—প্রতীকী চিত্র।
প্রাক্তন প্রেমিকার চার বছরের কন্যাকে ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলেন ২৫ বছরের যুবক। গত বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশের ফিরোজ়াবাদ নিম্ন আদালত ওই শাস্তি ঘোষণা করে।
আদালত সূত্রে খবর, ঘটনাটি ঘটে গত ৬ জুলাই। নির্যাতিতার বাড়িতে প্রায়শই যাতায়াত ছিল অভিযুক্তের। তাঁরা প্রতিবেশী। সে দিনও তিনি আত্মীয়ার বাড়িতে গিয়েছিলেন। মেয়েটির মা ঘুমিয়ে পড়ার পরে তাঁর চার বছরের কন্যাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে বাইরে বার হন যুবক। চকোলেট, আইসক্রিম খাওয়ানোর নাম করে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে শিশুটিকে যৌন হেনস্থা করেন তিনি।
ঘুম থেকে উঠে মেয়েকে দেখতে না পেয়ে খোঁজ শুরু করেন মা। কোথাও মেয়েকে না পেয়ে প্রাক্তন প্রেমিক তথা আত্মীয়ের বাড়িতে খোঁজ করতে যান তিনি। মেয়েকে প্রাক্তন প্রেমিকের ঘরে পান যুবতী। কিন্তু রক্তাক্ত অবস্থায়! পুলিশের কাছে তিনি অভিযোগ করেন, মেয়েকে যখন তিনি পান, তার যৌনাঙ্গ দিয়ে রক্তপাত হচ্ছিল। অন্য দিকে, প্রাক্তন প্রেমিককে কোথাও দেখতে পাননি তিনি। তাই মেয়েকে প্রাক্তন প্রেমিকই ধর্ষণ করেছেন বলে থানায় অভিযোগ করেন তিনি।
ছোট্ট মেয়েটিকে প্রথমে নিকটবর্তী সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরে আগরার একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। প্রায় ১০ দিন আইসিইউয়ে ছিল শিশুটি।
পুলিশের তদন্তে উঠে আসে নির্যাতিতার মা এবং অভিযুক্ত একদা একই বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। সেই সূত্রে দুই পরিবারের মধ্যে খুব ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়। দুই যুবক-যুবতীও প্রণয়ঘটিত সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। কিন্তু যুবতীর অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। পরে আবার তাঁরা একই পাড়াতে বসবাস শুরু করেন। সেই সূত্রে অভিযুক্ত এবং নির্যাতিতার বাড়ির মধ্যে আবার যোগাযোগ গড়ে ওঠে। দুই পরিবারের লোকজন একে অপরের বাড়িতে যেতেন। মাঝেমধ্যে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করতেন। কিন্তু প্রাক্তন প্রেমিকার উপর প্রতিশোধ নিতে তাঁর শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করেন যুবক। মেয়েটির পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে যুবকের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) ৬৫(২) ধারা এবং পকসো আইনে মামলা রুজু হয়েছিল। ঘটনার ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে চার্জশিট পেশ করে পুলিশ।
আদালতে অভিযুক্তের আইনজীবী সওয়াল করেন, তাঁর মক্কেলকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে। কারণ, ‘নির্যাতিতা’র বাবা তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে অভিযুক্তের পূর্ব সম্পর্কের কথা জানতে পেরে প্রতিহিংসার বশে মামলা করেছেন। যদিও আদালত ওই দাবি নস্যাৎ করে দেয়। সমস্ত তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে যুবককে। বিচারক মুমতাজ আলির পর্যবেক্ষণ, ‘‘শিশুটির উপর যা হয়েছে তা অমানবিক। অমার্জনীয় অপরাধ করেছেন অভিযুক্ত।’’ পাশাপাশি শিশুটির সাহসের তারিফ করেন বিচারক। তিনি জানান, এমন অত্যাচারের পরেও সে পুলিশকে ছোট ছোট করে পুরো ঘটনার কথা বলেছে। সেখান থেকে পরিষ্কার যে প্রতিবেশী কাকা তাকে যৌন হেনস্থা করেছেন।
আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি এক লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে আদালত। জরিমানার অর্থ সময়মতো দিতে না পারলে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন বিচারক।