(বাঁ দিকে) দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তকে হামলার অভিযোগে ধৃত রাজেশ সাকরিয়া (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তকে মারধরের ঘটনায় ধৃত রাজেশভাই খিমজিভাই সাকরিয়া মানসিক ভাবে ‘অসুস্থ’! এমনই দাবি করলেন তাঁর মা। তিনি জানান, রাজেশ তাঁকে ধরেও মারধর করতেন। সেই কারণে তাঁকে বাড়িছাড়া হতে হয়। তবে কেন রাজেশ দিল্লি গিয়েছেন তা বলতে পারেননি তাঁর মা।
রাজেশ গুজরাতের রাজকোটের বাসিন্দা। বুধবার সকালে তিনি হাজির হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সিভিল লাইন্সের বাসভবনে। প্রতি সপ্তাহের মতো বুধবার সেখানে ‘জনশুনানি’ চলছিল। দিল্লির বাসিন্দাদের অভাব-অভিযোগ শুনছিলেন রেখা। তখনই তাঁর উপর হামলা চালান রাজেশ, এমনই অভিযোগ।
হামলার সঙ্গে সঙ্গেই রাজেশকে ধরে ফেলে উপস্থিত জনতা। তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। কেন রেখাকে আক্রমণ করলেন রাজেশ, তা নিয়ে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে ধৃতের মায়ের দাবি, ‘‘রাজেশের মানসিক সমস্যা ছিল। ওষুধ খেত না। আমাকে ধরেও মারধর করত। সেই কারণে গত ১৫ দিন আমি বাড়ি ফিরিনি। শুধু আমাকে নয়, কোনও কারণে বিরক্ত হলে সবাইকে মারধর করত। ওর মানসিক অবস্থা এমনই হয়ে গিয়েছিল।’’
রাজেশকে গ্রেফতারের পরই তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তদন্তকারীরা। সূত্রের খবর, পুত্রের দিল্লি-যাত্রার সম্পর্কে কিছু জানতেন না ধৃতের মা। তাঁর দাবি, তাঁর পুত্র কুকুরপ্রেমী। পথকুকুরদের নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশে বিরক্ত ছিলেন তিনি। সুপ্রিম-নির্দেশের পর দিল্লি-এনসিআর থেকে কুকুরদের সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর বিষয়ে ক্ষুব্ধ হন রাজেশ। তবে রাজেশ যে দিল্লি যাবেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে পৌঁছে যাবেন— তার কোনও ধারণা ছিল না বলেই দাবি ধৃতের মায়ের।
বুধবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে ছিল সাপ্তাহিক ‘জনশুনানি’। সকাল ৮টা থেকে এই জনকল্যাণমূলক পরিষেবা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ৭টা থেকেই ভিড় করেছিলেন দিল্লিবাসী। সকাল ৮টার সময় মুখ্যমন্ত্রী আসেন ‘জনশুনানি’ শিবিরে। তার পরেই একে একে মানুষ নিজেদের অভাব-অভিযোগ নিয়ে রেখার কাছে যাওয়া শুরু করেন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বিশৃঙ্খলা শুরু হয় সেখানে। আর এই বিশৃঙ্খলার কেন্দ্রে ছিলেন রাজেশ।
বিজেপির দাবি, রেখার বাসভবনে ঢুকে একটি কাগজ দেওয়ার নাম করে মুখ্যমন্ত্রীর দিকে এগিয়ে যান রাজেশ। তার পরে হঠাৎই রেখার চুল টেনে ধরে তাঁকে চড় মারেন ওই যুবক। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ধরে ফেলেন মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীরা। তার পরে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে। বিভিন্ন সূত্রের দাবি, অভিযুক্ত যুবকের কাছে আদালত সম্পর্কিত কিছু নথি পাওয়া গিয়েছে। কোনও কোনও সূত্রে খবর, রেখাকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়। তবে বিজেপির দাবি, এই ঘটনায় রেখার মাথায় চোট লেগেছে। তবে সেই দাবি অস্বীকার করেছে পুলিশ। অন্য একটি সূত্রে দাবি, ৪১ বছর বয়সি রাজেশের এক আত্মীয় কোনও এক মামলায় গ্রেফতার হয়ে তিহাড় জেলে বন্দি। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। সেই আত্মীয়ের মুক্তির দাবি নিয়েই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যান রাজেশ। তবে ঠিক কী ঘটেছিল, কেন রেখাকে মারধর করলেন রাজেশ— সব দিক খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পাশাপাশি, এই হামলার নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।