coronavirus

করোনা-ভয় ঠেকাতে জিমে যাওয়ায় নিষেধ করল ‘হু’! শরীরচর্চার সময় সংক্রমণ এড়াতে মেনে চলুন এ সব

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা চাইছেন, জিমে যাওয়াতেও রাশ টানা হোক। বরং বাড়িতে থেকেই শরীরচর্চা চলুক।

Advertisement

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২০ ১২:৫৫
Share:

জিম নয়, করোনা-আতঙ্কে আস্থা রাখুন ঘরোয়া শরীরচর্চায়।

শেষ পর্যন্ত কলকাতাতেও ঢুকে পড়ল কোভিড-১৯। অতিমারির এই ভয়ঙ্কর অবস্থায় সতর্কতার তালিকা লম্বা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ‘হু’। এর মধ্যে ঢুকে গেল জিমে যাওয়ার বিষয়টিও। মিটিং-মিছিল, জনসমাবেশ, সিনেমা হল, শপিং মল বন্ধ করার আবেদনের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা চাইছেন, জিমে যাওয়াতেও রাশ টানা হোক। বরং বাড়িতে থেকেই শরীরচর্চা চলুক।

Advertisement

কিন্তু কেন?

ভায়ারোলজিস্ট সুশ্রুত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘জিম মানেই সেখানেও কিছু লোকজন একসঙ্গে জড়়ো হবেন। কত রকম মানুষ আসেন গা ঘামাতে। তাঁদের কারও মধ্যে যদি সংক্রমণ ঘটে থাকে আর তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে, বসে, তাঁর ব্যবহার করা যন্ত্রপাতি দিয়ে আপনি ব্যায়াম করে থাকেন তা হলে ভয় কমছে কই? তিনি যে ম্যাটে শুয়ে-বসে ব্যায়াম করেছেন, আপনিও তাতে শুয়ে-বসে ব্যায়াম করেন, এই জীবাণু কি আপনার শরীরে ঢুকবে না? যে সমস্ত ট্রেনাররা হাতে ধরে ব্যায়াম করাচ্ছেন, তিনি যদি সংক্রামিত থাকেন, আপনি এড়াতে পারবেন সংক্রমণ? তার উপর ভাল জিম মানেই তা বাতানুকূল। অর্থাৎ ভাইরাস ঢুকলে, বেশ আরামেই সে থেকে যাবে কয়েক ঘণ্টা। কখনও টানা দু’-এক দিনও। তা হলে?’’

Advertisement

বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর মতে, নিয়মিত, যাঁরা ব্যায়াম করেন, তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সচরাচর তুঙ্গে থাকে। কাজেই ভাইরাস শরীরে ঢুকলেও তাঁকে হারিয়ে দেওয়ার শক্তি তাঁদের মধ্যে এই যুক্তি খুব ফেলে দেওয়ার নয়। কিন্তু যাঁরা সংস্পর্শে আসবেন? পরিবারের খুদে, বয়স্ক বা অন্য সদস্যরা? তাঁদের সামলানোর ক্ষমতা আপনার মতো নাও হতে পারে! তাই চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকবে সংক্রামিত ব্যক্তির সংখ্যা।

আরও পড়ুন: করোনা ঠেকাতে মোবাইল-বিধিও জানাল ‘হু’, এই ভাবে ব্যবহার করলে সংক্রমণ এড়ানো যাবে

এ ছাড়া অসুস্থ শরীরে যদি কেউ ব্যায়াম কবেন? ভাইরাস ঢোকামাত্রই তো উপসর্গ দেখা যায় না। কিন্তু তিনিও রোগ ছড়াতে পারেন। এ রকম কেউ জিমে আছেন কি না তাও বোঝা যায় না। তাই আপাতত এক মাস জিম যাওয়া বন্ধ করাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মত চিকিৎসকদের।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

জিমে যাওয়া বন্ধ একান্তই না করতে চাইলে মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম

• জিমে যাঁরা কাজ করেন ও যাঁরা জিম করতে আসেন, তাঁদের রোগ প্রতিরোধমূলক ট্রেনিং যথাযথ থাকা দরকার। অর্থাৎ হাত ধোওয়া, মাস্ক পরা, কাফ এটিকেট মেনে চলা ইত্যাদি।

• পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিজপোজেবল গ্লাভস, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার যেন জিমে থাকে ।

• প্রতিটি যন্ত্র, ডাম্বেল, বারবেল, প্রতিটি সুইচ-হাতল, ম্যাট, মেঝে, টয়লেট সিট জীবাণুনাশক দিয়ে ঘণ্টায় ঘণ্টায় পরিষ্কার করা হয়।

• সংক্রমণের আশঙ্কা কমাতে যে সময় জিমে ভিড় কম থাকে, সে সময় যান। ডিজপোজেবল মাস্ক ও গ্লাভস পরে ব্যায়াম করুন। ও জিমের বাস্কেটে সে সব ফেলে ঘরে আসুন।

• ঘরে এসে কোনও কিছু ধরার আগে ভাল করে স্নান করে নিন।

• জিমের জামাকাপড় গরম জল ও সাবানে ধুয়ে নিন। তারপর তা শুকিয়ে নিন চড়া রোদে।

• এত কিছু মেনে দিনের পর দিন চলা কঠিন বলেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, স্বাস্থ্যরক্ষার নামে জিম যাওয়া এই মুহূর্তে অনুচিত বলেই মনে করছে।

তা হলে ব্যায়ামের কী হবে? এই জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে গেলে তো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো দরকার। যার অন্যতম মাধ্যম হল ব্যায়াম!

আরও পড়ুন: করোনা-কাঁটার উৎস কোথায়? কী কী মানলে বিপদ অনেকটা কাটবে?

ব্যায়াম করুন ঘরে বা মাঠে

দল বেঁধে বা প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ব্যায়াম করার অভ্যাস হলে ঘরে একা একা করতে ভাল নাও লাগতে পারে। সে ক্ষেত্রে সকাল সকাল উঠে পার্কে চলে যান। লোকজনের ভিড় থাকলে এখানেও আপনার সঙ্গী হবে মাস্ক ও কম করে ৬ ফুটের দূরত্ব। এমন ব্যায়াম করুন যাতে একাধারে পেশির জোর ও হৃদস্পন্দন বাড়ে। প্রথমে দু’-এক পাক দৌড়ে নিন বা জোর কদমে হাঁটুন। অভ্যাস ও হাঁটুর জোর থাকলে স্কিপিং করতে পারেন। ঘর থেকে মাঠে সাইকেল চালিয়ে যেতে পারলে আরও ভাল। এরপর সার্কিট ট্রেনিংয়ের মতো করে পর পর প্লাঙ্ক, পুশ আপ, স্কোয়াট, লেগ লিফ্‌ট, বার্পিস করুন। ২০-৩০ মিনিটে পুরো শরীরের ওয়ার্কআউট খুব ভাল ভাবে হয়ে যাবে। সঙ্গে জোরদার হবে হার্ট ও ফুসফুস— যা এই মুহূর্তে খুবই জরুরি। পার্কে না গিয়ে এই ব্যায়ামগুলো কিন্তু ঘরেও করতে পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন