আবহাওয়া বদলের সময়ে সাবধান

সিজ়ন চেঞ্জ মানেই সর্দি-কাশি-জ্বরের উপদ্রব। এই সময়ে কী ভাবে সাবধানে থাকবেন, রইল গাইডলাইনহাওয়াবদলের সময়ে জ্বরজারি বেশি হওয়ার পিছনে কিছু কারণ রয়েছে। সর্দি, গলা ব্যথা, জ্বর, পেটের অসুখের জন্য ব্যাকটিরিয়া বা ভাইরাস দায়ী।

Advertisement

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৯ ০০:০১
Share:

হাওয়াবদলের সময়ে জ্বরজারি বেশি হওয়ার পিছনে কিছু কারণ রয়েছে।

পুজো শেষ হতে না হতেই আবহাওয়া বদলেছে। বাতাসের শিরশিরানির জন্য রাতের দিকে আর অতটা গরম লাগছে না। পাখার পয়েন্টও ফুলস্পিড থেকে কমের দিকে। এই সময়েই সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, ঘুষঘুষে জ্বর জাঁকিয়ে বসে। পুজোর হুল্লোড়ে শরীরও ক্লান্ত। তাতেই জীবাণুরা নিজেদের প্রতিপত্তি বাড়িয়ে ফেলে। ছোট-বড় সকলেই এই সময়টায় ভোগেন।

Advertisement

হাওয়াবদলের সময়ে জ্বরজারি বেশি হওয়ার পিছনে কিছু কারণ রয়েছে। সর্দি, গলা ব্যথা, জ্বর, পেটের অসুখের জন্য ব্যাকটিরিয়া বা ভাইরাস দায়ী। এই আবহাওয়ায় তাপমাত্রা কমে যায় বলে কিছু ব্যাকটিরিয়া, ভাইরাস সক্রিয় হয়ে ওঠে। এদের দমাতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন। কারণ আপনার ব্যাকটিরিয়াল ইনফেকশন হয়েছে না কি ভাইরাল— সেটা একমাত্র চিকিৎসকই বলতে পারবেন। দু’টির চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা।

Advertisement

ছোটদের সাবধানে রাখুন

ইমিউনিটি পাওয়ার যেহেতু কম তাই সিজ়নচেঞ্জের ধাক্কাটা ছোটদের সবচেয়ে বেশি লাগে। উৎসবের মরসুমে ভিড়ভাট্টার জায়গায় যাওয়ার ফলে সহজেই ইনফেকশন ছড়ায়। যদি দেখেন শিশুর সর্দি-জ্বর হয়েছে, ডাক্তারের পরামর্শ নিন। নিজের ইচ্ছেমতো ওষুধ দেবেন না। অনেক অভিভাবকই পুরনো প্রেসক্রিপশন দেখে শিশুকে ওষুধ খাইয়ে দেন। ভুলেও এ কাজটি করবেন না। একমাত্র চিকিৎসকই বলতে পারবেন, কেন শরীর খারাপ হয়েছে এবং তার জন্য কী চিকিৎসা প্রয়োজন। আপনার দেওয়া ওষুধে রোগের সাময়িক উপশম হয়তো হবে, কিন্তু তার সঙ্গে শিশুর অন্য ক্ষতিও হতে পারে।

শিশু চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষের কথায়, ‘‘অনেক বাবা-মা টেলিফোনে ওষুধ জিজ্ঞেস করেন। অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার অনুরোধ করেন। বাচ্চাকে পরীক্ষা না করে কোনও ডাক্তারের পক্ষেই ওষুধ দেওয়া সম্ভব নয়। তাই শিশু অসুস্থ হলে তাঁকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।’’ আপনার শিশুর অ্যান্টি ফ্লু ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে জ্বরজারির উপদ্রব খানিক কম হবে।

সর্দি, কাশি ছাড়া ডেঙ্গির প্রকোপে এখনও মানুষ আতঙ্কিত। শুধু বর্ষা নয়, অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আবহাওয়া বদলের সময়েও ডেঙ্গি ছড়ায়। সন্তানকে সাবধানে রাখা ছাড়া উপায় নেই। তাকে বেশি করে ফ্লুয়িড দিন। এই সময়ে শিশুদের খুব একটা ডায়রিয়া দেখা যায় না। তবে সাবধানের মার নেই। তেমন কিছু হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেই হবে।

কাবু হয়ে পড়েন বড়রাও

হাওয়া বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে বড়দেরও গলা ব্যথা, গা ম্যাজম্যাজ শুরু হয়ে যায়। ডা. সুবীরকুমার মণ্ডলের কথায়, ‘‘যদি দেখেন হালকা জ্বর বা গায়ে ব্যথা রয়েছে, তখন প্যারাসিটামল খেয়ে নিতে পারেন। একশোর উপরে জ্বর হলেই প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে, এই তথ্যের কোনও ভিত্তি নেই। অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ভাইরাল ইনফেকশন না কি ব্যাকটিরিয়াল, তা বুঝেই চিকিৎসক ওষুধ দেবেন। আমাদের শরীরে অনেক ভাল ব্যাকটিরিয়াও রয়েছে। ভুল অ্যান্টিবায়োটিকে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’’

যাঁদের সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজ়িজ়) রয়েছে, সোজা ভাষায় শ্বাসের সমস্যা, তাঁরা এই সময়ে বেশি কাবু হয়ে পড়েন। আগাম ব্যবস্থা হিসেবে চিকিৎসকের পরামর্শে ইনহেলার নিতে পারেন।

অ্যাডাল্ট ভ্যাকসিনের মধ্যে অ্যান্টি ফ্লু ভ্যাকসিনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। তাতে রোগের প্রকোপ কম হয়।

সিজ়ন চেঞ্জের সময়ে অল্পবিস্তর পেটের গোলমাল দেখা দিতে পারে। ‘‘একটু পেটে ব্যথা, কয়েক বার মলত্যাগ হলেই অনেকে অ্যান্টি ডায়রিয়া পিল খেয়ে ফেলেন। এটা করবেন না। শরীরের কোনও একটা অস্বস্তি থেকেই বার বার স্টুল পাস হচ্ছে। ওই ধরনের ওষুধ খেয়ে তা আটকানোর অর্থ রোগটা চেপে দেওয়া। রোগের নিরাময় নয়।’’ মন্তব্য চিকিৎসক সুবীর মণ্ডলের।

প্রতিকারের রাস্তা

• এ সময়ে শরীরে জল প্রয়োজন। শরীর ডিহাইড্রেটেড হলেই গায়ে ব্যথা, মাথাধরা শুরু। সবাইকেই জল খেতে হবে ভাল করে। ঠান্ডাতেও শরীর ডিহাইড্রেটেড হতে পারে। প্রয়োজনে ওআরএস খান।

• রাতের দিকে একটু ঠান্ডা হাওয়া দেয়, ছোটদের বেশি পাতলা জামা পরাবেন না। গলাব্যথার ধাত থাকলে পাতলা স্কার্ফ জড়াতে পারেন।

• ফ্রিজের ঠান্ডা জল খাবেন না। এ সময়ে একবার ঠান্ডা লাগে তো একবার গরম। গলা ব্যথা হলে, গার্গল করুন, গরম পানীয় খান আর রাতে ঘুমোনোর সময়ে গলায় ঢাকা দিন। পাখা, এয়ার কন্ডিশনারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

নিয়মিত ব্যায়াম অনেক রোগব্যাধি দূরে সরিয়ে রাখে। রোজ সকালে হালকা কিছু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ় কিন্তু আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।

মডেল: হিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, ঐশিকী বসু, পত্রালি হাজরা, ছবি: আশিস সাহা, শুভদীপ ধর (পত্রালি হাজরা), লোকেশন: হোটেল সনেট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন