Japanese Philosophy of Life

সুস্থ শরীরে দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকার কৌশল লুকিয়ে জাপানি পন্থায়, কোন দর্শনে বিশ্বাসী তাঁরা?

১০০ বছর পার করেও কর্মঠ হয়ে দিন কাটান জাপানের বহু নাগরিক। আনন্দে বাঁচেন তাঁরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পেশাজগৎ যেখানে চাপের কারণে বিপর্যস্ত, সেখানে জাপান কী করে ব্যতিক্রম? জাপানি দর্শন থেকে কোন শিক্ষা পাওয়া যায়?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৫ ১১:২১
Share:

জীবন বদলে দিতে পারে জাপানের জীবন দর্শন। দৈনন্দিন জীবনে তা কী ভাবে প্রয়োগ করবেন? ছবি: সংগৃহীত।

শতায়ু পার করেও আনন্দে বাঁচছেন মানুষজন। রোগে জর্জরিত হয়ে নয়, বরং দিব্যি চলাফেরা করতে পারেন তাঁরা। বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন সময়ে চর্চায় উঠে এসেছে জাপানের ওকিনওয়ার কথা। এটি একটি দ্বীপ। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শতায়ু মানুষের উপস্থিতি ওকিনওয়াকে আলাদা পরিচয় দিয়েছে। একই সঙ্গে কৌতূহলও তৈরি করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরা যখন কর্মক্ষেত্রে প্রবল চাপে হাঁসফাঁস করছেন, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন অল্প বয়সেই নানা রকম অসুখ ডেকে আনছে, উদ্বেগের মতো মানসিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে, সেখানে কী করে জাপানের এই স্থান ব্যতিক্রম? শুধু সুস্থতা নয়, জাপানিদের ছিপছিপে চেহারা, দাগহীন ত্বক, উজ্জ্বল চুলও বিশ্ববাসীর আগ্রহের বিষয়। গত কয়েক বছরে বেশ কিছু জাপানি শব্দবন্ধ বিশ্বের দরবারে আলোচিত। চর্চা এ দেশের জীবনদর্শন নিয়েও।

Advertisement

আনন্দের সঙ্গে সুস্থ ভাবে বাঁচার চাবিকাঠি লুকিয়ে এমন কিছু জাপানি দর্শনে। কী সেই বিষয়?

ইকিগাই: বাঁচা মানে শুধু খেয়ে-পরে টিকে থাকা নয়। বরং সুস্থ শরীরে, আনন্দের সঙ্গে জীবনযাপন। সেই কৌশল শেখায় ইকিগাই। জাপানি এই শব্দবন্ধ নিয়ে সমাজমাধ্যমে যথেষ্ট চর্চা বহমান। ‘ইকিগাই: দ্য জাপানিজ় সিক্রেট টু আ জয়ফুল লাইফ’ বইটি এতটাই চর্চিত যে, ৬৩টি ভাষায় তা অনুবাদ হয়েছে। ‘ইকিগাই’-এর ইংরেজি তর্জমা করলে দাঁড়ায় ‘বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য সন্ধান’। এই জীবনদর্শন বাধ্যতামূলক কর্মের কথা বলে না, বরং জীবনে সেই কাজের দিক নির্দেশ করে, যা আনন্দ দেয়, জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। একঘেয়ে জীবন নয়, বরং সুস্থ শরীরে দীর্ঘজীবী হওয়ার পথ সুগম করে ইকিগাই। ‘ইকিগাই’ জাপানের ওগিমি গ্রামের শতায়ু মানুষজনের জীবনযাপনের উৎস সন্ধান করে লেখা হয়েছিল। যেখানে দেখা গিয়েছে, জীবনের উপান্তে এসে কেউ বাগান করে, কেউ আবার শিল্পচর্চা করে, কেউ বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সুখে জীবন কাটাচ্ছেন। বেশির ভাগ বয়স্ক মানুষ তাঁদের শখ নিয়ে কাজ করছেন এবং সুখে বাঁচছেন। সহজ সরল অথচ অর্থবহ জীবনের কথা বলে ইকিগাই।

Advertisement

কাইজ়েন: কর্মজগতে উন্নতি কী ভাবে সম্ভব, তা নিয়ে নানা জনের নানা মত। তবে কাইজ়েন বলে, ছোট ছোট বদল এবং ধারাবাহিক প্রচেষ্টাই সাফল্য এনে দিতে পারে। জাপানি শব্দ ‘কাইজ়েন’ বলতে বোঝায় ‘ভালর জন্য বদল’। শুধু কর্মজীবন নয়, ব্যক্তিজীবনের বদলও প্রভাব ফেলে সাফল্যে। সেই কারণে বলা হয় ছোটখাটো বিষয়কেও গুরুত্ব দিতে। উন্নয়নের জন্য ক্রমাগত চেষ্টাই এই দর্শনের মূলমন্ত্র। কাইজেন বলে, কর্মক্ষেত্রে নিচুতলা থেকে উপরতলা— সমস্ত কর্মীর দিকে নজর দিলে, তাঁদের সঙ্গে সঠিক সমন্বয় গড়ে তুললে তবেই উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা যায়। ছোটখাটো প্রতিটি ক্ষেত্রে সজাগ দৃষ্টি এ জন্য জরুরি।

হারা হাচি বু: বেঁচে থাকাই শুধু নয়, আনন্দের সঙ্গে সুস্থ শরীরে বাঁচাও জরুরি। ‘হারা হাচি বু’ এমন এক জীবনদর্শন, যা শরীর সুস্থ রাখতে নির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাসের কথা বলে। পেট ৮০ শতাংশ ভরে গেলেই খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে, খাওয়া নিয়ে এমনই ভাবনায় বিশ্বাসী জাপানিরা। একেই বলা হয় ‘হারা হাচি বু’। অনেকেই মনে করেন, জাপানিদের সুস্থ এবং সুন্দর জীবনের রহস্য লুকিয়ে তাঁদের খাদ্যাভ্যাসে। হারা হাচি বু-র ভাবনাও সে দেশে বহু পুরনো। হজমশক্তি বৃদ্ধিতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে হারা হাচি বু। পেট খালি থাকলে অনেকেরই আরও কিছু খাওয়ার ইচ্ছা হতে পারে। সে কারণেই বলা হয়েছে এমন খাদ্যাভ্যাস রপ্ত করতে হলে ধীরে খেতে হবে। দীর্ঘ সময় ধরে খেলে মস্তিষ্কে সঙ্কেত পৌঁছবে অনেকটা খাওয়া হচ্ছে, যেটা দ্রুত খেলে কখনওই সম্ভব নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement