Operation Sindoor

জইশের ‘শক্ত ঘাঁটি’, লশকরদের সঙ্গেও যোগ! প্রত্যাঘাতের জন্য কেন পাকিস্তানের বহওয়ালপুর শহরকেই বাছল ভারতীয় সেনা?

লাহোর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে বহওয়ালপুর পাকিস্তানের দ্বাদশ বৃহত্তম শহর। একে জইশ-ই-মহম্মদের শক্ত ঘাঁটি বলে দাবি করা হয়। এই শহরের মসজিদে ভারত একাধিক হামলা চালিয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২৫ ০৭:২৭
Share:

পাকিস্তানের বহওয়ালপুর শহর ছিল ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর অন্যতম নিশানা। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলার প্রত্যাঘাত হেনেছে ভারত। মধ্যরাতে পাকিস্তানের একাধিক জায়গায় হামলা চালানো হয়েছে। পাক সরকারের বিবৃতিতে আট জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করা হয়েছে। দাবি, তাঁরা সকলেই সাধারণ নাগরিক। তবে ভারতের বক্তব্য, পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটিগুলিকে নিশানা করা হয়েছিল। বহু ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারত এই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। যার অন্যতম নিশানা ছিল বহওয়ালপুর শহর। এখানে ভারতের হামলার কথা স্বীকার করেছে পাকিস্তানও। তবে তাদের দাবি, বহওয়ালপুরে ভারতের হামলায় পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম ৩১ জন। কিন্তু হামলার জন্য কেন এই শহরকে বেছে নেওয়া হল?

Advertisement

লাহোর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে বহওয়ালপুর শহর পাকিস্তানের দ্বাদশ বৃহত্তম শহর। একে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের শক্ত ঘাঁটি বলে দাবি করা হয়। জইশের সদর দফতর রয়েছে ‘জামিয়া মসজিদ শুভান আল্লাহ্‌’ ক্যাম্পাসে। একে উসমান-ও-আলি ক্যাম্পাস বলেও অনেকে চেনেন। ১৮ একর জমি জুড়ে এই ক্যাম্পাস বিস্তৃত। এখানে জইশ জঙ্গিদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। জইশের প্রতিষ্ঠাতা মৌলানা মাসুদ আজ়হার বহওয়ালপুরের বাসিন্দা, এই ক্যাম্পাসেই থাকেন।

২০০২ সালে সরকারি ভাবে জইশ-ই-মহম্মদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ, তা কেবল খাতায়কলমে। পাকিস্তানের এই ক্যাম্পাসে বসে বিনা বাধায় কাজ করত জইশ জঙ্গিরা। ক্যাম্পাসের অদূরেই রয়েছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্টও। কয়েকটি সূত্রের দাবি, এই বহওয়ালপুরেই একটি গোপন পরমাণু ঘাঁটি রয়েছে। পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সঙ্গে জঙ্গিদের যোগাযোগ রয়েছে বলেও অনেকে দাবি করেন।

Advertisement

সূত্রের দাবি, জামিয়া মসজিদ শুভান আল্লাহ্‌ মসজিদে মাদ্রাসা জইশ-ই-মহম্মদের তহবিলে চলে। ২০১১ সাল পর্যন্ত এটি একটি সাধারণ ভবন ছিল। ২০১২ সালে একে বৃহৎ প্রশিক্ষণকেন্দ্রে পরিণত করা হয়। এই মাদ্রাসায় ৬০০-র বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর নিশানায় ছিল এই মসজিদও।

১৯৯৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর কাঠমান্ডু থেকে দিল্লিগামী এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান অপহরণ করেছিল পাঁচ হরকাত-উল-মুজাহিদিন জঙ্গি। তাতে ১৯০ জন যাত্রী ছিলেন। বিমানটি আফগানিস্তানের কান্দাহার দিয়ে ঘোরানো হচ্ছিল। সেই সময় তা অপহরণ করা হয়। ভারত সে সময় মাসুদ আজ়হার, ওমর শেখ এবং মুস্তাক জ়ারগার নামের তিন জঙ্গিকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। এই মাসুদ ১৯৯৪ সাল থেকে ভারতের জেলে বন্দি ছিলেন। আফগান জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ছিলেন তিনি। ভারত মুক্তি দেওয়ার পর ২০০০ সালে তিনিই জইশ-ই-মহম্মদ গঠন করেন। ভারতে একাধিক ছোটবড় সন্ত্রাসবাদী হামলার নেপথ্যে ছিল এই সংগঠন। এ ছাড়া বহওয়ালপুরের কিছু কিছু জায়গায় অপর পাক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লশকর-এ-ত্যায়বার জঙ্গিরাও সক্রিয় বলে অভিযোগ। তাদের সঙ্গেও এই শহরের যোগ রয়েছে।

গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তার পরেই পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করেছিল ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছিলেন, ভারত এই হামলার যোগ্য জবাব দেবে। তিনি সেনাবাহিনীকেও পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছিলেন। এর পর মধ্যরাতে পাকিস্তানে হামলা চালাল ভারত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement