ফের মহিলা যাত্রীর শ্লীলতাহানি চলন্ত ট্রেনে। ফের অভিযুক্ত সেনা জওয়ান। এ বার রাজধানী এক্সপ্রেসে। ট্রেন মুঘলসরাই পৌঁছতেই অভিযুক্ত দালের সিংহকে গ্রেফতার করেছে রেল পুলিশ। তবে রাজধানী এক্সপ্রেসের মতো দেশের সবচেয়ে এলিট ট্রেনে মহিলা যাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনা রেলে যাত্রী সুরক্ষার হাঁড়ির হাল আবার সামনে এনে দিয়েছে। সেনার তরফে জানানো হয়েছে, ল্যান্সনায়েক দালের সিংহ ছুটিতে ছিলেন। ছুটি বাতিল করে তাঁকে ইউনিটে ফিরতে বলা হয়েছে।
কদিন আগেই অমৃতসর এক্সপ্রেসে সেনা জওয়ানদের কামরায় উঠে গণধর্ষণের শিকার হতে হয় দমদমের এক কিশোরীকে। ঘটনার রেশ এখনও কাটেনি। তার মধ্যেই ঘটে গেল শুক্রবার রাতের ঘটনা। হাওড়া-দিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেসের বি-২ কোচে ঘটনাটি ঘটেছে। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্যাতিতা মহিলা এবং অভিযুক্ত জওয়ান দালের, দু’জনেই ট্রেনে ওঠেন হাওড়া থেকে। সন্ধে নামতেই ওই মহিলা সহযাত্রীর সঙ্গে অভব্য ব্যবহার শুরু করে দিলবর। মহিলাকে সে নানা অশালীন ইঙ্গিত করতে থাকে বলে অভিযোগ। ট্রেন যখন গয়ার কাছাকাছি, তখন মহিলা সহযাত্রীর শ্লীলতাহানি করে সে। কোনওক্রমে ওই মত্ত সহযাত্রীর হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে কর্তব্যরত টিকিট পরীক্ষকের কাছে ছুটে যান নির্যাতিতা। টিকিট পরীক্ষক আরপিএফ ডেকে পাঠিয়ে বি-২ কোচের সেনার ল্যান্সনায়েক দালের সিংহকে ট্রেনেই আটক করার ব্যবস্থা করেন। ট্রেন মুঘলসরাই পৌঁছতেই স্থানীয় জিআরপি ট্রেনের কামরায় গিয়ে মহিলার অভিযোগ নথিভুক্ত করে। শ্লীলতাহানির অভিযোগে দালের সিংহকে গ্রেফতার করে জিআরপি।
আরও পড়ুন:
ট্রেনে নাবালিকাকে গণধর্ষণ সেনাদের
সেনাবাহিনীর তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, দালের সিংহের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা কতখানি, তা সেনা তদন্ত করে দেখবে। মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে দালেরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু দালের সিংহের বক্তব্যও তুলে ধরা হয়েছে সেনার তরফে। সেনার মুখপাত্র এ দিন জানান, লাগেজ রাখা এবং বসার জায়গা নিয়ে মহিলা সহযাত্রীর সঙ্গে বচসা হয়েছিল বলে দালের সিংহ জানিয়েছে। শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেনি বলে দালের রেল পুলিশকেও জানিয়েছে। সেনা মুখপাত্র বলেন, ল্যান্সনায়েক দালের সিংহ ছুটিতে ছিলেন। ছুটি বাতিল করে তাকে ইউনিটে ফিরতে বলা হয়েছে। তার পর সেনা বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।
কেন বার বার চলন্ত ট্রেনে শ্লীলতাহানির ঘটনা? রেল কর্তাদের একাংশ বলছেন, ট্রেনে লুকিয়ে মদ নিয়ে ওঠার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে। জলের বোতল বা কোল্ড ড্রিঙ্কসের বোতলে মদ মিশিয়ে নিয়ে আজকাল ট্রেনে উঠছেন অনেক যাত্রী। সন্ধ্যার পর থেকেই জল বা কোল্ড ড্রিঙ্কস খাওয়ার আড়ালে মদ্যপান শুরু হয়। কিছুক্ষণ পর বেসামাল হয়ে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে শুরু করেন এই মদ্যপদের অনেকে। শুক্রবার রাতে রাজধানী এক্সপ্রেসে শ্লীলতাহানি এবং তার আগে অমৃতসর এক্সপ্রেসে গণধর্ষণ— এই দুই ঘটনাতেই অভিযুক্তরা মত্ত অবস্থায় ছিল কিনা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। পূর্ব রেলের মুখপাত্র রবি মহাপাত্র জানালেন, এই ধরনের পরিস্থিতি রুখতে রেলের কামরায় আরপিএফ-কে এ বার থেকে বিশেষ নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।