বাড়ির বয়স্কদের কোন কোন প্রযুক্তি আগে শেখাবেন? ছবি: এআই।
ডিজিটাল যুগে বেশির ভাগ কাজই হচ্ছে অনলাইনে। সে ব্যাঙ্কে টাকাপয়সা লেনদেন হোক বা পোশাক-খাবারদাবার অর্ডার করা, আর্থিক লেনদেনের অন্যতম ক্ষেত্রই হয়ে উঠেছে ডিজিটাল মাধ্যম। আর তার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অনলাইন প্রতারণার ঝুঁকিও। বিশেষ করে বয়স্কেরা সাইবার প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অহরহ। এর অন্যতম প্রধান কারণই হল নিত্যনতুন প্রযুক্তি বিষয়ে তাঁদের অজ্ঞতা। এ শহরে, এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অনেক বয়স্ক মানুষই একা থাকেন, হয়তো স্বামী-স্ত্রী বা একা ষাটোর্ধ্ব পুরুষ বা মহিলা। কর্মসূত্রে ছেলেমেয়েরা বাইরে থাকেন বা কাছে থাকলেও হয়তো মা-বাবার জন্য নিয়মিত সময় বার করতে পারেন না। তাই সবচেয়ে আগে প্রয়োজন এখনকার সমস্ত ডিজিটাল মাধ্যম সম্পর্কে তাঁদের অবগত করানো। নতুন কী কী প্রযুক্তি এসেছে, সে বিষয়ে বুঝিয়ে বলা এবং হাতেকলমে অভ্যাসও করানো।
বাড়ির প্রবীণ সদস্যটি হয়তো স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারেন, তবে তার সমস্ত প্রযুক্তি জানেন না। কী ভাবে জরুরি অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে, মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং বা ইউপিআই ব্যবহারের পদ্ধতি, টেলিকমিউনিকেশনের মাধ্যমে চিকিৎসার সুবিধা পাওয়া, ইত্যাদি কাজগুলি তাঁদের শিখিয়ে রাখা জরুরি।
কোন কোন প্রযুক্তি বয়স্কদের শিখিয়ে রাখবেন
স্মার্টফোনে ভিডিয়ো কলিং
স্মার্টফোনের গ্রুপ মেসেজ পড়া, ভিটিয়ো কলের মাধ্যমে আপনজনেদের সঙ্গে কথা বলা, ছবি-অডিয়ো ও ভিডিয়ো পাঠানোর পদ্ধতি শিখিয়ে রাখতে হবে। সেই সঙ্গেই সতর্ক করে দিতে হবে যে, হোয়াট্সঅ্যাপে অচেনা গ্রুপে কেউ অ্যাড করলে কী ভাবে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হয়। অচেনা নম্বর থেকে আসা ফোন কল বা ভিডিয়ো কল কী ভাবে এড়িয়ে যেতে হবে, সে পদ্ধতিও জানিয়ে রাখা ভাল।
ইউটিউব বা ভিডিয়ো স্ট্রিমিং
ভিডিয়ো সার্চ করা, পছন্দের কোনও চ্যানেল দেখা অথবা জরুরি কিছু জানতে হলে কী ভাবে সার্চ করে সেই ভিডিয়ো বার করতে হয়, সে পদ্ধতিও শিখিয়ে রাখতে পারেন। পুরনো দিনের সিনেমা দেখা, রেসিপি বা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়ে নানা তথ্য জানতে কী করতে হবে, তা শিখিয়ে দিতে পারেন।
অনলাইন ব্যাঙ্কিং
এখনকার দিনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ই-ব্যাঙ্কিং বা অনলাইনে ব্যালান্স দেখা, টাকা পাঠানোর পদ্ধতি শিখে রাখা জরুরি। ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুতের বিল, মোবাইল রিচার্জ করানোর পদ্ধতি জানা থাকলে বয়স্কদের হয়রানি কম হবে। ডিজিটাল মাধ্যমে টাকাপয়সার লেনদেনের বিষয়টি শিখে গেলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে, অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়েও থাকতে হবে না। ঘরে বসেই সব কাজ করতে পারবেন প্রবীণেরা, এতে সময়ও বাঁচবে।
স্মার্টফোনে এসওএস
ফোন হারিয়ে গেলে বা চুরি গেলে কী করতে হবে, কী ভাবে ‘ফাইন্ড মাই ডিভাইস’ ব্যবহার করে হারানো ফোন ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করা যাবে, সে পদ্ধতি শেখাতে হবে প্রবীণদের। পাশাপাশি, ফোনের ‘এসওএস ফিচার’ নিয়েও তাঁদের জানিয়ে রাখতে হবে। বিপদে পড়লে কী ভাবে সেই ফিচারটি ব্যবহার করা যাবে, তা জেনে রাখা জরুরি। প্রয়োজনে কী ভাবে তাঁরা নিজেদের অবস্থান ‘লোকেশন শেয়ার’ অপশনের মাধ্যমে জানাতে পারবেন, তা বলে দিতে হবে।
অনলাইন স্ক্যাম এবং ফিশিং থেকে সাবধান
বয়স্কদের বোঝাতে হবে ইমেল, ফোনের মেসেজ বা হোয়াটস্অ্যাপ চ্যাটে অপরিচিত কোনও নম্বর বা আইডি থেকে মেল বা মেসেজ এলে তাতে ক্লিক না করতে। অনেক সময়ে সরকারি কোনও ওয়েবসাইট বা ব্যাঙ্কের ভুয়ো তথ্য দিয়ে এই সব মেল বা মেসেজ আসে, যেগুলিকে বলে ফিশিং। এই ভুয়ো লিঙ্কগুলিতে ক্লিক করা মানেই যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট হ্যাকারদের কব্জায় চলে যাবে।
ওটিপি স্ক্যাম
ওটিপি জালিয়াতি এখন খুব বেড়ে গিয়েছে। বয়স্কেরাই এর শিকার হচ্ছেন বেশি। কোনও রকম টোল-ফ্রি নম্বরে ফোন করে ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের নম্বর অথবা ফোনে আসা ওটিপি শেয়ার করলেই বিপদ। বয়স্কদের শিখিয়ে দিন, যে নম্বর থেকে ফোন আসছে সেটি আদৌ কোনও ব্যাঙ্ক বা সংস্থার কি না, তা কী ভাবে যাচাই করে নিতে হবে। ব্যাঙ্ক বা কোনও সংস্থার প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে ফোন এলে, সেখানেও আধার, প্যান, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের নম্বর, ডেবিট কার্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সময়, নিজের জন্মতারিখ, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর বা কোনও রকম পরিচয়পত্র দেওয়া চলবে না।
লটারি বা পুরষ্কারের লোভ এড়াতে হবে
যদি কেউ ফোন করে বা মেসেজ পাঠিয়ে লটারি জেতার বা বড় পুরস্কারের কথা বলে এবং তার জন্য অগ্রিম টাকা চায়, তা হলে সেটি প্রতারণা। ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রায় লেনদেনের প্রলোভন দেখালে সেই ফাঁদেও পা দেওয়া চলবে না। স্বল্প বিনিয়োগে বিপুল লাভের অঙ্ক দেখিয়ে প্রতারণার নতুন কৌশল রপ্ত করেছে হ্যাকারেরা। লোভ দেখানো হচ্ছে প্রবীণদেরই। এ থেকেও সাবধান থাকতে হবে।