crackers

শব্দবাজি ডেকে আনে এই সব অসুখ, কী ভাবে আটকাবেন?

এই শব্দবাজির হাত ধরেই আমাদের শরীরে গুঁড়ি মেরে ঢুকে পড়ছে বিপদ। এর অন্যতম টিনাইটাস।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৯ ১৪:৪৩
Share:

কানের পর্দা ফেটে যাওয়া-সহ কানের নানাবিধ সমস্যা হানা দিতে পারে এই শব্দবাজির প্রাবল্যে। ছবি: আইস্টক।

আলোর উৎসবের ফাঁকে বিগত কয়েক বছর শব্দের দাপট ঢুকে পড়েছে উদযাপনের আভিনায়। ধরেই শব্দবাজির দাপট ও প্রাবল্য দুইয়ের সঙ্গে টিকে থাকার লড়াইয়ের রাত হয়ে উঠেছে দীপাবলি। বহু নিয়ম, নীতিনিষেধ, আইন করেও শব্দদানবকে কব্জা করা মুশকিল হয়ে পড়ছে। পুলিশ প্রশাসন সক্রিয় থাকলেও চোরাগোপ্তা পছে এই সব বাজির কেনাবেচা চলছেই। আর এই শব্দবাজির হাত ধরেই আমাদের শরীরে গুঁড়ি মেরে ঢুকে পড়ছে বিপদ। এর অন্যতম টিনাইটাস।

Advertisement

প্রতি বছরই শব্দ বাজির তাণ্ডবে মানুষ ও অন্য প্রাণীরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কানে তালা লাগা থেকে কানের পর্দা ফেটে যাওয়া-সহ কানের নানাবিধ সমস্যা হানা দিতে পারে এই শব্দবাজির প্রাবল্যে। ইএনটি বিশেষজ্ঞ শীর্ষক দত্তর মতে, এই শব্দবাজির কারণে প্রত্যের বছরই কালীপুজোর পর পরই অনেক মানুষ কানের নানা সমস্যা নিয়ে আসেন। তার মধ্যে টিনাইটাস তো রয়েছেই। টিনাইটাস কানের এক অদ্ভুত সমস্যা। বাইরে কোনও শব্দ না থাকলেও রোগী নাগাড়ে ঝি ঝি বা পিঁ পিঁ শব্দ শোনেন। এর ফলে রোগীর স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যহত হতে পারে। কানে তালা ধরে যায়। কোনও কাজে মনঃসংযোগ করতে পারেন না। ক্রমশ শ্রবণ শক্তি নষ্ট হয়ে যায়।’’

এক বেসরকারি হাসপাতালের তরফে বছর দুই আগে কালীপুজোর সময় শব্দ দূষণ নিয়ে এক সমীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, দীপাবলীর শব্দ দূষণের ফলে সে বছর ২৭% মানুষ কানের সমস্যা টিনাইটাসের শিকার হন। এ ছাড়া তীব্র শব্দের ক্ষতিকর প্রভাবে ব্লাড প্রেশার বেড়ে যাওয়া বা আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ার সমস্যা তো আছেই। ২০ বছর থেকে ৮০ বছর বয়সী ২০৪ জন মানুষের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে এই তথ্য জানা গিয়েছে। বাচ্চাদের অবস্থা তো আরও সঙ্গীন। ২৮% মানুষ শব্দ দৈত্যের অত্যাচারে স্ট্রেসে কষ্ট পাচ্ছেন। ৩৪ শতাংশের মাথা ব্যথা ও ৩০ শতাংশ ঘুম উধাও হয়ে অনিদ্রার শিকার হয়েছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: প্রতি বছরের চিরচেনা জিনিস ছেড়ে এ বার এমনই কিছু অভিনব উপহার দিন ভাইফোঁটায়

এ ছাড়াও এই শব্দদানব ডেকে আনে নানান সমস্যা, সাবধান হওয়ার আগে জেনে রাখুন তাদের সম্পর্কে।

আচমকা কানের কাছে তারস্বরে মাইক বাজলেই কান মাথা ভোঁ ভোঁ করে। আর পটকা বা চকোলেট বোমা ফাটল তো কথাই নেই। অতিরিক্ত শব্দে আমাদের নার্ভ উত্তেজিত হয়ে পড়ে। ফলে নার্ভাস সিস্টেমের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। একাধিক বার এই ঘটনা ঘটতে থাকলে আমরা ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে পড়ি।

আচমকা কানের কাছে দুম করে চকোলেট বোমা বা অন্য পটকা ফাটলে কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সম্পূর্ণ বধির হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে বাচ্চাদের এবং বয়স্ক মানুষদের সমস্যা বেশি হয়।

আরও পড়ুন: খাবার পাতে রাখছেন না এই সব তেতো? বিপদ ডাকছেন অজান্তেই

লাগাতার কানের কাছে পটকা ফাটলে বা উচ্চ স্বরে লাউড স্পিকারে গান চলতে থাকলে বধিরতা প্রায় অবধারিত।

শব্দ দূষণে হার্টের রোগীদের সমস্যা বাড়ে। আচমকা শব্দে প্যালপিটিশন বেড়ে যায়। আমাদের মধ্য কর্ণ ও অন্তঃকর্ণের মধ্যে সূক্ষ্ম অনুভূতির যে ক্ষমতা আছে শব্দের প্রাবল্যে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আচমকা তীব্র শব্দের জোরে হবু মায়ের মিসক্যারেজের সম্ভাবনা বাড়ে। শব্দবাজির পাশাপাশি গাড়ির তীব্র হর্ন, আর ডিজের অস্বাভাবিক জোরে ড্রাম আর গানবাজনা কানের তো বটেই নার্ভের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, বাস-সহ বিভিন্ন গাড়ির চালকদের অধিকাংশই কানে কম শোনেন ও টিনাইটাসের সমস্যায় ভোগেন।

তা হলে উপায়?

দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন সন্ধে থেকে রাত। বাড়িতে পোষ্য থাকলে অতিরিক্ত সাবধানতা নিন। প্রয়োজনে আগে থেকেই পশু বিশেষজ্ঞ কাউকে দেখিয়ে তাদের কানের জন্য প্রয়োজনীয় ড্রপ বা ওষুধের ব্যবস্থা রাকউন। বোম বা অন্য কোনও শব্দবাজির সামনে যাবেন না। তবে হঠাৎ চার পাশ থেকেও এই শব্দ হানা দিতে পারে। তাই বাইরে বেরলে কানে তুলো দিয়ে বেরন। প্রয়োজনে ঘরেও থাকুন এ ভাবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে হাতের কাছে মজুত রাখুন কানের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন