ওষুধ বা প্রতিস্থাপনের ঝামেলা নয়, টাকে চুল গজানোর কী পদ্ধতি আসছে?
মেঘবরণ কেশ না থাক, তা বলে একমাথা ঘন চুল তো আশা করাই যায়! কিন্তু মাথার মাঝে এ দিক সে দিক ফাঁকা হয়ে গেলে কি আর ভাল লাগে? বংশে টাক পড়ার ইতিহাস মানেই, বয়স চল্লিশ পেরোতে না পেরোতেই মাথার মাঝখানে চকচকে একটা টাক উঁকি দিতে শুরু করবে। কানের দু’পাশ থেকে গোছা গোছা চুল উঠবে অবলীলায়। চাইলেও তা রোধ করা যাবে না। কেশশূন্য হয়ে যাওয়াটা অনেকের কাছেই কাঙ্ক্ষিত নয়। তাই ওষুধ বা ‘হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট’-এর মতো থেরাপির এত চাহিদা বেড়েছে। ওষুধ সকলের জন্য নয়, আর প্রতিস্থাপন পকেট ফাঁকা করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তা হলে উপায়? টাক ঢাকার পরচুলা তো আর স্থায়ী সমাধান নয়! টাকে চুল গজানোর অদম্য বাসনা যাঁদের, তাঁদের জন্যই নতুন এক থেরাপি নিয়ে আসতে চলেছেন ইংল্যান্ডের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা।
ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে এই গবেষণায় রয়েছেন পাকিস্তানের কমস্যাট ইউনিভার্সিটির গবেষকেরাও। ডিএনএ অর্থাৎ, ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিডের যে মৌলিক উপাদান ‘ডিঅক্সিরাইবোজ়’, তা দিয়েই এক ধরনের জেল তৈরি করেছেন গবেষকেরা। এর নাম ‘ডিএনএ সুগার জেল’। ‘ডিঅক্সিরাইবোজ়’ হল এক ধরনের শর্করা, যা ডিএনএ-র মূল উপাদান। এই শর্করা দিয়েই তৈরি হয়েছে এমন জেল, যা চুলের গোড়ায় রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করবে। মাথার কোষগুলিকে এমন ভাবে উদ্দীপিত করবে, যাতে গোড়া থেকে আবার নতুন কেশ গজিয়ে ওঠে। এতে চুল পড়ার সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে এবং টাকে নতুন চুলও গজাবে। ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন ফার্মাকোলজি’ জার্নালে এই বিষয়ে গবেষণাপত্র ছাপা হয়েছে।
ক্রমাগত চুল উঠে টাক পড়ার যে রোগ তার নাম চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘অ্যালোপেশিয়া অ্যারিয়েটা’। আসলে এক ধরনের অটোইমিউন রোগ। কোনও এক অজ্ঞাত কারণে শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন নষ্ট হতে থাকে, তখন তা মাথার হেয়ার ফলিকলগুলিকেও নষ্ট করতে থাকে। ফলে চুল তো ঝরে পড়েই,, নতুন করে চুল গজাতেও পারে না। আরও এক ধরনের টাক আছে, যার নাম ‘অ্যালোপেশিয়া অ্যান্ড্রোজেনেটিকা’। পুরুষদেরই এমন টাক হয়। অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের প্রভাবে মাথার পিছনে ও কপালের দু’ধারে চুল পড়তে শুরু করে। আর এক বার টাক পড়া শুরু হলে বিশেষ চিকিৎসা না করালে চুল ঝরে গিয়ে মাথাজোড়া টাক পড়ে।
গবেষক শেইলা ম্যাকনিল জনিয়েছেন, ডিএনএ সুগার জেলে কোনও রাসায়নিক নেই। ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় নেই। টাকে চুল গজানোর ওষুধ মিনোক্সিডিলের চেয়েও বেশি কার্যকরী এই থেরাপি। ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, এই থেরাপিতে তাদের শরীরে লোমের বৃদ্ধি খুব দ্রুত হচ্ছে। মানুষের শরীরেও পরীক্ষা করার কাজ শুরু হয়েছে। মিনোক্সিডিল ওষুধ সকলের জন্য কার্যকরী নয়। তা ছাড়া কেশ প্রতিস্থাপনের পদ্ধতির অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। সেখানে এই পদ্ধতিটি নিরাপদ বলেই দাবি করেছেন গবেষকেরা।