ডেঙ্গি হলে খাদ্যতালিকায় কী-কী রাখবেন, জেনে নিন বিশেষজ্ঞদের মত
Health

ডেঙ্গি রোগীর ডায়েট

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীদের সবচেয়ে বেশি ডিহাইড্রেশনের সমস্যা হয়। শরীরে দেখা দেয় জলের অভাব।

Advertisement

কোয়েনা দাশগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২২ ০৯:১৬
Share:

ডেঙ্গির প্রকোপে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। ছবি: শুভদীপ সামন্ত।

গত কয়েক মাস ধরে ক্রমশ বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। প্রথমেই সতর্ক না হলে মশাবাহিত এই রোগ মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে। সতর্কতার জন্য ডেঙ্গির লক্ষণগুলো জেনে রাখা জরুরি। পাশাপাশি ডেঙ্গি হলেই উচিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। ডেঙ্গির প্রকোপে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। কমতে থাকে রক্তে প্লেটলেটের মাত্রা। তাই ডেঙ্গি ধরা পড়লে ওষুধের পাশাপাশি প্রয়োজন খাবারদাবারের ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম মেনে চলা।

Advertisement

জল খান বেশি করে

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীদের সবচেয়ে বেশি ডিহাইড্রেশনের সমস্যা হয়। শরীরে দেখা দেয় জলের অভাব। পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরী বললেন, “এই অভাব দূর করতে সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল খাওয়া প্রয়োজন। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সারাদিনে অন্তত সাড়ে তিন লিটার জল খাওয়া উচিত। জ্বরের প্রকোপে অনেক সময়েই এতটা জল খেয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। সে কারণেই অন্তত ২ লিটার জলের সঙ্গে ডাবের জল, ফলের রস খেতে হবে।” পুষ্টিবিদ রেশমী রায়চৌধুরীও জল খাওয়ার উপরে জোর দিলেন, “তেষ্টা কম পেলেও সারাদিনে অন্তত সাড়ে চার লিটার জল খেতেই হবে। আমাদের শরীরের সমস্ত টক্সিন বেরিয়ে যায় এই লিকুইডের সঙ্গেই।” তাই জল, ফলের রসের সঙ্গে লস্যি, চিকেন বা টম্যাটো সুপ, ডালের জল, গ্রিন টি খেতে পারেন। দিনে প্রায় দু’ থেকে চার কাপ হার্বাল টি-ও খাওয়া যেতে পারে। যে কোনও গরম পানীয়ই শরীরের জন্য ভাল হলেও, বেশি পরিমাণে লিকার চা খেলে অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। ফলের সঙ্গে অল্প জল মিশিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন স্মুদিও। বাচ্চারা যেমন এটা খেতে পছন্দ করবে, তেমনই ভিটামিনের পরিমাণ বাড়বে শরীরে। ফলে ইমিউনিটি বাড়বে। তবে ঠান্ডা পানীয় খাবেন না। গরম বা রুম টেম্পারেচারে এনে খাওয়া ভাল।

Advertisement

পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার ফল ডেঙ্গি রোগীর জন্য উপকারী। প্রচুর ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস ও খনিজ থাকে এতে। কলা, আপেল, পেঁপে, বেদানা, পেয়ারা, কমলালেবু ইত্যাদি মরসুমি ফল খাওয়ানো যেতে পারে রোগীকে। বেদানাতে থাকে আয়রন, যা এ সময়ে খুবই উপকারী। কিছু ক্ষেত্রে কিউই খাওয়ারও পরামর্শ দেন চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদরা। কিউই সাহায্য করে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে। ফলে বাড়ে প্লেটলেট।

অনেক সময়েই ডেঙ্গির প্রকোপে রোগী ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া না করলে শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়ামের মাত্রার তারতম্য হতে পারে। ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালান্স দেখা যায় শরীরে। সে ক্ষেত্রে সারাদিনে জলে ওআরএস গুলে খেতে পারেন। ওআরএস জলে মেশানোর সময়ে প্যাকেটের গায়ে লেখা পরিমাণ অনুযায়ী জলে মেশাবেন।

ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা যাচ্ছে ছোটদের মধ্যেও। সুবর্ণা বললেন, “একেবারে ব্রেস্ট ফিডিং করার মতো বাচ্চা হলে তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি সে পেয়ে যাবে মায়ের বুকের দুধ থেকেই। তা ছাড়াও সকাল-বিকেল দেওয়া যেতে পারে ডাবের জল।”

বদলাতে হবে খাদ্যাভ্যাস

শুধু পানীয় নয়, রোজকার খাদ্যাভ্যাসেও মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম। তেলমশলা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ ডেঙ্গির পরে লিভার এনজাইম বেড়ে পেটের সমস্যা বাড়তে পারে। জ্বর হলে অনেক সময়েই খাবারে রুচি চলে যায়। সে ক্ষেত্রে চাউমিন বা ইনস্ট্যান্ট নুডলসের মতো মুখরোচক খাবার খেতে চায়। ডেঙ্গির সময়ে কিন্তু একেবারেই এড়িয়ে চলতে হবে এই ধরনের খাবার। খেতে হবে বার্লি বা সুজির মতো খাবার। বার্লি, সাবু, সুজিতে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা থাকে বেশি। ফলে শক্তি বাড়ে শরীরে। খাবার তৈরির সময়ে জল মিশিয়ে একটু পাতলা করে রেঁধে খেলে শরীরে জলের চাহিদাও মেটে। তবে একেবারেই চলবে না বাইরের খাবার, ফাস্ট ফুড খাওয়া।

মশলাতেও হবে রোগ প্রতিরোধ

ভাজাভুজি, তেলমশলা এড়িয়ে চলতে বলা হলেও আমাদের ঘরোয়া অনেক মশলা আবার রোগপ্রতিরোধকারী। সাদা জিরে, কালো জিরে, ধনে, আদা, হলুদ এসবই শরীরের জন্য উপকারী। দুধে ভিজিয়ে কাঁচা হলুদ খেলে তা যেমন শরীরকে প্রদাহের থেকে রক্ষা করে, তেমনই ভাইরাসের থেকেও বাঁচায়। একইসঙ্গে রেশমি রায়চৌধুরী পরামর্শ দিলেন বিভিন্ন রঙিন আনাজপাতি ও ফল খাওয়ার। রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে ভিটামিন সি এবং প্রোটিন। তাই সবজি ও ফলের পাশাপাশি খেতে হবে মাছ, মাংস, ডিম যা থেকে পাওয়া যাবে প্রোটিন। ডেঙ্গির প্রকোপ কমার পরেও দিনে অন্তত একটি ডিম খাওয়া জরুরি। সঙ্গে খেতে পারেন টক দই। তবে বাটার বা চিজ় একেবারেই চলবে না। রেশমি রায়চৌধুরীর মতে, রক্তে প্লেটলেট কমে গেলে খাওয়া যেতে পারে ছাগলের দুধও। তবে এতে পেটের সমস্যা হওয়ারও একটা সম্ভাবনা কিন্তু থেকেই যায়।

ফোলেট সমৃদ্ধ বিভিন্ন খাবার, চিকেন বা মাটনের মেটে, আয়রন সমৃদ্ধ কিশমিশ, মাখনা, আখরোট, আমন্ডের মতো ড্রাইফ্রুট খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদরা। সঙ্গে পেয়ারা, আমলকির মতো সিট্রাস জাতীয় ফলও। ভিটামিন ডি-র ঘাটতি মেটাতে ডিমের কুসুম খেতে হবে।

দূরে থাকুন, সুস্থ থাকুন

ভাজাভুজির পাশাপাশি কফি বা ক্যাফেইন জাতীয় খাবার, চকলেট, কোকো খাওয়া একেবারেই চলবে না। সফট ড্রিঙ্কসও খাওয়া চলবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন