coffee

ঘন ঘন কফি পান ভাল না খারাপ?

দিনে দু বার চিনি ছাড়া কালো কফি খেলে শরীরের বিপাক ক্রিয়া বেড়ে ওজন কমারও সুরাহা হয়৷ খিদে কমে যায় বলে ডায়েটিং সহজ হয়৷

Advertisement

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২০ ১৩:৩১
Share:

এক চুমুকে ক্লান্তি দূর শুধু নয়, কফির রয়েছে হরেক গুণ। ফাইল ছবি

কফির কাপে মৌতাত। সারা দিনের ক্লান্তি কাটাতে এক কাপ কালো কফি, হালকা গান আর প্রিয় বইয়ের পাতা ওল্টানো। আপনি কি এমনই? এক সময় মনে করা হত কফি খেলে হার্ট খারাপ হয়, রক্তচাপ বাড়ে, ঘুম নষ্ট হয়। আর এই তিনটি সমস্যাই যেহেতু কোভিডের আগমনের পথ প্রশস্ত করে, ভয় একটু ছিলই। কিন্তু বিজ্ঞানীরা আশ্বস্ত করলেন সম্প্রতি । জানালেন, বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, কফি খাওয়া হার্টের জন্য খারাপ তো নয় বরং কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভাল।

Advertisement

উচ্চ রক্তচাপের জন্যও সে খারাপ নয়। আবার দিনে দু বার চিনি ছাড়া কালো কফি খেলে শরীরের বিপাক ক্রিয়া বেড়ে ওজন কমারও সুরাহা হয়। খিদে কমে যায় বলে ডায়েটিং সহজ হয়।

ব্যায়ামের আগে খেলে দ্বিগুণ এনার্জি নিয়ে ব্যায়াম করা যায় কফি খেলে। বাড়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। সবের মিলিত প্রভাবে ওজন–প্রেশার–সুগার যেমন বশে থাকে, কমে হৃদরোগের আশঙ্কা। আর এই সবকটিই যেহেতু কোভিডের কো-মর্বিডিটি, এরা বশে থাকলে কোভিডের জটিলতার আশঙ্কা কমে যায়। অতএব কফির ভক্ত হলে, দিনে দু-তিন কাপ খেতেই পারেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: কারও র‍্যাশ, কারও হারপিস, সদ্যোজাতর ত্বকের সমস্যায় কী করতেই হবে এখন​

কফি ভাল?

• ২০১৫ সালে সার্কুলেশন পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্র থেকে জানা যাচ্ছে যাঁরা কফি খান না বা ন–মাসে ছ–মাসে খান তাঁদের তুলনায় যাঁরা দিনে ৩–৫ কাপ বা তার বেশি কফি খান, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে কম বয়সে মৃত্যুর হার তাঁদের মধ্যে বেশ কম। আবার ২০১৩ সালে ওই পত্রিকাতেই প্রকাশিত আরেকটি প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, যাঁরা কফি মোটে খান না তাঁদের তুলনায় যাঁরা দিনে ৩–৫ কাপ খান তাঁদের হৃদরোগ কম হয়।

আরও পড়ুন: ডিম খেলে কি মোটা? ক'টা খাবেন, কী ভাবে খেলে মিলবে পুষ্টি​

• ২০১২ সালে সার্কুলেশন, হার্ট ফেলিওর নামের পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যাঁরা দিনে ৪ কাপের মতো কফি খান, তাঁদের মধ্যে হার্ট ফেলিওরের আশঙ্কা সবচেয়ে কম।

কফি বিনের উপর নির্ভর করে কফিটি কেমন। ফাইল ছবি।

• মেয়ো ক্লিনিকের গবেষকদের মত, অভ্যাস না থাকলে হঠাৎ করে কফি খেতে শুরু করলে ক্যাফেইনের প্রভাবে হার্ট ও রক্তনালী উদ্দীপিত হয়ে রক্তচাপ সাময়িক একটু বাড়তে পারে। সময়ের সঙ্গে সে প্রভাব কেটে যায়। অর্থাৎ কফি খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায় বলে যে ধারণা ছিল, তা ঠিক নয়।

• আগেকার দিনে ভাবা হত রক্তচাপ বেশি থাকলে কফি না খাওয়াই ভাল, কারণ তাতে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়ে। সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে ব্যাপারটা তা নয়। ক্যাফেইনের প্রতি যাঁদের অতিরিক্ত স্পর্শকাতরতা আছে, তাঁদের কখনও কখনও এ রকম হলেও অন্যদের কিছু হয় না।

কফি খেলে কি রক্তচাপ বাড়ে? ফাইল ছবি।

কফি ভাল বিনের গুণে

কফি বিনে আছে এমন কিছু ফাইটোকেমিক্যাল, যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সিদ্ধহস্ত। আর হৃদরোগ থেকে শুরু করে আরও বিভিন্ন অসুখের মূলে আর কোভিডের বাড়াবাড়ির মূলেও যে থাকে এই প্রদাহ, তা তো আর নতুন কথা নয়। চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের পরামর্শ, বেশি কোনও কিছুই ভাল নয়। পরিমিত কফি পান করা যেতেই পারে রোজ।

আরও পড়ুন:মেদ ঝরানো, ব্যথা কমানো, কো-মর্বিডিটি ঠেকানো, এই সব ব্যায়ামেই কেল্লাফতে​

কিন্তু কফি–র কি সবটাই ভাল? কফি যাঁদের সহ্য হয় না? অম্বল বাড়ে, গ্যাস হয়, বাড়ে গ্যাস্ট্রাইটিসের প্রকোপ? বা অনিদ্রা, উদ্বেগ বাড়ে? বুক ধড়ফড় করে?

কফির ক্ষতি ও তা সামলানোর উপায়

কফিতে সমস্যা হয় কারও কারও। এর মূলে আছে কফির অন্যতম উপাদান ক্যাফেইন। তার পরিমাণ যদি কোনওভাবে কমানো যায়, তাহলেই আর সমস্যা নেই। এবং সে উপায়ও আছে। একটু খুঁজলেই বাজারে ক্যাফেইনহীন কফি পাবেন। সেটা খেলেই সব দিক বজায় থাকবে।

আরও পড়ুন:করোনা আবহে টিকায় গাফিলতি, মাম্পসের সংক্রমণ চিন্তা বাড়াচ্ছে​

আপনার যদি মনে হয় কফি খেলে রক্তচাপ বাড়ে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঘরে রক্তচাপ মাপার যন্ত্র কিনে ফেলুন। দু–চার সপ্তাহ ধরে কফি খাওয়ার আগে ও খাওয়ার দু–এক ঘণ্টা বাদে রক্তচাপ মেপে তা লিখে রাখুন। এরপর কয়েক সপ্তাহ কফি খাওয়া বন্ধ রেখে ওই একই সময় রক্তচাপ মেপে দেখুন তাতে কোনও ফারাক এল কিনা। ফারাক এলে বুঝতে হবে ক্যাফেইনের ধকল নিতে পারছে না আপনার হার্ট, যদিও খুব সামান্য ক্ষেত্রেই এ রকম হয়। সেক্ষেত্রে হয় কফি খাওয়া বন্ধ করুন, নয়তো খান ডি–ক্যাফেইনেটেড কফি, সব দিক বজায় থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন