ছবি: অনির্বাণ সাহা।
বর্ষবরণের উল্লাস হোক নিয়ন্ত্রিত। ভাবছেন আনন্দ কি আর নিয়ন্ত্রণ মানে! কিন্তু ফূর্তি করতে গিয়ে সাধের প্রাণটাকেই যদি খুইয়ে ফেলতে হয়! এমন অলুক্ষুণে কথা ভাবাও অন্যায়। তবে এমন ঘটনা তো আকছারই ঘটছে। আমাদের দেশে কোনও পরিসংখ্যান না থাকলেও আমেরিকান স্টাডিতে জানা গেছে ওদেশে প্রত্যেক বছর প্রায় ৭৫,০০০ মানুষ মারা যান অপিরিমিত মদ্যপানের কারণে। এদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা বর্ষশেষের পার্টির উদ্দামতার জোয়ারে ভাসতে গিয়ে আচমকা হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন।
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে
মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানে হার্টের ছন্দ বিঘ্নিত হয়ে বিনা নোটিসে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। মেডিক্যাল সায়েন্স বলছে, একসঙ্গে অনেকটা পরিমাণে অ্যালকোহল শরীরে প্রবেশ করলে অ্যারিদমিয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। অ্যারিদমিয়ার অর্থ হার্টের ছন্দ। হার্ট একটা নির্দিষ্ট ছন্দে লাবডুব করে আমাদের স্বাভাবিক কাজ কর্ম করতে সাহায্য করে। এই ছন্দ নানান কারণে বিঘ্নিত হতে পারে। আর তাহলেই শুরু হয় জীবন নিয়ে টানাটানি। অতিরিক্ত অ্যালকোহল রক্তে মিশে গিয়ে হৃদস্পন্দনের হার অস্বাভাবিক করে তুলতে পারে। হয় হার্ট বিট অনেকটা বেড়ে যায় অথবা ভয়ানক ধীরগতি হয়ে যায়। মোদ্দা কথা, হৃদস্পন্দনের অনিয়মিত হারই অ্যারিদমিয়া। দ্রুত হাটলে বা দৌড়লেও হার্ট বিট বেড়ে যায়। কিন্তু তা সাময়িক ও স্বাভাবিক। মদ্যপানের ফলে হার্ট রেট বদলে যাওয়ার সঙ্গে এর তফাৎ আছে। মদ্যপান করলে যে অ্যারিদমিয়া হয় তা চট করে কমতে চায় না। তার সঙ্গে ডিজের গান বাজনার উদ্দাম আওয়াজ আর নাচানাচি অনেক সময়েই মারাত্মক আকার নিতে পারে। বিশেষ করে যাদের রক্তচাপ বেশি ও হার্টের সমস্যা আছে তাঁদের মারাত্মক সমস্যার সম্ভাবনা থাকে। অতিরিক্ত মদ্যপানে তারা আচমকা অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। বিশেষ করে যারা অনিয়মিত মদ্যপান করেন তারা একসঙ্গে অনেকটা পান করলে আচমকা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এমনকী, সাডেন ডেথের সম্ভাবনাও বাড়ে।
আরও পড়ুন: পার্টিতে হয়ে উঠুন মধ্যমণি, রইল ওয়ার্ডরোব টিপস
ব্লাড প্রেশার চড়ে যেতে পারে
হাই ব্লাড প্রেশারের রোগীদের জন্যে মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান (৬০ মিলিলিটারের থেকে বেশি) অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর ফলে আচমকা রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক এমনকী স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অ্যালকোহল রক্তবাহী ধমনীর স্প্যাজম বাড়িয়ে দেয়। ফলে প্রেশার চড়তে শুরু করে। নারী, পুরুষ, টিনএজার বা বয়স্ক সকলেরই একই রকম ঝুঁকি। বিশেষ করে যারা বাড়তি ওজনের সমস্যায় জেরবার তাঁদের বাড়তি অ্যালকোহল আকস্মিক অসুস্থ করে তুলতে পারে।
আরও পড়ুন: ২০১৭-এর টলিউড @ কন্ট্রোভার্সি
ডায়াবিটিস থাকলে সাবধান
বর্ষবরণের রাতে ডায়বিটিকদের অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা ষোল আনা। অবশ্য তার মানে এই নয় যে রক্তে চিনির মাত্রা ঊর্ধ্বমুখী বলে জীবনের সব শখ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে মন্দিরে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতে হবে। এনজয় করবেন কিন্তু মাত্রা ছাড়ালেই বিপদ অবধারিত। দুই বা এক পেগ মদ্যপানেই খুশি থাকুন। কেন না এতেই ব্লাড সুগার লেভেল চড়ে যেতে পারে। এর বেশি হলে রক্তে চিনির মাত্রা হুহু করে নামতে শুরু করে। অর্থাৎ হাইপোগ্লাইসিসিমিয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এ ক্ষেত্রে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়তে পারেন। এমনকী, কোমায় চলে যাওয়াও বিচিত্র নয়। বর্ষবরণের রাতে তো বটেই, সপ্তাহভর শহরের প্রতিটি হাসপাতালে এ রকম রোগীদের ভিড় বাড়ে। সুতরাং সুরাপানের ব্যাপারে মাত্রা না ছাড়ানোই ভাল। নতুন বছরের রেজোলিউশন হোক নেশামুক্ত সুস্থ জীবন।
‘এই ধরনের খবর আপনার ইনবক্সে সরাসরি পেতে এখানে ক্লিক করুন’
হ্যাপি নিউ ইয়ার, ভাল থাকুন।