নাকের ভিতরে ছোট মাংসপিণ্ড তৈরি হয়েছিল। ঘুমের সময়ে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় পরিজনেরা সিদ্ধান্ত নেন বছর পনেরোর কিশোরের অস্ত্রোপচার করাবেন। তার পরিণতি যে মৃত্যু হতে পারে, দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি নাজিমুদ্দিন শেখের পরিজনেরা। শুধু তাই নয়, সেই মৃত্যুর খবর বেমালুম চেপে গিয়ে দেহ সরকারি হাসপাতালে ‘পাচার’ করে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগও উঠেছে। কৃষ্ণনগরের এক বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে মৃতের পরিজনদের তরফে এমনই জোড়া অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬ সেপ্টেম্বর নাকাশিপাড়ার চৌমুহার বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন শেখকে কৃষ্ণনগরের মিনার্ভা ডিএসএ হাসপাতালের নাক, কান, গলা (ইএনটি) বিভাগে ভর্তি করায় পরিজনেরা। ওই দিনই নাকের অপারেশন হয়। তারপরে সে সুস্থই ছিল। নাজিমুদ্দিনের খুড়তুতো দাদু ফিরোজ শেখের দাবি, মঙ্গলবার রাতে নাতির শরীর খারাপ হয়েছে বলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়। তাঁরা সকলে ছুটে যান বেসরকারি হাসপাতালে। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, নাজিমুদ্দিনকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে।
পরিজনদের দাবি, বেসরকারি হাসপাতালের দুই কর্মী নাজিমুদ্দিনকে জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে পৌঁছে দেয়। ফিরোজ শেখ বলেন, ‘‘হঠাৎই দেখি ওই দুই কর্মী ছুটে পালাচ্ছে। কয়েক জনে দৌড়ে ওদের ধরে ফেলে কারণ জানতে চাই।’’ তারপরেই খারাপ কিছু আশঙ্কা করে পরিজনেরা জেলা হাসপাতালে নাজিমুদ্দিনকে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে জানান। মৃতের বাবা মমিন শেখের দাবি, চিকিৎসার গাফিলতিতে বেসরকারি হাসপাতালেই নাজিমুদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে। তা চেপে যেতে দেহ সরকারি হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে নিজেদের দায় ঝেড়ে ফেলার মতলবে ছিল বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বুধবার সকালে মৃতের পরিজনেরা বেসরকারি হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। শেষে এ দিন দুপুরে কোতায়ালি থানায় বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন নাজিমুদ্দিনের বাবা। মিনার্ভা ডিএসএ হাসপাতালের অন্যতম কর্ণধার চিকিৎসক দিলীপ চৌধুরী অভিযোগ প্রসঙ্গে সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি। সদুত্তর এড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমরাও চাই প্রকৃত সত্যিটা উঠে আসুক।’’ অভিযোগ পেয়ে মৃতের দেহ ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। কিন্তু কী ভাবে মৃত্যু হল কিশোরোর? বেসরকারি হাসপাতালের তরফে সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। আর সেখানেই তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
এ দিকে, পরপর দু’দিন শক্তিনগর জেলা সরকারি হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর খবরে এলাকায় অলোড়ন তৈরি হয়েছিল। এ বার বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসার গাফিলতিতে কিশোরের মৃত্যুর অভিযোগ সামনে আসায় কৃষ্ণনগর শহরের চিকিৎসা পরিকাঠামো নিয়েই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ।
অন্য দিকে, মুর্শিদাবাদে শিশু-মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। ঘটনার পরের দিন, বুধবার তিন জনের কমিটি গড়ে সেই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিলেন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের সুপার মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টি তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দোলনা থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর চোট পায় চার মাসের সায়ন্তারা খাতুন। নদিয়ার থানারপাড়ার থেকে তাকে সোমবার রাতে নিয়ে এসে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মঙ্গলবার সকালে তার অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের লোকজন সেই সময়ে কর্তব্যরত নার্সদের দ্রুত চিকিৎসককে ডেকে পাঠানোর জন্য জানান। অভিযোগ ‘কলবুক’ দেওয়ার দু’ঘন্টা পরেও চিকিৎসক না আসায় পরিবারের লোকজন কাউকে কিছু না জানিয়ে ওই সদ্যোজাতকে হাসপাতালে থেকে নিয়ে চলে যান এবং এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারে নিয়ে গিয়ে দেখান। কিন্তু সেই সময়ে ওই সদ্যোজাতের শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় ওই চিকিৎসক দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তির পরামর্শ দেন। সেই মতো ফের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এরপরেই পরিবারের লোকজন উত্তেজিত হয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই ঘটনায় চিকিৎসক ও নার্সদের গাফিলতির কথা জানিয়ে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন পরিবারের লোকজন।
ধৃত আট বাংলাদেশি। সীমান্ত পেরিয়ে গরু নিতে এসে মঙ্গলবার রাতে সুতির মহালদারপাড়ার কাছে বিএসএফ জওয়ানদের হাতে ধরা পড়ল আট বাংলাদেশি। সেই সঙ্গে আটক করা হয়েছে সঙ্গে থাকা ১৫টি গরু। ধৃতদের বাড়ি শিবগঞ্জের দশরশিয়া গ্রামে। বুধবার ধৃতদের সুতি থানার পুলিশের হাতে তুলে দেন নিমতিতার ২০ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের বিএসএফ জওয়ানরা।