কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।
‘হিন্দি আগ্রাসন’ নিয়ে বিতর্কের আবহে এ বার সব ভারতীয় ভাষাকে সম্মানের কথা বললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। একই সঙ্গে এ-ও জানিয়ে রাখলেন, গত এক দশকে সরকারি কাজে হিন্দি ভাষার ব্যবহারে ধারাবাহিক ভাবে উৎসাহ দিয়ে আসা হচ্ছে। অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলির উপর জোর করে হিন্দি ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে সাম্প্রতিক সময়ে বার বার অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় রবিবার ‘হিন্দি দিবস’-এর অনুষ্ঠানে শাহের এই মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
হিন্দি-সহ সব ভারতীয় ভাষাকে সম্মান করার কথা উল্লেখ করে শাহ বলেন, “আমি সবসময় বলি কোনও ভারতীয় ভাষার সঙ্গে কখনওই হিন্দি ভাষার কোনও বিরোধ বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। হিন্দি অন্য ভারতীয় ভাষার বন্ধু। এগুলির মধ্যে কোনও সংঘাত নেই।” কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায়, ভারত ভাষাকেন্দ্রিক দেশ। বিভিন্ন ভারতীয় ভাষাগুলি একে অন্যের সঙ্গী হয়ে ঐক্যের সুতোয় আবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে এগিয়ে যায় বলে ওই অনুষ্ঠানে জানান শাহ। কথা প্রসঙ্গে, অসমের বিহু, পশ্চিমবঙ্গের বাউল, পঞ্জাবের লহরির মতো বিভিন্ন আঞ্চলিক লোকসঙ্গীতের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
দেশের সব ভাষাকে একসঙ্গে নিয়ে চলার কথা বললেও শাহ নিজেই এ-ও জানান, গত এক দশক ধরে সরকারি কাজে হিন্দি ভাষার চলে জোর দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, “২০১৪ সাল থেকে সরকারি কাজে হিন্দির ব্যবহারে ধারাবাহিক ভাবে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।” বস্তুত, ওই বছর থেকেই কেন্দ্রের দায়িত্বে রয়েছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার।
কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ‘হিন্দি আগ্রাসন’-এর অভিযোগ তুলে ধারাবাহিক ভাবে সুর চড়িয়ে আসছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। তাঁর বক্তব্য, হিন্দি ভাষা নিয়ে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু দক্ষিণী রাজ্যগুলির উপর জোর করে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্ট্যালিনের অভিযোগ, উত্তর ভারতের বিভিন্ন ভাষাকে দৃশ্যত গ্রাস করেছে হিন্দি ভাষা। উদাহরণ হিসাবে ভোজপুরি, মৈথিলি, অওয়াধি, ব্রজ, বুন্দেলি, গঢ়ওয়ালি, কুমায়ুনি, মগহী, মাড়ওয়ারি, মালভী, ছত্তীসগঢ়ী, সাঁওতালি, অঙ্গিকা, হো, খড়িয়া, খোরঠা, কুড়মালি, কুরুখ, মুন্ডারী এবং আরও অনেক ভাষার কথা বার বার তুলে ধরতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। স্ট্যালিনের অভিযোগ, এই ভাষাগুলি এখন ধুঁকছে। একচেটিয়া হিন্দি চালুর উদ্দেশ্য প্রাচীন মাতৃভাষাকে হত্যা করা বলে দাবি তাঁর।
স্ট্যালিন অতীতে বার বার অভিযোগ করেছেন, উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারের অতীতের ভাষাকে ধ্বংস করে ওই জায়গাগুলিকে ‘হিন্দি হৃদয়পুর’ করে তোলা হয়েছে। তামিলনাড়ুর ক্ষেত্রে যে কেন্দ্রকে কোনও ভাবেই ‘হিন্দি আধিপত্য’ ছড়াতে দেওয়া হবে না, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন ডিএমকে নেতা। ‘হিন্দি আগ্রাসন’-এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের বার্তাও দিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। সম্প্রতি ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বিতর্কেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীকে। সমাজমাধ্যমে স্ট্যালিন লেখেন, “এটা এমন একটি ভাষার উপর সরাসরি আক্রমণ, যে ভাষায় দেশের জাতীয় সঙ্গীত লেখা হয়েছিল।” তিনি আরও লেখেন, “অহিন্দি ভাষার উপর আক্রমণের জবাবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের হয়ে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন সম্মাননীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিদি।”