এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে জ্বালানির সুইচ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
জ্বালানির সুইচ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটিতে। রানওয়ে ছাড়ার পর বিমানের ইঞ্জিনে আর জ্বালানি পৌঁছোয়নি। যার ফলাফল ৩২ সেকেন্ডের মধ্যে যাত্রিবাহী বিমানের বিপর্যয়, তীব্র বিস্ফোরণ এবং ২৬০ মৃত্যু। কিন্তু কী ভাবে বিমানের জ্বালানির সুইচ বন্ধ হয়ে গেল? ভুলবশত কি কোনও পাইলটের পক্ষে এই সুইচ বন্ধ করে ফেলা সম্ভব?
এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনার এক মাসের মাথায় শনিবার প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তদন্তকারী সংস্থা এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি)। এই রিপোর্টের কপি পেয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া এবং বোয়িং সংস্থাও। দুর্ঘটনার মুহূর্তে ককপিটে পাইলটদের মধ্যে কী কথাবার্তা হয়েছিল, তা উল্লেখ করা হয়েছে ১৫ পাতার সেই রিপোর্টে। এক পাইলটকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘কেন তুমি বন্ধ (জ্বালানি) করে দিলে?’’ অন্য জন উত্তর দেন, ‘‘আমি কিছু বন্ধ করিনি।’’ এয়ার ইন্ডিয়ার এই বিমানটিতে ক্যাপটেন ছিলেন সুমিত সবরওয়াল (৫৬)। ১৫,৬৩৮ ঘণ্টা বিমান ওড়ানোর অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর। এ ছাড়া তাঁর সঙ্গে কো-পাইলট ছিলেন ক্লাইভ কুন্দর (৩২)। তাঁর অভিজ্ঞতা ছিল ৩,৪০৩ ঘণ্টার। কোন পাইলট কাকে এই প্রশ্ন করেছেন এবং কে উত্তর দিয়েছেন, তা প্রাথমিক রিপোর্টে স্পষ্ট নয়।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিমানটি যখন গতি নিয়ে নিয়েছে, ঠিক সেই সময়ে দু’টি ইঞ্জিন মাত্র এক সেকেন্ডের ব্যবধানে পর পর বন্ধ হয়ে যায়। জ্বালানির সুইচ ‘রান’ (চালু) থেকে ‘কাটঅফ’ (বন্ধ)-এ চলে এসেছিল। সঙ্গে সঙ্গে বিমানের গতি এবং উচ্চতা কমতে থাকে। এই সময়েই পাইলট বিপদবার্তা (মে ডে কল) পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও কোন পাইলট বিপদবার্তা পাঠান, তা স্পষ্ট হয়নি।
কী ভাবে এক সেকেন্ডের মধ্যে জ্বালানির সুইচ ‘রান’ থেকে ‘কাটঅফ’ হয়ে যায়, তার কোনও সম্ভাবনার কথা প্রাথমিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়নি। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ভুলবশত পাইলট জ্বালানির সুইচ বন্ধ করে ফেলবেন, এমনটা হতে পারে না। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে মার্কিন বিমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ব্রিকহাউস বলেছেন, ‘‘পাইলটেরা এটা করবেন না। যদি পাইলটের কারণে এটা হয়ে থাকে, প্রশ্ন হল কেন?’’ আর এক বিমান বিশেষজ্ঞ জন নান্স জানিয়েছেন, এক সেকেন্ডের ব্যবধানে দু’টি সুইচ বন্ধ হয়েছে। একটি বন্ধ করে অন্যটি বন্ধ করতে যেতে আরও বেশি সময় লাগার কথা। কোনও পাইলটই সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় এটা করবেন না। বিশেষত, যখন বিমানটি উড়তে শুরু করেছে।
জ্বালানির সুইচ বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে সঙ্গে সঙ্গে ইঞ্জিনে জ্বালানি পৌঁছোনোও বন্ধ হয়ে যাওয়া। সাধারণত, যখন বিমানবন্দরে বিমান অবতরণ করে, এই সুইচ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া, কোনও আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সুইচ বন্ধ করেন পাইলটেরা। ইঞ্জিনে আগুন লাগলে এই সুইচ ব্যবহার করা হয়। তেমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল কি না, প্রাথমিক রিপোর্টে তার উল্লেখ নেই। বিমানটি যেখানে ভেঙে পড়েছিল, সেই দুর্ঘটনাস্থল থেকে যখন জ্বালানির দু’টি সুইচই উদ্ধার করা হয়, তখন তা চালু অবস্থাতেই ছিল। অর্থাৎ, একেবারে শেষ মুহূর্তে দু’টি ইঞ্জিন আবার চালু হয়ে গিয়েছিল বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু তত ক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে।
তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, পাইলটেরা সেই মুহূর্তে দু’টি জ্বালানির সুইচই আবার ‘কাটঅফ’ থেকে ‘রান’-এ নিয়ে এসেছিলেন। ইঞ্জিন চালু করার মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। ইঞ্জিন-২ সাময়িক ভাবে স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরেওছিল। কিন্তু ইঞ্জিন-১ আর চালু করা যায়নি। পাওয়া যায়নি ‘থ্রাস্ট’। ঠিক কী কারণে জ্বালানির সুইচ বন্ধ হয়ে গেল, তা এখনও তদন্তের অধীন।