ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিও। ছবি: পিটিআই।
আমেরিকার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ভারত। ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পরে এমনটাই জানালেন মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিও। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির জেরে গত কয়েক মাস ধরে নয়াদিল্লি এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। এই চাপানউতরের মাঝেই সোমবার আমেরিকায় বৈঠকে বসেন জয়শঙ্কর এবং রুবিও। দু’দেশের বাণিজ্য নিয়েও আলোচনা হয়েছে জয়শঙ্কর এবং রুবিওর। ট্রাম্পর শুল্কনীতির জেরে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য হোঁচট খেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পরে রুবিওর মন্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
মার্কিন বিদেশ দফতরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারত আমেরিকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে ব্যাখ্যা করেছেন রুবিও। বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, ওষুধ, মূল্যবান খনিজ এবং অন্য ক্ষেত্রগুলিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার বিষয়ে দু’জনের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সোমবার প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বৈঠক জয়শঙ্কর এবং রুবিওর। ওই বৈঠকের পরে জয়শঙ্করও সমাজমাধ্যমে লেখেন, রুবিওর সঙ্গে দেখা করে তাঁর ভাল লেগেছে। দ্বিপাক্ষিক এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের মধ্যে কথাবার্তা হয়েছে বলে জানান বিদেশমন্ত্রী। যদিও কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করেননি জয়শঙ্কর।
ট্রাম্পের শুল্ক-কোপের ধাক্কায় বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে আলোচনা থমকে গিয়েছিল। গত জুলাই মাসে ভারতের উপর প্রথমে ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন ট্রাম্প। এ ছাড়া রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য ভারতের উপর ‘জরিমানা’ বাবদ আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপায় আমেরিকা। তার জেরে ভারতের উপর মোট মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ শতাংশ হয়ে যায়। ভারত ছাড়া এক মাত্র ব্রাজ়িলের উপরেই এমন চড়া হারে শুল্ক চাপিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে ফের মসৃণ করার চেষ্টা শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
গত সপ্তাহেই ভারত থেকে ঘুরে গিয়েছেন আমেরিকার বাণিজ্য আলোচনার প্রতিনিধিদলের প্রধান। ট্রাম্প নিজেও বলেছিলেন, ভারতের পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা আদৌ সহজ ছিল না। শুল্কের জন্য যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরেছে, তা-ও মেনে নিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা কাটানোর জন্য তাঁর প্রশাসন ভারতের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি নিজেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলতে চান, সে কথাও জানিয়েছিলেন ট্রাম্প।
ভারতের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরনও গত সপ্তাহে বলেছিলেন, শুল্ক নিয়ে ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে সমস্যা শীঘ্রই মিটে যেতে পারে। তাঁর কথায়, আগামী ৮-১০ সপ্তাহের মধ্যে শুল্ক-সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে। কূটনৈতিক সমীকরণ নতুন দিকে অগ্রসর হতেই জয়শঙ্কর এবং রুবিওর বৈঠকে বাণিজ্যের প্রসঙ্গ উঠে আসা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।