Fitness Tips

ফিট থাকুন সন্তানের স্বার্থে

প্রেগন্যান্সির সময়ে যতটা যত্ন প্রয়োজন, ডেলিভারির পর মায়ের ততটাই যত্ন দরকার। তার সঙ্গে জরুরি ফিট থাকা। জেনে নিন কী করবেন আর কী করবেন নাপ্রেগন্যান্সির সময়ে যতটা যত্ন প্রয়োজন, ডেলিভারির পর মায়ের ততটাই যত্ন দরকার। তার সঙ্গে জরুরি ফিট থাকা। জেনে নিন কী করবেন আর কী করবেন না

Advertisement

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২০ ০০:০১
Share:

মডেল: স্নেহা বসু

সন্তানের জন্মের পর শরীর সম্পর্কে সচেতন হতে হবে আরও বেশি। এই সময়ে মায়ের শরীর দুর্বল থাকে। তাঁর যত্নের প্রয়োজন। মনে রাখবেন, আপনার ছোট্ট সোনাকে দেখভালের স্বার্থেই আপনাকে ফিট থাকতে হবে। তা বলে ডেলিভারির কিছু দিন পর থেকেই প্রচুর এক্সারসাইজ় আর কম খাওয়ার কথা ভুলেও ভাববেন না। মা হওয়ার সময়ে শরীর যেমন ধাপে ধাপে বদলায়, ঠিক সে ভাবেই ধীরে ধীরে আপনি আগের মতো চেহারা ফিরে পাবেন। এর কোনও চটজলদি সমাধান নেই। ওজন কমিয়ে রোগা হওয়ার চেয়ে জোর দিন ফিটনেসে। বাচ্চাকে দেখাশোনা করার জন্য মায়ের ফিট থাকা অত্যন্ত জরুরি।

Advertisement

করোনাভাইরাসের ত্রাসে বেবিসিটার রাখতেও ভরসা পাচ্ছেন না অনেকে। সম্ভব হলে তাঁকে বাড়িতে রেখে দেওয়ার বন্দোবস্ত করুন। যাঁদের সে উপায় নেই, তাঁদের নিজেদেরই সব দায়দায়িত্ব নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাড়ির সকলের সাহায্য নিন, মায়ের পক্ষে নবজাতকের সব কাজ একা হাতে করা বেশ কঠিন। তবে পোস্ট প্রেগন্যান্সি পিরিয়ডে কিছু বিষয় মাথায় রাখলে আপনি আবার আগের মতো হয়ে উঠবেন।

ঠিক কবে থেকে শারীরচর্চা শুরু করবেন?

Advertisement

সবটাই নির্ভর করছে আপনার শরীরের উপরে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সন্তান হওয়ার পরের দিন থেকেই অল্প হাঁটাচলা করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কথা মেনে চলুন। নর্মাল ডেলিভারি হলে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরাটা সহজ হয়। সিজ়ারিয়ান ডেলিভারির ক্ষেত্রে মায়ের শরীর একটু হলেও দুর্বল থাকে। তবে সন্তান প্রসবের পর থেকে প্রত্যেক দিনই একটু হাঁটাহাঁটি করবেন। ধীরে ধীরে হাঁটার সময় বাড়াতে হবে। নবজাতককে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই আসল চ্যালেঞ্জ। সময় মতো ব্রেস্ট ফিডিং, বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানো, ন্যাপি বদলানো, কাপড় কাচা... ইত্যাদি চলতেই থাকবে। তার উপরে রাতের ঘুমের দফারফা। তাই বাচ্চা যখন ঘুমোবে আপনিও একটু ঘুমিয়ে নিন। গভীর ঘুম না হলেও অন্তত পাওয়ার ন্যাপ নিন।

ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সৌমেন দাসের পরামর্শ অনুযায়ী, হাঁটাহাঁটি করাটাই কিন্তু এ সময়ের জন্য সবচেয়ে জরুরি ব্যায়াম। প্রত্যেক দিন তিন-চার বেলা হাঁটুন। ছাদ, বারান্দা থাকলে ভাল, নয়তো ঘরের মধ্যেই পায়চারি করুন। ঘুম থেকে উঠে, বিকেলে এবং ভারী খাওয়ার পরে হাঁটাহাঁটি করলে শরীর ফিট থাকবে।

শারীরচর্চা শুরু করার জন্য একজন মায়ের দু’-তিন মাস প্রয়োজন। তার মধ্যে ওজন বাড়লেও ভাববেন না। ডেলিভারির মাস দু’-তিন পরে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতেই হালকা এক্সারসাইজ় শুরু করুন। করোনার কারণে পার্ক, রাস্তায় হাঁটা এড়িয়ে চলুন। ছাদ, বারান্দা বা বাড়ির সামনের অংশে হাঁটতে থাকুন। শুরুর দিকে ধীরে ধীরে হাঁটছিলেন, এ বারে গতি ও সময় দুই-ই বাড়ান।

এ সময়ে শরীর ভারী হয়ে যায়, বিশেষত পেটের অংশ। দু’টি এক্সারসাইজ় পেটের জন্য আদর্শ। ক্রাঞ্চেস এবং লেগ রাইজ় হোল্ডিং। প্রথমে দিনে দশটি করে ক্রাঞ্চেস দিয়ে শুরু করুন। পরে তা বাড়াবেন। লেগ রাইজ়ের ক্ষেত্রে প্রথম দিকে অন্তত দশ সেকেন্ড পা হোল্ড করার চেষ্টা করুন। দিনে দু’বেলা এই ব্যায়াম করতে পারেন।

মায়ের শরীরেও শক্তি প্রয়োজন। স্ট্রেংথ ট্রেনিং এক্সারসাইজ়ের মাধ্যমেই আপনি তা পারবেন, যা এ সময় বিশেষ জরুরি। ওয়াল পুশ আপ করুন ১০-১২ বার করে তিন সেট। স্কোয়াট করতে পারেন, ১০টা করে তিন সেট। এক সপ্তাহের গ্যাপে টার্গেট বাড়ান।

শরীরের ভারী ভাব কাটানোর জন্য স্ট্রেচিংয়ের উপরে জোর দিচ্ছেন সৌমেন দাস। ‘‘সব ধরনের স্ট্রেচিং এ সময়ে করা সম্ভব নয়। দেওয়ালের দিকে পিঠ রেখে দাঁড়িয়ে, দু’হাত সোজা উপরে তুলে দিন। এ বার শরীরটা স্ট্রেচ করতে থাকুন। পায়ের টো-এর উপরে ভর দিয়ে শরীর উপরের দিকে স্ট্রেচ করুন। এ অবস্থায় ২০ কাউন্ট করুন। এই এক্সারসাইজ়টি দিনে বার চারেক করতে পারেন,’’ পরামর্শ তাঁর।

করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। মায়েদের শরীর এ সময়ে আরও দুর্বল থাকে। তাই ফুসফুস ভাল রাখার জন্য ডিপ ব্রিদিংয়ের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। নাক দিয়ে শ্বাস টেনে মুখ দিয়ে ছাড়ুন। ১০ বার করে দিনে বেশ কয়েক বার এটা করতে পারেন। শরীরে কোনও অস্বস্তি না থাকলে সন্তান প্রসবের তিন মাস পর থেকে স্পট জগিংও করতে পারেন।

ডায়েট প্রসঙ্গে

সন্তান হওয়ার মাস তিনেক পর পর্যন্ত কিছু ভিটামিন খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। আয়রন, ফলিক অ্যাসিড ইত্যাদি। তবে ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করেই সে সব ওষুধ খাবেন। আর ওজন বেড়ে গিয়েছে বলে খাওয়া কমাবেন না। ব্রেস্ট ফিডিং এবং দুর্বল শরীরের কারণে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট সব কিছুরই প্রয়োজন একজন মায়ের। সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে জল। ডেলিভারির মাস তিন-চার পর থেকে ডায়েটের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করুন। সন্তান ব্রেস্ট ফিড করলে মায়ের বাইরের খাবার খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। তার সঙ্গে মিষ্টি ও ফ্যাট জাতীয় খাবারও বুঝেশুনে খেতে হবে। সবুজ আনাজপাতি, ফল, যে কোনও একটি প্রোটিন রাখুন রোজকার খাদ্য তালিকায়। ডায়াটিশিয়ানের পরামর্শ মেনে শরীর বুঝে চার্ট বানান।

জেনে রাখা ভাল

• যেহেতু ব্রেস্ট ফিড করাচ্ছেন তাই শরীরের ওই অংশের যত্ন নিন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ব্রেস্ট লাইন এক্সারসাইজ় করতে পারেন

• ডেলিভারির পরে অন্তত মাস দুয়েক মেঝেয় বসবেন না। মেঝে থেকে ওঠার সময়ে পেটে চাপ পড়ে। ভারী জিনিস তোলা একেবারে বারণ

• পেটের চর্বি কমানোর জন্য বিশেষ ধরনের পোস্ট প্রেগন্যান্সি বেল্ট পাওয়া যায়। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তা পরতে পারেন। শোয়ার সময়ে উপুড় হয়ে শোবেন। যে সময়টায় রিল্যাক্স করছেন তখনও উপুড় হয়ে শোয়ার চেষ্টা করুন

• সিজ়ারিয়ান ডেলিভারির ক্ষেত্রে স্টিচের অংশে কোনও অস্বস্তি অনুভব করলে চিকিৎসককে জানান

• মনে রাখবেন ওজন কমানোর চেয়ে ফিট থাকাই আসল। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী, ডেলিভারির মাস ছয়েকের মধ্যে পুরোদস্তুর শারীরচর্চা করা সম্ভব

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন