diet

সুস্থ থাকতে চান তো? রোজ কী খাবেন আর কতটুকু খাবেন...

নীরোগ, সুস্থ জীবন পাওয়ার সহজ সমাধান জানালেন বিশেষজ্ঞ। জানেন কী ভাবে?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮ ১২:৩৫
Share:

সুস্থ থাকার চাবিকাঠি রয়েছে নিত্য খাদ্যতালিকায়। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

দুর্গোৎসব মিটলেও বাঙালির উৎসবের মরসুম এখনও চলছে পুরোদমে। আজ লক্ষ্মীপুজো সামলে সামনেই কালীপুজো, ভাইফোঁটা। অর্থাৎ ভূরিভোজের পাল্লা এখনও ভারী। তবে উৎসবের আবহের মধ্যেও সুস্থতার কথা ভুললে কিন্তু চলবে না।

Advertisement

সকাল থেকে শুরু করে রাত— খাওয়াদাওয়ার যে নানা সময় বিভাজন আছে, তাতেই লুকিয়ে থাকে সুস্থ থাকার মন্ত্র। চিকিৎসকদের মতে, কেবল সময়ে খাওয়াই নয়, কখন কী খাচ্ছেন সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।

আজ, ২৪ অক্টোবর জাতীয় খাদ্য দিবসে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে সচেতন করলেন পুষ্টিবিদ সুমেধা সিংহ। আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানালেন স্বাস্থ্যকর ডায়াটের সুলুকসন্ধান।

Advertisement

আরও পড়ুন: চল্লিশ পেরোলেই চালসে? রুখে দিতে পারেন এ সব খাবারে

খাবারে রাখুন পর্যাপ্ত সব্জি ও টাটকা ফল। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস হওয়া উচিত ‘পিরামিড সিস্টেম’ অনুসারে। অর্থাৎ প্রাতরাশ হবে সবচেয়ে ভারী। তার পর সময় অনুযায়ী কমবে খাওয়ার পরিমাণও। কিন্তু আধুনিক জীবনযাত্রা ও পেশার তাগিদে আমরা এই নিয়ম মেনে চলতে পারি না। বরং কাজের রুটিনের চাপে পড়ে আমাদের খাওয়াদাওয়ার অভ্যাসও বদলাতে থাকে। সুমেধা জানালেন এমন কিছু টিপ্‌স যা মেনে চললে আধুনিক জীবনের চাপেও এক স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে পারবেন আপনিও। তবে ডায়াবিটিস বা অন্য কোনও ক্রনিক অসুখ থাকলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ডায়েট চার্ট তৈরি করা ভাল।

প্রথমেই মনে রাখুন, প্রতি চার ঘণ্টা অন্তর কিছু না কিছু খেতেই হবে। সকালেই খান পেট ভরার মতো খাবার। তা বলে খুব তেল-মশলাদার একেবারেই নয়। অনেকেই সকালের খাবারে আস্থা রাখেন ওমলেট, স্যান্ডউইচ, বা বাটার টোস্ট, গ্রিন টি জাতীয় খাবারের উপর। মূলত ‘ইংলিশ ব্রেকফাস্ট’ ধারণাকেই আমরা গ্রহণ করতে চাই এ ক্ষেত্রে। কিন্তু মনে রাখবেন, তবে সেখানকার জলবায়ু, মানুষের হজমের ক্ষমতা, খাবারের মান এ সব আমাদের দেশের চেয়ে আলাদা। তাই ‘যস্মিন দেশে যদাচার’-কেই গুরুত্ব দিন এখানে।

আরও পড়ুন: হৃদ্‌রোগীর প্রাথমিক শুশ্রূষার প্রশিক্ষণ শিবির

খিদে রুখতে স্যুপ রাখুন ডায়েটে। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

প্রাতরাশে বরং কাছে টেনে নিন কর্নফ্লেক্স, মুসলি, ওটস বা ছাতুর শরবতকে। যাঁদের সকালেই অফিস থাকে, তাঁরা পেট ভরে ভাত খেয়ে বেরোন। হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। ভাত খেয়ে অফিসে গেলে কোনও অসুবিধা নেই। বরং প্রথম খাবারে পেট ভরে শর্করা নিলে তা সারা দিনের কাজে সাহায্য করবে। সারা দিন ধরে শরীরে মেটাবলিজম চলতে থাকায় ভাতের জন্য জমা ফ্যাটও খুব ক্ষতি করবে না। যাঁদের ডায়াবিটিস আছে, তাঁরা ভাত-রুটি মিলিয়ে খান। মনে রাখবেন, দু’টি খাবারেই সমান ফ্যাট থাকে। রুটির গ্লাইকোজেন তাড়াতাড়ি গলে, তাই ওবেসিটি রুখতে এটিকে ভাতের চেয়ে বেশি এগিয়ে রাখা হয়।

দুপুরের ভাতে রাখুন হালকা সব্জি, এক টুকরো মাছ বা দু’টুকরো চিকেন। মনে রাখবেন, সব্জি কিন্তু আবশ্যক। প্রয়োজনে ভাত-রুটির পরিমাণ কমিয়ে ডাল-সব্জি রাখুন বেশি করে। তবে পরিমাণে ব্রেকফাস্টের চেয়ে বেশি নয়।

যাঁরা সকালেই ভাত খান, তাঁরা দুপুরে আর ভাত খাবেন না। বরং ভাত খাওয়ার তিন-চার ঘণ্টা পরে একটা গোটা ফল খান। ফলের রস নয়, গোটা ফল। তার কিছু পরে, দুপুরে খান হালকা কোনও খাবার। সেটা একটি রুটি, টক দই, হালকা তেলে নেড়ে নেওয়া অমলেট। সব্জি বা স্টু-ও রাখতে পারেন মেনুতে।

বিকেলের টিফিনে আমাদের সহজ প্রবণতা আছে তেলেভাজা, নানা রকম স্ন্যাক্স বা লুচি-পরোটার শরণ নেওয়ার। রোজ এমন অভ্যাস করে ফেললে কিন্তু মুশকিল। সপ্তাহে এক দিন বরং পরিমাণ বুঝে অল্পস্বল্প খান এ সব। তবে বাকি দিনগুলো মুড়ি-শসা, ভুট্টাসিদ্ধ মাখা, ছানা, দু’-একটা ব্রাউন ব্রেড টোস্ট, মটরসিদ্ধ এ সব খাবার খান। অনেক সব্জি দিয়ে মুখরোচক করে বানিয়ে নিন মুড়ি বা মটরসিদ্ধ। সবচেয়ে ভাল যদি অনেকটা সব্জির স্যালাড খেতে পারেন। স্যালাডে যোগ করুন চিকেনও।

আরও পড়ুন: এই স্বভাব থাকলে আজই বদলান, নইলে হতে পারে মৃত্যুও!

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

রাতের খাবারে খুব হালকা খান। মনে রাখবেন, এটিই পিরামিডের শেষ স্তর। অর্থাৎ সবচেয়ে হালকা খাবার পালা এখনই। রাতে অনেকেই খাবার না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। তবে সেটা করবেন না। বরং একটা ডিম সেদ্ধ, দুধ সইলে এক কাপ দুধ, সঙ্গে লো ফ্যাট বিস্কুট। দুধ না খেলে স্যুপে আস্থা রাখুন। রাতে হালকা খান। ঘুমোনোর আগে দু’-এক টুকরো ডার্ক চকোলেট ও কাঠবাদাম খান। ডায়াবিটিস না থাকলে একটা মিষ্টিও খান, হজমে সাহায্য করবে। কিছু ডায়াবিটিস রোগীরও দিনে একটা মিষ্টি খাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা থাকে না। তবে ডায়াবিটিস থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবে মিষ্টি খাবেন। মোটকথা, প্রতি বার খাওয়ার সময় লক্ষ রাখবেন যেন ক্যালোরির পরিমাণ শরীরের চাহিদা অনুযায়ী থাকে।

তা বলে কি রেস্তরাঁয় খাওয়া, টুকটাক মাটন একেবারেই বাদ? তা কেন? মাটন খান, চলবে ভাজাভুজিও। তবে তা বুঝে। যেমন, মাটন কিনলে কিনুন চর্বি বাদ দিয়ে লিন কাট। তবে সপ্তাহে এক দিন না খেয়ে তা খান পনেরো দিনে এক বার। তিন-চার টুকরোর বেশি নয়। রেস্তরাঁয় খান পনেরো দিনে এক বার। হালকা মশলায় বানাতে বলুন খাবার।

তবে মনে রাখবেন, যাই-ই খান না কেন, জল খান শরীরের চাহিদা মতো। চা-কফির নেশা পারলে ছাড়ুন। আর মদ? ও নেশায় দাঁড়ি না টানতে পারলে কিন্তু এক সময় শরীর জানান দেবেই। একান্ত ছাড়তে না পারলে সপ্তাহে এক-দু’ পেগের বেশি খাবেন না। তবে যে কোনও অবস্থাতেই সিগারেট ছাড়ুন দ্রুত।

সুস্থ খাদ্যাভ্যাসেই লুকিয়ে থাকে দীর্ঘ, নীরোগ জীবনের বীজ। জাতীয় খাদ্য দিবসে তাই ডায়েট বদলে সুস্থতা আনুন জীবনে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন