নমো-নমো করে সংখ্যার জোরে বিমা বিল লোকসভায় পাশ করে নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তবে রাজ্যসভায় বিমা বিলের পথ রুখতে নতুন কৌশল নিচ্ছেন বিরোধীরা। সূত্রের খবর, কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, সংযুক্ত জনতা দল-সহ ৯টি বিরোধী দল দাবি জানাবে, উচ্চকক্ষে একটি বিমা বিল ইতিমধ্যেই পেশ হয়েছে। এর পর নতুন বিল পেশ হলে ফের তা স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হোক।
কংগ্রেস সংসদীয় দলের এক সদস্য আজ বলেন, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে বিমা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির সীমা বাড়াতে একটি বিল পেশ করে সরকার। ওই বিল নিয়ে সংসদীয় সিলেক্ট কমিটিতে আলোচনা হয়। সিলেক্ট কমিটি রিপোর্ট পেশের পর বিলটি রাজ্যসভায় পাশ হয়নি। উল্টে তড়িঘড়ি বিমা অর্ডিন্যান্স জারি হয়েছে। অর্ডিন্যান্স তথা নতুন বিলটি এখন রাজ্যসভায় পেশ ও পাশ করাতে চায় তারা। কিন্তু প্রথা হল, নয়া বিল পেশ হলে তা স্থায়ী কমিটির বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়। সন্দেহ নেই, এ সবের উদ্দেশ্য বিমা বিলের গতি রোধ। মজার ঘটনা, নতুন বিল পেশের আগে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি পুরনো বিলটি রাজ্যসভা থেকে প্রত্যাহার করতে চাইলে বিরোধীরা বাধা দেন। বলেন, বিল প্রত্যাহারে ভোটাভুটি করতে হবে। হার অবধারিত বুঝে সরকার পিছিয়ে আসে। সরকারের তরফে বলা হয়, পুরনো বিলটি প্রত্যাহার না করলেও চলবে। ওটা বাতিল বলে ধরে নিলেই হল।
মনমোহন জমানায় বিমা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির সীমা বাড়াতে কংগ্রেসই বিল আনে। বিজেপির আপত্তিতে তা পাশ হয়নি। প্রশ্ন, কংগ্রেস এখন বিলটিতে আপত্তি করবে কোন মুখে? জবাবে রাজ্যসভায় কংগ্রেসের উপদলনেতা আনন্দ শর্মা আজ বলেন, বিমা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি বাড়ানোয় নীতিগত ভাবে আপত্তি নেই কংগ্রেসের। কিন্তু পুরনো বিল নিয়ে সংসদীয় সিলেক্ট কমিটি যে সুপারিশ করে, তার সবগুলি সরকার মানেনি। রাজ্যসভায় বিলটি পড়ে থাকলেও অর্ডিন্যান্স জারির প্রক্রিয়ায় তাঁদের আপত্তি রয়েছে। ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেসের এক নেতা আজ বলেন, আর্থিক সংস্কারের দায় এখন কংগ্রেসের নয়। বিজেপি এখন বিমা, প্রতিরক্ষায় বিদেশি লগ্নি টানতে চাইছে। অতীতে ওরাই বাধা দেন। তাতে বরং ওদের রাজনৈতিক সুবিধা হয়েছে। এখন সরকারকে সফল হতে দেবে কেন কংগ্রেস? সূত্রের খবর, বিমা বিলের পথ আটকাতে আনন্দ শর্মা, সমাজবাদী পার্টির নেতা রামগোপাল যাদব, সংযুক্ত জনতা দলের কে সি ত্যাগী, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরিরা আলোচনা করে স্থির করেছেন, বিলটি যাতে রাজ্যসভায় পাশ বা খারিজ না হয়, সেই চেষ্টাই হবে। তাঁরা সময় নষ্ট করার চেষ্টা করবেন। কারণ, সরকার চাইছে, পাশ না হোক বিরোধীরা বিলটি রাজ্যসভায় খারিজ করুক। যাতে যৌথ অধিবেশন ডেকে বিলটি পাশ করানো যায়।
বিজেপির দাবি, সংসদে যে অচলাবস্থা তৈরির চেষ্টা চলছে, সরকার তা জানে। নতুন বিল স্থায়ী কমিটিতে পাঠাতেই হবে, এমন ধরা-বাঁধা নিয়ম নেই। বরং নতুন বিল সংসদে পেশ হয়ে আলোচনা করে দিনের দিনই পাশ হয়ে গিয়েছে, এমন অনেক নজির রয়েছে। সরকার রাজ্যসভায় বিমা বিল পাশ হওয়ার ব্যাপারে এখনও আশাবাদী। না হলে যৌথ অধিবেশন ডাকার পথ খোলা রয়েছে।