, ওই সময়ে দেশে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল। তার জেরে একটি দীর্ঘ সময় লকডাউনের কারণে মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েছিলেন। পথ দুর্ঘটনার হার কমে যাওয়া তারই প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ২০২১ সাল থেকে আবার পথ দুর্ঘটনা এবং দুর্ঘটনার জেরে মৃত্যু দুই-ই বৃদ্ধি পেয়েছে।

কেন্দ্রের হিসাব অনুসারে, ২০২৩ সালে দেশে যত পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে ৫,৮৪০টি ঘটেছে রাস্তায় খানাখন্দের জন্য। তাতে মৃত্যু হয়েছে ২,১৬১ জনের। রাস্তার ভুল লেন দিয়ে গাড়ি চালানোর জেরে ২৫,২৪২টি দুর্ঘটনায় ৯,৪৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। জোরে ও বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালানোর জেরে ৩,২৮,৭২৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে গোটা দেশে। তাতে মৃত্যু হয়েছে ১,১৭,৬৮২ জনের। মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর জেরে ৯,১৪৩টি দুর্ঘটনায় ৩,৬৭৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইল ব্যবহার করার জন্য ৭,১২২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাতে মৃত্যু হয়েছে ২,৮৮৪ জনের। সিগন্যাল ভাঙার জেরে ২,৪৪০টি দুর্ঘটনায় ৮১৮জন প্রাণ হারিয়েছেন।

Advertisement

তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে দেশে পথ দুর্ঘটনার জেরে মৃত্যু প্রায় আড়াই শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্ঘটনায় জখমের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় সাড়ে চার শতাংশ। জোরে বা বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালানোর ফলে দুর্ঘটনায় মৃত্যু সবচেয়ে বেশি হয়েছে। দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যুর প্রায় ৬৮ শতাংশের নেপথ্যেই রয়েছে জোরে গাড়ি চালানো। রাস্তায় খানাখন্দ অন্যতম উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশে। রাস্তায় খানাখন্দের জন্য দুর্ঘটনার জেরে উত্তরপ্রদেশে ২০২৩ সালে ১,৩২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মধ্যপ্রদেশেও একই কারণে প্রাণ হারিয়েছেন ১৭৭ জন। সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে পথ দুর্ঘটনায় যত মৃত্যু হয়েছে, তার প্রায় ৪৫ শতাংশ (৭৭,৫৩৯ জনের) মৃত্যুর সঙ্গে বাইক বা স্কুটারের যোগ রয়েছে। এর মধ্যে হেলমেট না-পরায় মৃত্যু হয়েছে ৫৪,৫৬৮ জনের। এ ছাড়া গাড়ির সিট বেল্ট না-লাগানোর জন্যও ১৬ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে ২০১৯ সাল থেকে ২০২০ সালে পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা কমেছিল। তবে তার পরে আবার সংখ্যাটি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে রাজ্যে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে পথ দুর্ঘটনা এবং তার জেরে মৃত্যু সামান্যই বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে এ রাজ্যে ১৩,৬৮৬টি দুর্ঘটনায় ৬,০০২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তার পরের বছরে, ২০২৩ সালে মোট ১৩,৭৯৫টি পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাতে মৃত্যু হয়েছে ৬,০২৭ জনের। গড় হিসাবে ২০২৩ সালে রাজ্যে প্রতিদিন ১৬ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ রাজ্যে শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে পথ দুর্ঘটনার হার দ্বিগুণেরও বেশি। যদিও পথ দুর্ঘটনা বা পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর দিক থেকে দেশের প্রথম দশ রাজ্যের তালিকায় নেই পশ্চিমবঙ্গ।

২০২৩ সালে পশ্চিমবঙ্গে রাস্তায় খানাখন্দের জেরে ৪১টি দুর্ঘটনায় ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর জেরে ৮১টি দুর্ঘটনায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। গাড়ি চালানোর সময়ে মোবাইল ব্যবহার করায় ১৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাতে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। সিগন্যাল ভাঙার কারণে ২৬টি দুর্ঘটনায় ৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। রাস্তার ভুল লেন দিয়ে গাড়ি চালানোর জেরে ৬৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাতে মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের। এ ছাড়া জোরে বা বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালানোর জন্য ৩,৭৬৪টি দুর্ঘটনায় ১,৭৮৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গে ওই বছরে যত দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তার মধ্যে প্রায় দু’হাজারটি ঘটেছিল কলকাতাতেই। কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে কলকাতায় ১,৯৯৪টি পথ দুর্ঘটনায় ১৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। দেশের বড় শহরগুলির মধ্যে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর দিক থেকে কলকাতা ছিল ৪৪তম স্থানে। পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর নিরিখে ওই বছর প্রথম স্থানে ছিল নয়াদিল্লি। সেখানে ৫,৮৩৮টি দুর্ঘটনায় ১,৪৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। দ্বিতীয় স্থানে ছিল বেঙ্গালুরু। সেখানে ৪,৯৭৪টি পথ দুর্ঘটনায় ৯১৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর দিক থেকে তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম স্থানে ছিল জয়পুর, কানপুর এবং প্রয়াগরাজ। এ ছাড়া মুম্বইয়ে ২,৫৩৩টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ৩৮৪ জন। চেন্নাইয়ে ৩,৬৫৩টি পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ৫০৩ জনের।

২০২৩ সালে পথ দুর্ঘটনার নিরিখে দেশের প্রথম ১০ রাজ্যের তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ নেই। পথ দুর্ঘটনার নিরিখে ওই বছর পশ্চিমবঙ্গ ছিল একাদশ স্থানে। পথ দুর্ঘটনার মৃত্যুর নিরিখে ছিল দ্বাদশ স্থানে। ওই বছরে সবচেয়ে বেশি (৬৭,২১৩ টি) দুর্ঘটনা ঘটেছিল তামিলনাড়ুতে। এর পরেই ছিল মধ্যপ্রদেশ, কেরল, উত্তরপ্রদেশ এবং কর্নাটক। পথ দুর্ঘটনায় ওই বছরে সবচেয়ে বেশি (২৩,৬৫২ জনের) মৃত্যু হয়েছিল উত্তরপ্রদেশে। দ্বিতীয় স্থানে ছিল তামিলনাড়ু। এর পরে তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম স্থানে ছিল মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ এবং কর্নাটক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement