রেস্তরাঁ ব্যবসায় আর শুধু নামে আস্থা রাখছেন না তারকারা ছবি : সংগৃহীত।
সিনেমার পাশাপাশি বলিউড তারকাদের রেস্তরাঁর ব্যবসায় আগ্রহ নতুন ঘটনা নয়। বলিপাড়া জুড়ে ছড়িয়ে-ছিঁটিয়ে রয়েছে এমন বহু রেস্তরাঁ, যার সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে জড়িয়ে রয়েছে সেখানকার তারকাদের নাম। তবে সে সব রেস্তরাঁ, খাবার, পানীয় বা আপ্যায়নের জন্য যত না পরিচিত, তার থেকে অনেক বেশি খ্যাতি তারকা মালিকের পরিচিতির দৌলতে।
শাহুরুখ খানের পত্নী গৌরী খান, প্রিয়ঙ্কা চোপড়া (তাঁরটি অবশ্য মুম্বইয়ে নয়, নিউ ইয়র্কে), সুনীল শেট্টি, ধর্মেন্দ্র, মলাইকা অরোরা, রকুলপ্রীত, সানি লিওনি, ববি দেওল, শিল্পা শেট্টি, অর্জুন রামপাল, বাদশাহদের রেস্তরাঁয় খেতে যাওয়াটাই একটা বড় ব্যাপার। সুন্দর অন্দরসজ্জা আর তারকার নামই যথেষ্ট! সেখানে কী খাবার পাওয়া যাচ্ছে, তা গৌণ। কিন্তু যুগের সঙ্গে এই ভাবনাও বদলাচ্ছে। বলিউডের তারকারা এখন রেস্তরাঁ বানাচ্ছেন খাদ্যরসিকদের প্রয়োজন আর চাহিদার কথা মাথায় রেখে।
সম্প্রতি দিল্লিতে নতুন রেস্তরাঁ খুলেছেন কর্ণ জোহর। নাম ওজু। বলিউডের বাণিজ্যিক ফিল্মের হিট প্রযোজক-পরিচালক বলছেন, ‘‘আমরা এই রেস্তরাঁর লক্ষ্য একটাই— এখানে মানুষ শুধু আসবে, খাবে আর চলে যাবে না। এখানে এসে আড্ডা দিতে চাইবে। বসে থাকতে চাইবে। বার বার ফিরে আসতে চাইবে। যেখানে যাওয়াটা খাদ্যরসিকদের কাছে অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যাবে। তাঁদের মনে হবে এই পরিবেশ না হলে আড্ডা জমবেই না।’’
কর্ণ জোহর চান, তাঁর রেস্তরাঁয় আরামে আড্ডা দিতে আসুন মানুষ। তার প্রতিফলন রয়েছে অন্দরসাজেও। ছবি: সংগৃহীত।
অর্থাৎ, ‘কর্ণ জোহরের রেস্তরাঁ’ বলে নয়, আরামে আড্ডা দেওয়ার জায়গা হিসাবে অতিথিরা আসুন তাঁর রেস্তরাঁয়, চান কর্ণ। সে কথা মাথায় রেখেই তৈরি করেছে রেস্তরাঁর অন্দরসজ্জাও। যেখানে অন্য তারকাদের রেস্তরাঁর মতো বাহুল্য নয় অতিথিদের স্বাচ্ছন্দবোধের কথা মাথায় রাখা হয়েছে। নরম গদি আঁটা সোফা, পুরনো গ্রন্থাগারের মতো দেওয়ালের রং, বইয়ের তাক, কয়েকটি দেওয়ালে শোভা বৃদ্ধি করছে ছোট ছোট পুরনো জিনিস। পুরনো ঘড়ি, পুরনো বাইনোকুলার, টেলিস্কোপ, ছোট্ট কাঠের জাহাজ, তামার তৈরি মহাকাশচারী, পুতুল, পুরনো ফুলদানি— যা পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেবে।
সঞ্জয় দত্ত তাঁর রেস্তরাঁয় মজুত রাখছেন কর্পোরেট কর্মীদের মনোরঞ্জনের উপাদান। ছবি: সংগৃহীত।
এ কথা খাটে সঞ্জয় দত্তের ক্ষেত্রেও। রেস্তরাঁর ব্যবসায় নামছেন বলিউডের সঞ্জুবাবাও। মুম্বইয়ের বান্দ্রা কুর্লা কমপ্লেক্সে তাঁর সেই রেস্তরাঁর নাম সোলায়ার। সঞ্জয়ও তাঁর রেস্তরাঁ সাজিয়েছেন একটি বিশেষ গোত্রের খাদ্যরসিকদের কথা মাথায় রেখে।
সঞ্জয় জানাচ্ছেন, তাঁর রেস্তরাঁর মূল লক্ষ্য হল মুম্বইয়ের কর্পোরেট জগতে দিনভর কাজে ডুবে থাকা কর্মীরা। মুম্বই এবং তাঁর সংলগ্ন অঞ্চলে এমন লাখো কর্পোরেট কর্মী সকাল থেকে রাত অফিসের দায়িত্ব সামলে রাতে মাথা হালকা করার ঠিকানা খোঁজেন। অভিনেতার রেস্তরাঁ তাঁদের যত্নআত্তি করে পরের দিনের জন্য ‘রিচার্জ’ করার উপায় মজুত রেখেছে।
হৃতিকের ক্যাফেতে পাওয়া যায় স্বাস্থ্যসচেতন মানুষদের জন্য সুস্বাদু খাবার। ছবি: সংগৃহীত।
খানিকটা এমনই ভাবনা দেখা গিয়েছে হৃতিক রোশনের এইচআরএক্স ক্যাফে কিংবা মানালিতে কঙ্গনা রনৌতের দ্য মাউন্টেন স্টোরিতে। হৃতিকের ক্যাফের লক্ষ যেমন স্বাস্থ্যসচেন মানুষ। তাই মেনু কার্ডেও আছে তার প্রতিফলন। তেলমশলাদার খাবার নয়, বরং স্বাস্থ্যকর খাবারকে সুস্বাদু করার চেষ্টা করা হয়েছে সেখানে। প্রোটিন প্যানকেক থেকে শুরু করে পাঁচ রকম দানাশস্যের খিচুড়ি, মিলেট দিয়ে তৈরি কার্ড রাইস, আটা বা ওটসের আটা দিয়ে তৈরি কুলচার বার্গার, মিলেট দিয়ে তৈরি পিৎজ়া ইত্যাদি।
নিউ ইয়র্কে প্রিয়ঙ্কা যে রেস্তরাঁ খুলেছিলেন তার নাম ছিল সোনা। সে রেস্তরাঁর বিশেষত্ব ছিল ভারতীয় খাবারদাবার ফুচকা-বড়া পাওয়ের মতো দেশের নানা প্রান্তে পথ-ঘাটে পাওয়া যাওয়া খাবারও রাখা হয়েছিল সেখানে। সেই রেস্তরাঁ অবশ্য গত বছর অর্থাৎ, ২০২৪ সালে বন্ধ হয়েছে। তবে সেটিও কর্ণ, সঞ্জয়, হৃতিকদের মতো তৈরি হয়েছিল এক বিশেষ জনতার কথা মাথায় রেখে।
কঙ্গনা রনৌতের মাউন্টেন ক্যাফে তৈরি করেছে পাহাড়ের কোলে পাহাড়ি খাবার খাওয়ার রাজকীয় পাহাড়ি পরিবেশ। ছবি: সংগৃহীত।
অন্য দিকে, কঙ্গনার মাউন্টেন ক্যাফের লক্ষ মানালিতে বেড়াতে এসে পাহাড়ের কোলে বসে পাহাড়ি খাবার, পাহাড়ি আপ্যায়নের স্বাদ রাজকীয় ভাবে পেতে চাওয়া মানুষ। তাই তাঁর ক্যাফের ছাদ এবং জানলা দিয়ে সামনে দেখা যায় বরফে মোড়া পাহাড়। এতটাই ‘কাছে’, যে মনে হতে পারে একটু হাত বাড়িয়ে দিলেই ছোঁয়া যাবে বুঝি। অন্দরসজ্জা থেকে শুরু করে খাবার এবং পানীয়ের মেনু— সবেতেই পাহাড়ি সংস্কৃতি প্রকট। সেই অর্থে কঙ্গনার ক্যাফে হতে পারে পাহাড়প্রেমীর একটি ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশনও।
অর্থাৎ তারকারা আর শুধু কয়েক কোটি টাকা দিয়ে রেস্তরাঁর অর্ধেক সত্ত্বের অংশীদার হয়েই থামছেন না। তাঁরা ব্যবসাটাকে ব্যবসার মতো করেই করছেন। নিজেদের খ্যাতির উপর আস্থা না রেখেঅতিথিকেই দেবতা মেনে তাঁদের আদর-আপ্যায়নে মন দিচ্ছেন তাঁরা।