কণিষ্ক কাটারিয়া
সংবাদমাধ্যমের সামনে তাঁর একটা কথাই ‘ভাইরাল’! এ শুধু ‘প্রেম করেছি, বেশ করেছি’ নয়, প্রেমের প্রকাশ্য উদযাপনে নতুন মাত্রা দিলেন রাজস্থানের কণিষ্ক কাটারিয়া।
বয়স ছাব্বিশ। ২০১৮ সালের ইউপিএসসি পরীক্ষায় প্রথম স্থানাধিকারী। গত সপ্তাহে পরীক্ষার ফল বেরনোর পরে যিনি বাবা-মা-দিদির পাশাপাশি প্রকাশ্যেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন বান্ধবীকে, পাশে থাকার জন্য। আর বম্বে আইআইটি-র প্রাক্তনী, বিদেশের মোটা টাকার চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে আসা যুবকের এই কথাতেই মজেছেন দেশীয় নেটিজেনরা।
কেউ তাঁর প্রশংসা করে টুইট করছেন, ‘দেশি বাবা-মায়েদের কাছে এটা ভাল উদাহরণ’। কেউ লিখেছেন, ‘আমার দশম শ্রেণির পরীক্ষার তিন দিন আগে বাবার কাছে বেদম মার খেয়েছিলাম। কারণ, বইয়ে লুকনো বান্ধবীর চিঠি বাবার হাতে পড়ে গিয়েছিল’। কেউ এক ধাপ এগিয়ে বলছেন, এমন প্রশাসকই এ দেশে প্রয়োজন ছিল।
নেটিজেনের এ হেন প্রশংসার খবর অবশ্য রাখছেন না কণিষ্ক। জানাচ্ছেন, এত কিছু ভেবে সে দিন প্রেমিকার অবদানকে স্বীকৃতি দেননি। ফোনে বললেন, ‘‘বাবা-মা ছোট থেকেই শিখিয়েছেন, যাঁর যেটুকু কৃতিত্ব প্রাপ্য, তা তাঁকে দিতে। আমার সাফল্যে যাঁরই অবদান রয়েছে, তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে কুণ্ঠা নেই।’’ তবে এই সব হইচইয়ের পর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনায় আপত্তি রয়েছে তাঁর। প্রেমিকাকে নিয়ে বাড়তি কথা বলতেও নারাজ তিনি।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
প্রেমের স্বীকৃতি দিতে পিছিয়ে নেই কণিষ্কের বান্ধবীও। বম্বে আইআইটি-র প্রাক্তনী, টোকিয়োয় কর্মরত ওই তরুণী তাঁর প্রেমিকের ছবি দিয়ে ফেসবুকে লিখেছিলেন— ‘আজকের অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। এটা তোমার প্রাপ্য। অনেক অনেক ভালবাসি। সব রকম পরিস্থিতিতে কণিষ্কের পাশে থেকে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য সেখানে ওই তরুণীকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন বন্ধুরা।
তবে শুধু কণিষ্কই নন। এর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের সম্পর্কের ঘোষণা করেছিলেন ২০১৫ সালের ইউপিএসসি-র প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানাধিকারী— দিল্লির টিনা দাবি এবং কাশ্মীরের আতহর আমির খান। মুসৌরিতে ট্রেনিং নিতে গিয়ে প্রেমে পড়া টিনা ও অতহরের সম্পর্ককে ‘লাভ জিহাদ’ বলে দেগে দেওয়ার চেষ্টা হলেও লাভ হয়নি। উল্টে বিয়ের আগে ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে নিয়মিত নিজেদের ছবি দিতেন টিনা। এক সময়ে অনুষ্কা শর্মাকে ট্রোল করার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন বিরাট কোহালিও। তখন তাঁরা প্রেমিক-প্রেমিকা।
কণিষ্কের এই স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়ে বর্তমানে রাজস্থানের বদনোর মহকুমার সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট আমির ফোনে বলছেন, ‘‘এটা তো একবিংশ শতাব্দী। স্বাভাবিক বিষয়কে প্রকাশ্যে আনতে বাধা কোথায়? লোকে প্রেম-ভালবাসা নিয়ে যত বেশি কথা বলবে, ততই তো ভাল!’’
তবে কি বদলাচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি? সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্রের কথায়, ‘‘যাঁরা কোনও না কোনও ভাবে সফল, তাঁরাই এ ভাবে প্রেমের ঘোষণা করতে পারছেন। পরীক্ষায় ফেল করে কেউ বাড়িতে প্রেমিকার কথা জানানোর সাহস করেন না! তাই সময় লাগবে।’’