অ্যালার্জির হাত থেকে শিশুদের রক্ষা করুন কয়েকটি বিশেষ নিয়মে। ছবি: শাটারস্টক।
চিকিৎসকের চেম্বারে জুলজুল চোখে চেয়ে আছে যে ছোট্ট ছেলেটি অথবা খানিক ক্ষণ পরে পরেই হাঁচি দিচ্ছে যে খুদে মেয়েটি তারা কেউ কাউকে চেনে না। তবে অসুখ এক জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে এদের। রোগের নাম অ্যালার্জি। শেষ বসন্তেও যখন সকলের মন থেকে পলাশের রং মোছেনি, ঠিক তখনই অ্যালার্জির অ্যাটাকে শিশুদের দফারফা।
‘অ্যাজমা অ্যান্ড অ্যালার্জি ফাউন্ডেশন’-এর রিপোর্ট বলছে, ১৯৯৭ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে বিশ্ব জুড়ে শিশুদের মধ্যে অ্যালার্জি সংক্রান্ত নানা সমস্যা বেড়ে গিয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। দূষণের আখড়া তথা দিল্লি বা কলকাতার মতো ভারতীয় শহরগুলিতেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এই রোগ। কিন্তু কেন? উত্তর শুনলে পিলে চমকাবে বাবা-মায়েদের। চিকিৎসকরা বলছেন, অভিভাবকদের অতিরিক্ত বাৎসল্যই সন্তানকে এই অসুখের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
শিশুচিকিৎসক সমীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘বর্তমানে শিশুকে রোগমুক্ত রাখতে মা-বাবারা বড্ড বেশি সতর্কতা অবলম্বন করেন। যার ফলে, শিশুদের শরীরে ‘ইমিউনিটি সিস্টেম’ ঠিক মতো কাজই করে না। খুব সহজেই শিশুরা নানা ধরনের ‘অ্যালার্জি অ্যাটাক’-এর শিকার হয়। রোগ প্রতিরোধের সক্ষমতা তাঁদের শরীরে তৈরিই হয় না। অ্যলার্জি নির্ণয় করার পর এখন ইমিউনোথেরাপি ব্যবহার করে প্রায় ৮৫ ভাগ ক্ষেত্রে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা যাচ্ছে আজকাল। কিন্তু যদি শিশুর জন্মের পরেই বাবা মা সতর্ক হন, তাকে স্বাভাবিক জল হাওয়া গায়ে মেখে বড় হতে দেন, শিশু নিজেই লড়তে পারবে।’’
আরও পড়ুন: আফ্রিকা, আমেরিকা ও ইউরোপে দ্রুত ছড়াচ্ছে ক্যান্ডিডা, সুরক্ষিত নয় ভারতও!
অ্যালার্জির রকমফের রয়েছে। মূলত দুই ধরনের অ্যালার্জির সন্ধান দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। একটি অ্যালার্জির উৎস ঘরের ভিতরেই রয়েছে, অন্যটি বাইরে। সারা বছরই ঘরে জমা ধুলো, কোনও বিশেষ খাবার, আরশোলা জাতীয় প্রাণীর সংস্পর্শে অ্যালার্জি আক্রান্ত হতে পারে শিশু। তার প্রিয় পোষ্যের লোম থেকেও ছড়াতে পারে অ্যালার্জি। এই ঋতুতে বাতাসে ভাসমান ফুলের রেণু, ধূলিকণা থেকে অ্যালার্জির কোপে পড়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
অনিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবায়োটিক বাড়িয়ে তুলছে অসুখের সম্ভাবনা।
অনেকের ধারণা, অ্যালার্জি হলে শুধু ত্বকে র্যাশ বের হয়। এই ধারনা একেবারেই ভ্রান্ত। চিকিৎসকদের মতে নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন সর্দি-জ্বর আসতে পারে আপনার শিশুর। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে ‘হে ফিভার’। হতে পারে শ্বাসকষ্টের সমস্যাও। অনেকের সমস্যা দেখা দেয় শুধু চোখে।
আরও পড়ুন: ইদানীং খুব ভুলে যাচ্ছেন? পরিচিত এই খাবারেই লুকিয়ে প্রতিকার
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তবে শুরু থেকে সতর্ক থাকলে আপনার শিশুকে অ্যালার্জি থেকে বাঁচাতে পারেন আপনিই। জানুন কয়েকটি পদ্ধতি—
বাড়িতে কোনও পোষ্য থাকলে, শুরু থেকে অবশ্যই তার সঙ্গে খেলতে দিন শিশুদের। পাকস্থলিতে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। শিশু যেন বিকেলে খোলা মাঠে বেড়ানোর বো দৌড়ঝাঁপ করে খেলার সুযোগ পায়। ছোট থেকেই সব ধরনের খাবার, ফল ও সব্জি খাওয়ানো অভ্যাস করান শিশুকে। পারলে মাতৃদুগ্ধের অভ্যাস যাওয়ার পর গরুর দুধ খাওয়ান একেবারে ছোট থেকে। এর ফলে, খাদ্যজাত অ্যালার্জির হাত থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকবে সে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মা ভিটামিন ডি সেবন করলে শিশুদের মধ্যে অ্যালার্জির প্রবণতা কম হয়। শিশুদের জন্মের পর থেকেই মায়ের বুকের দুধ অত্যন্ত জরুরি। এর ফলে অনেক ধরনের অ্যালার্জির হারই কমে যায় শিশু-দেহে। শিশুদের কাছাকাছি কোনও ভাবেই ধূমপান উচিত নয়। এমনকি, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মা-কেও ধূমপান না করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। বেশি মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেলেও অ্যালার্জির সমস্যা হয়।