বক্তা: রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। ছবি: রয়টার্স।
সুরটা আগেই বেঁধে নিয়েছিল ভারত। রাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তানের বক্তৃতার জবাবে প্রতিবেশী দেশকে ‘টেররিস্তান’ বলে খোঁচা দিয়েছিলেন ভারতের শীর্ষ কূটনীতিক এনাম গম্ভীর। আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় বক্তৃতায় বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ নজিরবিহীন ভাষায় আক্রমণ করলেন পাকিস্তানকে। সুষমার বক্তৃতার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইটারে বলেন, ‘‘সুষমাজি স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন কেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়া প্রয়োজন?’’
সন্ত্রাস নিয়ে বক্তৃতার গোড়া থেকেই সুর চড়ান সুষমা। জানান, সন্ত্রাস আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ছে সারা বিশ্বে। তার পরেই নিশানা করেন পাকিস্তানকে। বলেন, ‘‘ভারতের পরিচয় এখন তথ্য প্রযুক্তি শিল্পে প্রথম শ্রেণির দেশ হিসেবে। পাক রাজনীতিকদের ভাবা উচিত তাঁদের দেশ কেন সন্ত্রাস ছড়ানোর কারখানা হিসেবে পরিচিত।’’
ভারতের তুলনা দিয়ে এর পরে কটাক্ষ শুরু করেন বিদেশমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা আইআইটি, আইআইএম, এইমস তৈরি করেছি। পাকিস্তান তৈরি করেছে লস্কর, জইশ-ই-মহম্মদ। আমরা লড়ছি দারিদ্রের সঙ্গে। কিন্তু আমাদের প্রতিবেশীর লড়াইটা যেন শুধু আমাদের সঙ্গেই।’’
আরও পড়ুন:কৌশলী মোদী, দায়িত্ব মন্ত্রীদের
সন্ত্রাসের সংজ্ঞা নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে ঐকমত্য তৈরির উপরেও জোর দিয়েছেন সুষমা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা যদি জঙ্গিদের চিহ্নিত করে তালিকাই না তৈরি করতে পারি তবে একসঙ্গে লড়ব কী ভাবে?’’ বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের মতে, এ ভাবে পরোক্ষে চিনকেও খোঁচা দিয়েছেন তিনি। কারণ, জইশ-ই-মহম্মদ নেতা মাসুদ আজহারকে রাষ্ট্রপুঞ্জে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি বারবার বেজিংয়ের আপত্তিতেই আটকে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপুঞ্জের সভায় পাকিস্তানকে কী বলে খোঁচা দিলেন সুষমা?
সেই সঙ্গে বিদেশমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কাশ্মীর নিয়ে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না। তিনি বলেন, ‘‘আমরা নতুন সার্বিক দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু করেছি। আমাদের সমস্যার মধ্যে কোনও তৃতীয় পক্ষকে দরকার নেই।’’
কূটনীতিকদের মতে, প্রবল পাকিস্তান-বিরোধী সুরের মাধ্যমে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। প্রথমত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাক সন্ত্রাস নিয়ে মুখ খুলেছেন। আফগানিস্তানে ভারতকে পাশে চাইছেন তিনি। তাই ট্রাম্পের দেশে রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে ইসলামাবাদকে প্রবল আক্রমণ করলেন সুষমা। এ ভাবে ট্রাম্পকে ফের পাক সন্ত্রাস-বিরোধী বার্তা দিতে চাইল দিল্লি। দ্বিতীয়ত, দেশে পাক-বিরোধী জিগিরের মাধ্যমে ফের উগ্র জাতীয়তাবাদ উস্কে দিতে চাইছেন মোদী। এই সুর ক্রমে আরও চড়া হবে বলে ধারণা অনেকের।
মোদী সরকারের বিতর্কিত নোটবন্দির সিদ্ধান্ত নিয়েও আজ মুখ খুলেছেন বিদেশমন্ত্রী। রাষ্ট্রপুঞ্জে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘‘নোটবন্দি সাহসী সিদ্ধান্ত। এর ফলে ভারত থেকে কালো টাকা উধাও হয়ে গিয়েছে।’’